মাথার ঘাম পায়ে ফেলে প্রচুর শ্রম ও অর্থ ব্যয়ে উৎপাদিত লবণের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না প্রান্তিক লবণ চাষিরা। সামপ্রতিক সময়ে লবণের বাজারে অস্বাভাবিক হারে নেমেছে মূল্য ধস। লবণ উৎপাদন থেকে শুরু করে পরিবহন ও বিপণনে ধাপে ধাপে রয়েছে দালাল সিন্ডিকেটের অসাধু কারসাজি। লবণ উৎপাদনের ভর মৌসুমে ন্যায্য মূল্যবঞ্চিত শ্রমিকদের ঘরে চলছে নিরব কান্না। ৪০ কেজি লবণের দাম দিয়ে পাচ্ছে না ৪ কেজি ভালো মানের চাল। চাষিদের মধ্যে বিরাজ করছে চরম হতাশা।
লবণ চাষিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, কয়েক মাস আগে প্রতি মণ লবণের দাম ছিল ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা। এখন সেটি নেমে এসেছে ২০০ থেকে ২৩০ টাকায়। অথচ উৎপাদন খরচ বেড়েছে কয়েক গুণ।
হোয়ানক ইউনিয়নের লবণচাষি মোহাম্মদ আলম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা দিন–রাত ঘাম ঝরিয়ে লবণ তুলি, কিন্তু দাম পাই না। এত কম দামে লবণ বিক্রি করলে তো আমাদের লোকসান গুনতে হয়। সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। বড় ব্যবসায়ীরা লবণ মজুদ করে রাখে, তারপর বেশি দামে বিক্রি করে। কিন্তু আমরা চাষিরা বাধ্য হয়ে কম দামেই লবণ বিক্রি করি। তদুপরি দালাল সিন্ডিকেটরা লবণ পরিমাপে প্রতি মণে ৪০ কেজির স্থলে নিচ্ছে ৪৫/৪৬ কেজি। ফলে মাপেও ঠকছে প্রান্তিক চাষিরা।
হেতালিয়া ঘোনার লবণ চাষি আজিজুল হক বলেন, আমরা প্রযুক্তি সম্পর্কে কম জানি। দালালরা সুযোগ নেয়, ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হয়েছি বছরের পর বছর। অথচ আমাদেরকে সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার কথা বলা হলেও বাস্তবে আমরা সে সুবিধা পাই না।
কক্সবাজার বিসিকের উপ–মহাব্যবস্থাপক মো. জাফর ইকবাল ভূঁইয়া জানান, চলতি ২০২৫–২৬ অর্থবছরে লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৬ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন। মহেশখালীতে মোট ১৭ হাজার একর জমিতে লবণ উৎপাদন হচ্ছে। দেশে বছরে ২৬ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন লবণের চাহিদা থাকলেও, উৎপাদিত লবণের ২৫ শতাংশই আসে মহেশখালী থেকে। তিনি বলেন, চাষিদের কমিউনিটি করতে হবে, জমি মালিক থেকে নিজেদেরকে মাঠ বর্গা নিতে হবে। লবণ উৎপাদন বেশি হলেও বাজারে চাহিদা কম, যার কারণে দাম পড়ে যাচ্ছে। তবে খুব দ্রুত লবণের দাম বাড়তে পারে বলে আমরা আশা করছি।
বিসিক সূত্র জানিয়েছে, ন্যায্য মূল্য থেকে চাষিরা বঞ্চিত হওয়ার পেছনে তারা নিজেরাই দায়ী। বর্তমান প্রযুক্তির যুগে চাষিরা চাইলে সরাসরি কারখানায় ফোন করে দাম সম্পর্কে অবগত হতে পারেন, কিন্তু তারা তা করেন না। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে দালালরা দাম কমিয়ে দিয়ে লাভের অংশ হাতিয়ে নেয়।
বিসিক সূত্র আরও জানায়, সরকার ইতোমধ্যে লবণ রপ্তানির পরিকল্পনা করছে। চাষিদের সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে সব ব্যাংকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে চাষিরা অনেক সময় ঋণ নিয়ে তা ফেরত দেন না, ফলে নতুন ঋণ পেতে সমস্যায় পড়েন। তবে আশার বাণী হচ্ছে, সরকার লবণ মৌসুম ছাড়া বাকি সময়ে চাষিদের টিকিয়ে রাখতে সহায়তা প্রদান সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবনা বিবেচনা করছে।