উপজেলা নির্বাচন নিয়েও আওয়ামী লীগের তৃণমূলে দ্বন্দ্ব বাড়ছে

চেয়ারম্যান-ভাইস চেয়ারম্যান সবাই দলীয় নেতা ও অনুসারী হওয়ার এই দ্বিধাবিভক্তি

শুকলাল দাশ | শনিবার , ১১ মে, ২০২৪ at ৬:০৯ পূর্বাহ্ণ

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিরোধ নিরসন না হতেই উপজেলা নির্বাচন ঘিরে তৃণমূল আওয়ামী লীগে বিভক্তি বাড়ছে চট্টগ্রামে। নির্বাচনে চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান সব প্রার্থীই আওয়ামী লীগের হওয়ায় দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।

এবার উপজেলা নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দলীয় প্রতীক নৌকায় নির্বাচন না করার সিদ্ধান্ত নেয়। এমনকি দলটি কেন্দ্রীয়ভাবেও কাউকে সমর্থন দেয়নি। এর ফলে নির্বাচনে দলটির তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মধ্য থেকে যে কেউ নির্বাচনে অংশ নিতে পারছেন। দলীয় প্রতীক না থাকায় উপজেলা নির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগ থেকে শুরু করে উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা এবং অন্যান্য নেতাকর্মীরাও অংশ নিচ্ছেন।

চট্টগ্রামের ১৩টি উপজেলায় খবর নিয়ে জানা গেছে, জাতীয় নির্বাচনের পর উপজেলা নির্বাচনেও অংশ নিচ্ছে না বিএনপি। তাই আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা নিজেরাই নিজেদের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছেন নির্বাচনে। প্রতিটি উপজেলায় চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে দলের একাধিক প্রার্থী হওয়ায় তৃণমূলের নেতাকর্মীরা নিজ নিজ পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন, এতে করে কোন্দল বাড়ছে তৃণমূলে। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের মতে নির্বাচনে প্রতিযোগিতা করতে তৃণমূল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ভাগ হলেও আওয়ামী লীগ সভাপতির কাছে সবাই দলীয় কর্মী। যখন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের প্রয়োজনে ডাক দিবেন সব ভেদাভেদ ভুলে সবাই এক হয়ে একই মঞ্চে চলে আসবেন।

চট্টগ্রামের আনোয়ারা, চন্দনাইশ, পটিয়া, হাটহাজারী এবং ফটিকছড়ি উপজেলার তৃণমূল আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরে উপজেলায় দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছেন দলের নেতাকর্মীরা। এবার স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দল থেকে প্রতীক ও কোনো প্রার্থীকে সমর্থন দেওয়া হয়নি। এতে যে যার মতো নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। কেউ কাউকে ছাড় দিচ্ছেন না। এজন্যই নেতাকর্মীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব বাড়ছে। তবে ভেতরে ভেতরে স্থানীয় সংসদ সদস্যদের কারো না কারো উপর প্রচ্ছন্ন ছায়া রয়েছে এবং দিন শেষে তারাই বিজয়ী হচ্ছেন।

গত ৮ মে সন্দ্বীপ, সীতাকুণ্ড এবং মীরসরাই উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচনে স্থানীয় সংসদ সদস্যদের আর্শিবাদপুষ্টরাই জয়ী হয়েছেন বলে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন।

আনোয়ারা, ফটিকছড়ি এবং চন্দনাইশ উপজেলার বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগের নেতার সাথে কথা হলে তারা আজাদীকে বলেন, আওয়ামী লীগের তৃণমূলে জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট বিরোধের রেশ এখনও কাটেনি। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন।

কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত এক নেতা আজাদীকে বলেন, আওয়ামী লীগ একটি বড় দল, সবাই নির্বাচনে প্রতিযোগিতা করতে চায়, এটাই স্বাভাবিক। তাই বলে নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করা যাবে না। তারপরও যদি কেউ দ্বন্দ্ব বা বিশৃঙ্খলায় জড়িয়ে পড়েন সেদিকে দল নজর রাখছে। তিনি বলেন, যেহেতু স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক থাকছে না, তাই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হবে। দল কাউকে সমর্থনও দেবে না, কাউকে বাধাও দেওয়া হবে না। যার বেশি জনপ্রিয়তা, তিনি জিতে আসবেন।

চট্টগ্রামে প্রথম ধাপে গত ৮ মে সন্দ্বীপ, সীতাকুণ্ড এবং মীরসরাই উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে আগামী ২১ মে চট্টগ্রামের রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, হাটহাজারী ও ফটিকছড়ি উপজেলায় ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। তবে রাউজানে চেয়ারম্যানভাইস চেয়ারম্যান তিনজনই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় এই উপজেলায় ভোটগ্রহণ হবে না।

তৃতীয় ধাপে আগামী ২৯ মে চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলা, বোয়ালখালী উপজেলা, পটিয়া উপজেলা ও চন্দনাইশ উপজেলায় ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। চতুর্থ ধাপে আগামী ৫ জুন চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলা ও লোহাগাড়া উপজেলায় ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচসিকের তিনটি উপ-আইন চূড়ান্ত করল মন্ত্রণালয়
পরবর্তী নিবন্ধপার্ক উট ও ইমুর ঘরে নতুন অতিথি