আগামী বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) থেকে বাংলা প্রথমপত্রে মধ্য দিয়ে শুরু হবে চলতি বছরের উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষা। এইচএসসি পরীক্ষা ঘিরে এরমধ্যে সকল আয়োজন সম্পন্ন করেছে চট্টগ্রাম মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড। বর্তমানে করোনা ও ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ায় বাড়তি সতর্কতা ও কড়া নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা কেন্দ্রে অবশ্যই মাস্ক পরে আসতে বলা হয়েছে। পরীক্ষা সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, কেন্দ্র সচিব, প্রতিষ্ঠান প্রধান ও নিরাপত্তা টিমসহ সকল পর্যায়ের সাথে সমন্বয় করছেন চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড কর্তৃপক্ষ। এইচএসসি পরীক্ষার প্রবেশপত্রগুলো ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠানে প্রতিষ্ঠানে পৌঁছে গেছে। গত মঙ্গলবার থেকে প্রবেশপত্র বিতরণ করছে স্ব স্ব প্রতিষ্ঠান। এরমধ্যে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের অধীনে তিন পার্বত্য জেলায় পৌঁছে গেছে পরীক্ষা সরঞ্জাম। কঙবাজারসহ চট্টগ্রামের বেশিরভাগ উপজেলাতেও পৌঁছে গেছে পরীক্ষা সরঞ্জাম। আজ চট্টগ্রাম মহানগরের বিভিন্ন কেন্দ্রে পরীক্ষা সরঞ্জাম পৌঁছানোর কথা রয়েছে। গত মঙ্গলবার চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে কেন্দ্র সচিবদের নিয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করাসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়। করোনা ও ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ায় এর দিকে বেশি নজর দেওয়া হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের কড়া নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া প্রতিটি কেন্দ্রে শিক্ষার্থীদের হ্যান্ড স্যানিটাইজারসহ যাবতীয় সুরক্ষা সরঞ্জাম রাখতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
আসন্ন এইচএসসি পরীক্ষা সুষ্ঠু, সুন্দর ও নকলমুক্ত পরিবেশে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে গণসচেতনতা সৃষ্টির জন্য একটি বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়েছে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড। গতকাল চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর ড. মো. পারভেজ সাজ্জাদ চৌধুরী স্বাক্ষরিত এ বিজ্ঞপ্তি গণমাধ্যমে প্রেরণ করা করা হয়। এতে বলা হয়, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, চট্টগ্রামের ২০২৫ সালের এইচএসসি পরীক্ষা সুষ্ঠু, সুন্দর ও নকলমুক্ত পরিবেশে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে পরীক্ষার্থীগণ যাতে পরীক্ষা শুরুর কমপক্ষে ৩০ মিনিট পূর্বে পরীক্ষার হলে আসন গ্রহণ করে ও কোনো প্রকার ইলেকট্রনিঙ ডিভাইস বা নকল নিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে না আসে এবং সামাজিক যোগাযোগ বা অন্য কোনো মাধ্যমে প্রশ্নপত্র পাওয়ার চেষ্টা না করে সে বিষয়ে ব্যাপক গণসচেতনতা সৃষ্টি করা এবং পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস সম্পর্কিত গুজব বা ঘটনা, নকল বা অসদুপায় অবলম্বনের কুফল এবং এ কাজে সংশ্লিষ্ট হওয়ার বিষয়ে পাবলিক পরীক্ষাসমূহ (অপরাধ) আইন ১৯৮০, তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তি আইন ২০০৬ এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮–এ বর্ণিত শাস্তি সম্পর্কে গণসচেতনতা সৃষ্টির জন্য অনুরোধ করা হল।
চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড সূত্রে জানা গেছে, এবারে চট্টগ্রাম মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের অধীনে ৩০৭টি কলেজের এক লাখ ৩৫ জন শিক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিবে। মোট ১১৪টি কেন্দ্রে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। পরীক্ষা সফলভাবে সম্পন্ন করতে ৩০টি সাধারণ ভিজিল্যান্স টিম ও ১০টি বিশেষ ভিজিল্যান্স কাজ করবে। এবারে পরীক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্র রয়েছে ৪৪ হাজার ১৩৯ জন, ছাত্রী রয়েছে ৫৫ হাজার ৮৯৬ জন। এরমধ্যে বিজ্ঞান শাখার রয়েছে ২২ হাজার ৪১৭ জন, ছাত্র ১০ হাজার ৬৩৮ জন ও ১১ হাজার ৭৭৯ জন ছাত্রী। মানবিক শাখার রয়েছে ৪৫ হাজার ১২২ জন, ১৭ হাজার ২৭৩ জন ছাত্র ও ২৭ হাজার ৮৪৯ জন ছাত্রী রয়েছে। ব্যবসায় শিক্ষা শাখার রয়েছে ৩২ হাজার ৪৯৫ জন, ১৬ হাজার ২২৮ জন ছাত্র ও ১৬ হাজার ২৬৭ জন ছাত্রী রয়েছে এবং গাহর্স্থ্য এর একজন ছাত্রী রয়েছে। গত বছর চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় ২৮৭টি কলেজের অংশ নিয়েছিল এক লাখ ৬ হাজার ৩৪ জন শিক্ষার্থী। এবারে চট্টগ্রাম মহানগরে পরীক্ষার কেন্দ্র রয়েছে ২৭টি। চট্টগ্রামের উপজেলাগুলোতে রয়েছে ৪২টি। কঙবাজার জেলায় রয়েছে ১৭টি, রাঙামাটি জেলায় রয়েছে ১০টি, খাগড়াছড়ি জেলায় রয়েছে ১০টি ও বান্দরবান জেলায় রয়েছে ৮টি পরীক্ষার কেন্দ্র।
সার্বিক ব্যাপারে চট্টগ্রাম মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ইলিয়াছ উদ্দিন আহাম্মদ আজাদীকে বলেন, এইচএসসি পরীক্ষার সকল আয়োজন সম্পন্ন। প্রশ্নপত্র জেলা প্রশাসকদের নিকট পৌঁছে গেছে। সেগুলো সর্টিংয়ের কাজ চলছে। পরীক্ষার সরঞ্জামও কেন্দ্রে কেন্দ্রে পৌঁছে যাচ্ছে। এডমিট কার্ড বিতরণ চলছে। গত মঙ্গলবার কেন্দ্র সচিবদের সাথে বৈঠক হয়েছে। এতে সকল বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এবারে আমরা দুইটা বিয়ষে প্রাধান্য দিচ্ছি। এক হচ্ছে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এটা আমাদের প্রথম এইচএসসি পরীক্ষা। এ জন্য আমরা বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করছি। আরেকটা বিষয় হলো করোনা ও ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ায় সচেতনতা বৃদ্ধি করা হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের মাস্ক পড়া বাধ্যতামূলক। আর কেন্দ্রের প্রবেশমুখে স্বাস্ব্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা হবে। বোর্ড চেয়ারম্যান বলেন, যেসব শিক্ষার্থীর শ্রুতি লেখক লাগবে তারা যথাযথ নিয়ম মেনে বোর্ডে আবেদন করলে আমরা সহায়তা করবো। পরীক্ষার আগ পর্যন্ত প্রবেশপত্র ও রেজিস্ট্রেশন কার্ড দিয়ে আবদেন করতে পারবে। বোর্ড চেয়ারম্যান বলেন, কেউই যাতে কোনো প্রকার গুজবে কান না দেয়, সে ব্যাপারে সকলের প্রতি আহ্বান থাকলো।