এবারের বিশ্বকাপকে বলা হচ্ছে অঘটনের বিশ্বকাপ। তবে এবারের বিশ্বকাপের সবচাইতে বড় চমক কি যদি জিজ্ঞেস করা হয় তাহলে একটাই উত্তর আসবে। আর সেটা হচ্ছে মরক্কো। কারণ এই দলটি বিশ্বকাপের অনেক কিছু এলোমেলো করে দিয়েছে। ইউরোপের তিন পরাশক্তিকে পরাজিত করার রেকর্ড রয়েছে একমাত্র তাদের। গ্রুপ পর্বে তারা হারিয়েছে বেলজিয়ামকে, শেষ ষোলয় স্পেনকে আর কোয়ার্টার ফাইনালে হারিয়েছে পর্তুগালকে।
প্রথম আফ্রিকান দেশ হিসেবে সেমিফাইনালে জায়গা করে নিয়ে রীতিমত অভিনন্দনের জোয়ারে ভাসছে তারা। শুধু তাই নয় এখন বিশ্বকাপেও মূর্তিমান আতংক হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছে দেশটি। শক্তি, সামর্থ্য, আর অভিজ্ঞতায় অনেক এগিয়ে থাকা ইউরোপের দলগুলোকে বিদায় করা মরক্কো আজ আরো একটি ইতিহাস গড়ার সামনে দাঁড়িয়ে। সেমিফাইনালে আজ মরক্কোর সামনে প্রতিপক্ষ গত আসরের চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স। সবদিক থেকে এগিয়ে ফ্রান্সই। কিন্তু মাঠে আত্মবিশ্বাস, সাহস আর নতুন কিছু করার তাগিদ যেন সবচাইতে বড় শক্তি মরক্কোর। আর সে সাহস নিয়েই আজ বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের সামনে মাঠে নামছে মরক্কো। তারকায় ঠাসা কোনো দল নয়।
তারপরও অদম্য সাহস নিয়ে মাঠে মন প্রাণ উজাড় করে দেওয়ার মানসিকতাই মরক্কোর স্বপ্ন দৌড়ের পেছনে সবচাইতে বড় শক্তি এবং প্রেরণা। আজ আরো একবার বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিতে চাইবে মরক্কো সেটা নিশ্চিত করেই বলা যায়। অপরদিকে মরক্কোর এই স্বপ্ন দৌড় থামাতে যেন প্রস্তুত বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরাও।
তাই তো ফরাসি লিগের সতীর্থ এমবাপ্পে-হাকিমি আজ যেন একে অপরের শত্রু। আজ জিতলে দুদলের জন্যই ইতিহাস গড়া হবে। ফ্রান্স জিতলে ব্রাজিলের পর দ্বিতীয় দল হিসেবে টানা দ্বিতীয়বার বিশ্বকাপের ফাইনালে যাওয়ার রেকর্ড গড়বে। আর মরক্কো জিতলে প্রথম আফ্রিকান দল খেলবে ফাইনালে।
শুধু তাই নয় ইউরোপ এবং লাতিন আমেরিকার বাইরে কোনো দল প্রথমবারের মত খেলবে বিশ্বকাপের ফাইনালে। কাতারের আল খোর নগরীর আল বাইত স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় রাত ১টায় শুরু হবে ম্যাচটি।
ফ্রান্স-মরক্কো দুদল একে অপরের কাছে খুব বেশি পরিচিত নয়। কারণ দুদল মুখোমুখি হয়েছে কমই। তাদের সর্বশেষ দেখা ১৫ বছর আগে। কাতার বিশ্বকাপের মঞ্চে আজ রাত ১টায় সাক্ষাৎ হচ্ছে দল দুটির। মরক্কোর বিপক্ষে অফিসিয়াল আন্তর্জাতিক ম্যাচে এখন পর্যন্ত অপরাজিত ফরাসিরা।
দুর্দান্ত ফুটবল উপহার দিয়ে ইতিহাস গড়া আফ্রিকার দলটির বিপক্ষে তারা আধিপত্য ধরে রাখতে পারবে কিনা সেটাই এখন দেখার। মরক্কোর বিশ্বকাপ অভিষেক ১৯৭০ সালে। আফ্রিকার প্রথম দেশ হিসেবে বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্ব পার করেছিল তারা ১৯৮৬ আসরে। এবার তারা ছাড়িয়ে গেছে আগের সব সাফল্য। আরব ও আফ্রিকার প্রথম দল হিসেবে সেমিফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে দলটি। কোনো দলকে বিশ্বকাপের নকআউট পর্বে তোলা প্রথম আরব কোচ ওয়ালিদ রেগরাগি।
গত সেপ্টেম্বরে মরক্কোর দায়িত্ব নেন তিনি। তার কোচিংয়ে এখন পর্যন্ত ৮ ম্যাচ খেলে অপরাজিত আফ্রিকার দলটি। অপরদিকে ১৯৩০ সালে বিশ্বকাপের উদ্বোধনী আসরে খেলা ১৩ দলের একটি ফ্রান্স। এ নিয়ে বিশ্ব সেরার মঞ্চে ১৬ বার খেলছে দুইবার শিরোপা জেতা দলটি। ১৯৯৮ সালে ব্রাজিলের পর প্রথম শিরোপাধারী দল হিসেবে সেমিফাইনালে খেলতে যাচ্ছে ফ্রান্স। ২০০২ সালে ব্রাজিলের পর প্রথম দল হিসেবে টানা দুই আসরে ফাইনালে খেলার হাতছানি ফরাসিদের সামনে।
টানা দুইবার বিশ্বকাপ জেতা দল ইতালি। তারা জিতেছিল ১৯৩৪ ও ১৯৩৮ সালে। ব্রাজিল জিতেছিল ১৯৫৮ ও ১৯৬২ সালে। ২০১৮ সালে রাশিয়া আসরে শিরোপা জেতা ফ্রান্সের সামনেও এখন এই রেকর্ড ছোঁয়ার সুযোগ। এদিকে এবারের বিশ্বকাপ আসরে চমক জাগানো দল মরক্কোর জালে এখন পর্যন্ত প্রতিপক্ষ একবারও বল পাঠাতে পারেনি। আসরে তারা একমাত্র গোল হজম করেছে গ্রুপ পর্বে কানাডার বিপক্ষে ২-১ ব্যবধানে জয়ের ম্যাচে। আর সে গোলটিও ছিল আত্মঘাতী।
বিশ্বকাপে প্রথমবার মুখোমুখি হতে যাচ্ছে ফ্রান্স ও মরক্কো অফিসিয়াল আন্তর্জাতিক ম্যাচে পাঁচবার পরস্পরের বিপক্ষে খেলেছে। প্রথম দেখা ১৯৮৮ সালে। যেখানে ২-১ গোলে জিতেছিল ফরাসিরা। দুই দলের সবশেষ সাক্ষাৎ হয়েছিল ২০০৭ সালে। প্যারিসে প্রীতি ম্যাচটি ২-২ গোলে ড্র হয়েছিল। তবে এবারে ভিন্ন এক লড়াই। যেখানে ফ্রান্স এবং মরক্কো দুদলেরই ইতিহাস গড়ার হাতছানি। তাই তারা নিজেদের সামনের দিকে কিভাবে এগিয়ে নিয়ে যান সেটাই এখন দেখার বিষয়।