এইচএমপি ভাইরাস : আতঙ্কিত না হয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা জরুরি

| বুধবার , ১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ at ৮:৪৯ পূর্বাহ্ণ

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানআইইডিসিআর বাংলাদেশে এক রোগীর শরীরে এইচএমপি ভাইরাস শনাক্ত করার তথ্য দেওয়ার পর আতংক তৈরি হয়েছে। যদিও বিশেষজ্ঞদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আতঙ্কিত না হয়ে সকল নাগরিককে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। আজাদীতে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, গত রোববার আইইডিসিআরের ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান ডা. আহমেদ নওশের আলম বলেন, আমরা এইচএমপিভি আক্রান্ত একজন রোগী শনাক্ত করেছি। তিনি একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। এ বিষয়ে বিস্তারিত আমরা পরে জানাব। সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের এক চিকিৎসক বলেন, এইচএমপি ভাইরাস আক্রান্ত একজন নারী গত শুক্রবার আমাদের এখানে ভর্তি হয়েছেন। তিনি নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রআইসিইউতে আছেন। তার বয়স ৩০ বছর, বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলায়। তার অবস্থা আগের চেয়ে ভালো।

উল্লেখ্য, এবারের শীতে চীনের উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস (এইচএমপিভি) ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে শিশুরা এ ভাইরাসে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার পরিপ্রেক্ষিতে সতর্কতা জারি করেছে চীন।

চীনের পর ভারতের কর্ণাটক রাজ্যেও আট মাসের এক শিশুর এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ পর্যন্ত বেশ কিছু রোগী পাওয়া গেছে ভারতে। বিষয়টি নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে পরিষ্কারপরিচ্ছন্ন থাকার পরামর্শ দিয়েছে ভারত সরকার। এবার বাংলাদেশে পাওয়া গেল এই ভাইরাস আক্রান্ত রোগী।

আজাদীতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে কয়েকজন বিশেষজ্ঞের মতামত তুলে ধরা হয়েছে। তাতে তাঁরা বলছেন, এইচএমপিভি ভাইরাস শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ ঘটায়। আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে থাকলে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বেশি। তাই করোনার মতো সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। বিশেষ করে বাইরে বের হলে মাস্ক পরতে হবে। এইচএমপিভির উপসর্গগুলো ফ্লু এবং অন্যান্য শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের মতোই। সাধারণ উপসর্গের মধ্যে রয়েছে কাশি, জ্বর, নাক বন্ধ হওয়া এবং শ্বাসকষ্ট। গুরুতর ক্ষেত্রে ভাইরাস ব্রঙ্কাইটিস বা নিউমোনিয়ার মতো জটিলতা সৃষ্টি করতে পাবে। দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য সমস্যা যেমন হাঁপানি রোগী, কিডনি রোগী, হৃদরোগী, গর্ভবতী মহিলা, শিশু এবং দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন ব্যক্তিরা এক্ষেত্রে উচ্চ ঝুঁকিতে থাকে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আবদুর রব বলেন, এইচএমপিভি ভাইরাসে আতঙ্কের কিছু নেই। করোনাভাইরাসের মতো এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। তবে আক্রান্ত রোগীর উপসর্গ দেখে সাপোর্টিভ চিকিৎসা দিতে হবে। চট্টগ্রাম জেলার সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, এইচএমপিভি ভাইরাসের বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা চট্টগ্রামের সকল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেঙের কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো হয়েছে। এই ভাইরাসটি নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীন বলেন, এইচএমপিভি ভাইরাসের বিষয়ে আমরা সতর্ক আছি। আমাদের আইসোলেশন ওয়ার্ড রয়েছে। চিকিৎসাসেবায় কোনো সমস্যা হবে না।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে সাতটি নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, শীতকালীন শ্বাসতন্ত্রের রোগগুলো থেকে নিজেকে রক্ষার জন্য মাস্ক ব্যবহার করা। হাঁচি/কাশি সময়/বাহু/টিস্যু দিয়ে নাক মুখ ঢেকে রাখা। ব্যবহৃত টিস্যুটি অবিলম্বে ঢাকনাযুক্ত ময়লা ফেলার বুড়িতে ফেলা এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজার অথবা সাবান পানি দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলা। আক্রান্ত হয়েছেন এমন ব্যক্তিদের এড়িয়ে চলা এবং কমপক্ষে ৩ ফুট দূরত্ব বজায় রাখা। ঘন ঘন সাবান ও পানি কিংবা হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ধৌত করা (অন্তত ২০ সেকেন্ড)। অপরিষ্কার হাতে চোখ, নাক, মুখ না ধরা। জ্বর, কাশি এবং শ্বাসকষ্ট আক্রান্ত হলে সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত বাড়িতে থাকা। প্রয়োজন হলে নিকটস্থ হাসপাতালে যোগাযোগ করা।

বিশেষজ্ঞের মতে, ভাইরাসটি বর্তমানে গুরুতর ঝুঁকি তৈরি না করলেও জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রোগ প্রতিরোধের জন্য ব্যক্তি পর্যায়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, শীতকালে বিশেষ সতর্কতা এবং শ্বাসতন্ত্রজনিত সমস্যায় আক্রান্ত হলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া প্রয়োজন। এ ছাড়া আইইডিসিআরের মতো সংস্থাগুলোর নিয়মিত নজরদারি এবং গবেষণা কার্যক্রম আরও জোরদার করা জরুরি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধডাকাতের ছুরিকাঘাতে প্রাণ হারানো সেনা কর্মকর্তা নির্জনের পরিবার পেল ফ্ল্যাট
পরবর্তী নিবন্ধ৭৮৬