উমাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় (১৯০২–১৯৯৭)। সাহিত্যিক, পরিব্রাজক। মণিমহেশ নামক ভ্রমণকাহিনির জন্যে, ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে, তিনি সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার লাভ করেন। উমাপ্রসাদ ১৯০২ খ্রিষ্টাব্দের ১২ অক্টোবর কলকাতার ভবানীপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম আশুতোষ মুখোপাধ্যায় এবং মাতা ছিলেন যোগমায়া দেবী। শিশুকাল থেকেই তিনি ছিলেন মেধাবী, অন্তর্মুখী, পশুপ্রেমী। তাঁর ছেলেবেলার বিবরণ পাওয়া যায় তার রচিত প্রবন্ধ ‘আমার ছেলেবেলা’ তে। প্রেসিডেন্সী কলেজ থেকে ১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দে ইংরেজিতে অনার্স সহ বি এ পাশ, ১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দে ‘প্রাচীন ভারতীয় ইতিহাস ও সংস্কৃতি’ বিষয়ে প্রথম শ্রেণিতে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে এম এ পাশ করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ১৯২৮ খ্রিষ্টাব্দে বি এল পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে সপ্তম স্থান অধিকার করেন। ভ্রমণ এবং পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধূলা নিয়েও তার সবিশেষ উৎসাহ ছিল। তিনি ভারতের প্রথম পর্বতারোহণ সংস্থা ‘হিমালয়ান অ্যাসোসিয়েশন‘ এর প্রতিষ্ঠাতা। তিনি দার্জিলিঙের ‘হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইনস্টিটিউট’ এবং ‘হিমালয়ান ক্লাব’–এর আজীবন সদস্য ছিলেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন কলেজে অধ্যাপনা করেছেন দীর্ঘ কুড়ি বছর। অত্যন্ত আত্মগম্ভীর কিন্তু রসবোধে পূর্ণ লেখক আজীবন ছিলেন কর্তব্যনিষ্ঠায় অবিচল এবং অত্যন্ত নিয়মানুবর্তি ব্যক্তিত্ব। পরিব্রাজক হিসাবে উমাপ্রসাদের নিজের দেখা নিজের বিষয়কে নিয়ে সহজ ভাষায় যে সমস্ত বই লিখেছেন সেগুলি বিশিষ্ট সাহিত্য হয়ে উঠেছে। হিমালয় ও ভারতের গিরিপথ ও গিরিশৃঙ্গ বিষয়ে লেখা বইয়ের সংখ্যা বেশি। তিনি তার মণিমহেশ নামক ভ্রমণকাহিনীর জন্যে, ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার লাভ করেন। তাঁর প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে ‘গঙ্গাবতরণ, কালিন্দী খাল, হিমালয়ের পথে পথে, সেই যে আমার নানা রঙের দিনগুলি, আফ্রিদি মুলুকে।তার অন্যান্য আরো গ্রন্থ গুলি হল– মণিমহেশ‘, ‘দুধওয়া‘, ‘পঞ্চকেদার‘, ‘ক্যালাইডেস্কোপ‘, ‘জলযাত্রা‘ ‘কাবেরী কাহিনী‘ ‘বৈষ্ণোদেবী ও অন্যান্য কাহিনী‘, ‘আরবসাগরের তীরে‘, ‘দুই দিগন্ত‘, ‘তপোভূমি মায়াবতী‘, ‘কৈলাস ও মানস সরোবর‘, ‘শেরপাদের দেশে‘, ‘কুয়ারী গিরিপথে‘, ‘পালামৌর জঙ্গলে‘, ‘ভ্রমণ অমনিবাস‘ (৫ খণ্ড), ‘শরৎচন্দ্র প্রসঙ্গ‘, ‘শ্যামাপ্রসাদের ডায়েরি ও মৃত্যু প্রসঙ্গ‘, ‘স্যার আশুতোষের দিনলিপি‘ (অনুবাদ)। সাহিত্যকৃতির জন্য তিনি অনেক সম্মান ও পুরস্কার পেয়েছেন। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে ‘মণিমহেশ’ ভ্রমণ সাহিত্য গ্রন্থের জন্য ভারত সরকারের সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার লাভ করেন। তিনি ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দের ১২ অক্টোবর মৃত্যুবরণ করেন।