উৎসবে শুরু ধানকাটা, আছে উৎকণ্ঠাও

জগলুল হুদা, রাঙ্গুনিয়া | বৃহস্পতিবার , ৮ মে, ২০২৫ at ৬:৫৯ পূর্বাহ্ণ

ফসলের মাঠ ছেয়ে আছে সোনা রঙের ধান। একদিকে বিস্তীর্ণ মাঠে শোভা পাচ্ছে বোরো মৌসুমের আধা পাকা ধান। অন্যদিকে কৃষক উৎসবমুখর পরিবেশে পরিপুষ্ট ধান কাটামাড়াই করে গোলায় ভরছেন। মাঝে মধ্যেই তীব্র ঝড়ো হাওয়া আর বৃষ্টির শংকার মাঝে আছে তীব্র গরম। ক্ষণে ক্ষণে বদলাচ্ছে আকাশের রঙ। এমন পরিস্থিতিতে উৎসবউৎকণ্ঠায় চলছে বোরো ধান কাটার কার্যক্রম। যেখানে কেউ কাটছেন ধান, কেউ বাঁধছেন আঁটি এবং কেউ কেউ সেই আঁটি কাঁধে করে ছুটছেন বাড়ির উদ্দেশ্যে। দেশের অন্যতম বৃহত্তম বিল চট্টগ্রামের শস্যভাণ্ডার হিসেবে খ্যাত রাঙ্গুনিয়ার গুমাই বিল ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র। বোরোর বাম্পার ফলনে হাসি ফুটেছে কৃষকের মুখে। তবে চড়া দামের পাশাপাশি রয়েছে শ্রমিক সংকটও। এতে কিছুটা বিপাকে পড়তে হচ্ছে চাষিদের। তাই উৎপাদিত ধানের ভালো দাম নিশ্চিতে বাজার মনিটরিংয়ের দাবি জানান তারা।

উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য মতে, এবার রাঙ্গুনিয়ার ৯ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। এরমধ্যে গুমাইবিলে আবাদ হয়েছে ৩ হাজার ৪৬০ হেক্টর জমিতে। গুমাই বিলের কৃষকরা এবার ব্রি৮৮, ৮৯, ৯২, ১০০, ১০৩ এবং কাটারীসহ অন্যান্য জাতের ধানের চাষ করেছেন। এখন মধ্যমেয়াদী ব্রি৮৮ জাতের ধান কাটা হচ্ছে। এতে দেখা গেছে গড়ে সাড়ে ৬ মেট্রিক টনের উপরে ফলন হয়েছে। ইতিমধ্যে বিলের ২০% ধান কাটা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা যায়, উপজেলার চন্দ্রঘোনা, মরিয়মনগর, হোসনাবাদ, স্বনির্ভর রাঙ্গুনিয়া, লালানগর ইউনিয়ন ও পৌরসভার ৭, ৮ এবং ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে গুমাই বিলের অবস্থান। বিলের জমিতে প্রতি বছর ইরি ও আমনের বাম্পার ফলন হয়। পাকিস্তান আমল থেকে এই বিলে ধান চাষ শুরু হলেও স্বাধীনতা পরবর্তী সরকারগুলো এখানে আধুনিক সেচের ব্যবস্থা করে। স্থানীয় বাইনালার ছড়া, সোনাইছড়ি, মুন্দরী, কুরমাই, ইছামতি, বারঘোনিয়া, ঘাগড়া হ্রদ খাল ও গুট্টাকার খালের সংযোগ রয়েছে গুমাই বিলের সঙ্গে। এর মাধ্যমে পরিকল্পিত সেচ ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে কৃষি বিভাগ। শুরুতে এই বিলের আয়তন ছিল সাড়ে ৪ হাজার হেক্টরেরও বেশি। এই বিলে এক মৌসুমে উৎপাদিত ধান দিয়ে একসময় সারাদেশের আড়াই দিনের খাদ্যের চাহিদা মেটানো যেতো। কিন্তু আবাদি এই বিলে অপরিকল্পিত আবাসিক ও বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণ, ধানের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে ভরাটপূর্বক একের পর একা গড়ে তোলা হচ্ছে বসতঘরসহ বিভিন্ন স্থাপনা। অনেক জায়গায় গড়ে তোলা হয়েছে ফসল বিধ্বংসী ইটভাটা। এতে দিন দিন কমে যাচ্ছে ফসলি জমি। ফলে রাঙ্গুনিয়ায় খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, গুমাই বিলে যেদিকে চোখ যায় সেদিকেই পাকা ধানের সমারোহ। কেউ ধান কাটছেন আবার কেউবা ধান মাড়াইয়ে ব্যস্ত। মাঠে কৃষকের পাশাপাশি ব্যস্ত কৃষাণীরাও। ভোর সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত চলে ধান কাটার উৎসব। কাঁধে করে বাড়ির উঠানে বয়ে আনা হয় সেই ধান। সেখানে চলে ধান মাড়াইয়ের কাজ। কেউ মাঠে কিংবা কাপ্তাই সড়কের পাশেই সেরে নেন মাড়াই।

মোহাম্মদ জামাল নামে এক চাষি জানান, তিনি ব্রিধান৮৮ ও ৮৯ জাতের আবাধ করেছেন। ইতিমধ্যেই ৮৮ জাতের ধান কেটেছেন। এতে হেক্টর প্রতি ৬.৬ মেট্টিক টন ধান পেয়েছেন তিনি। ৮৯ জাতের ধান আরও এক সপ্তাহ পর কাটা শুরু করবেন বলে জানান তিনি। কৃষক মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন জানান, তিনি ২৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করেছেন। ইতিমধ্যে ১০ হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে তার। এতে তিনি গড়ে ৬.৫ মেট্রিক টন হারে ধান পেয়েছেন।

সিরাজুল ইসলাম নামে একজন কৃষক জানান, এখন ধান কাটা শ্রমিকের চড়া দাম। একজন শ্রমিককে তিন বেলা খাবার, এক প্যাকেট সিগারেট এবং দুই বেলা নাস্তা দেয়ার পর ১২১৪শ টাকা মজুরি দিতে হয়। এক হেক্টর জমিতে আবাদে ১ লাখ ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। কেজি ৩০ টাকা হিসেবে হেক্টর প্রতি সাড়ে টন ধান পাওয়া গেলে প্রায় ২ লাখ টাকার ধান পাওয়া যায়।

এই ব্যাপারে গুমাইবিলে কর্মরত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা উত্তম কুমার জানান, ধান কাটার মৌসুমে নেত্রকোনা, নোয়াখালী, ময়মনসিংহ, রংপুর, সাতকানিয়া, বাঁশখালীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের শ্রমিকেরা এখানে আসেন। শুষ্ক মৌসুমে সেখানেও ধান চাষ হওয়ায় শ্রমিকরা এদিকে কম আসেন।

রাঙ্গুনিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরুল কায়েস বলেন, গুমাই বিলসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ধান কাটা শুরু হয়েছে। এ বছর ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ধানের ভালো দাম পেলে লাভবান হবেন কৃষকরা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিচারিক প্রক্রিয়ায় স্বেচ্ছাচারী ক্ষমতা প্রয়োগের সুযোগ নেই
পরবর্তী নিবন্ধবাহকে-বাহকে বিয়ে না হলে প্রতিরোধ হয় থ্যালাসেমিয়া