উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়া নিয়ে বিএনপির ভেতরে যেসব আলোচনা

বিবিসি বাংলা | বৃহস্পতিবার , ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ at ৬:২৪ পূর্বাহ্ণ

জাতীয় সংসদ নির্বাচন বয়কট করলেও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ না নেয়ার বিষয়ে বিএনপির অবস্থান এখনও পুরোপুরি পরিষ্কার নয়। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা না করা নিয়ে নানা আলোচনা আছে দলটির অভ্যন্তরে। বিএনপির দলীয় ফোরামে বিষয়টি নিয়ে নানা ধরনের মত উঠে আসার কথা জানা যাচ্ছে। এর আগেও সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন বা ২০১৯ সালের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জন করার ঘোষণা দিয়েছিল বিএনপি। তা সত্ত্বেও দলটির তৃণমূলের অনেক নেতা সেসব নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন, কেউ কেউ বিজয়ীও হয়েছেন। সদ্য সমাপ্ত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিএনপির কোনো কোনো নেতা দল থেকে বেরিয়ে অন্য দলের ব্যানারে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। ফলে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেয়া থেকে তৃণমূলের নেতাদের বিরত করা যাবে কিনা, তা নিয়ে আশঙ্কা রয়েছে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের মধ্যেও। এমন প্রেক্ষাপটেই কয়েকদিন আগে দলটির শীর্ষ ফোরামে এই বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসে। যদিও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলের ভূমিকা কী হবে, তা নিয়ে এখনো পরিষ্কার কোনো সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়নি দলটির পক্ষ থেকে। কিন্তু বিএনপির তৃণমূলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এই নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। তাদের কেউ কেউ যেমন সংসদ নির্বাচনের মতো এই নির্বাচনও বর্জন করার পক্ষে, আবার অনেকে মনে করেন, স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নিয়ে তাদের জনপ্রিয়তা তুলে ধরার সুযোগ রয়েছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বিবিসি বাংলাকে বলেন, এ নিয়ে শীর্ষ ফোরামে আলোচনা হয়েছিল বলেই হয়তো এই আলোচনা উঠেছে। তবে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত না নেয়ার কথা জানান বিএনপির ওই নেতা। তবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বিবিসি বাংলাকে বলেন, এটা নিয়ে এখনো কোনো আলোচনা হয়নি। আমরা এ বিষয়টি নিয়ে পরে দলীয় বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেব। স্থানীয় সরকার বিশ্লেষক ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, নির্বাচন থেকে দূরে থেকে কোনো রাজনৈতিক ফায়দা কেউ পাবে না। বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে দলীয় প্রতীকে ভোট না করার ইচ্ছা আওয়ামী লীগের এক ধরনের ফাঁদ হতে পারে। তবুও আমি মনে করি বিএনপি টেস্ট কেস হিসেবে এই নির্বাচনে অংশ নিতে পারে।

রাজবাড়ীর একজন বিএনপি নেতা বলেছেন, নির্বাচনে অংশ নেয়ার ইচ্ছা তো আছে। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আমিই বিজয়ী হবো ইনশাআল্লাহ। কিন্তু দল কী সিদ্ধান্ত নেয়, আগে সেটা দেখার জন্য অপেক্ষা করছি।

কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জাকির সরকার বলেন, দলের মধ্যে কেউ কেউ অতি উৎসাহী আছে। তারা মনে করে দলের কেউ নির্বাচিত হয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে বসলে তারা সাময়িকভাবে ভালো থাকবে। তাই হয়তো তাদের কেউ কেউ আগ্রহ দেখায় নির্বাচনে। তবে নির্বাচনে অংশ নেয়া নিয়ে বিএনপির অনেকের ভেতরে ভিন্ন মতও রয়েছে।

এবার আওয়ামী লীগ ঘোষণা দিয়েছে, উপজেলা নির্বাচনে কাউকে দলীয় প্রতীক দেয়া হবে না। যদিও এই ঘোষণাকে বিএনপির নেতাকর্মীদের নির্বাচনে আনার কৌশল হিসাবে দেখছে দলটি। আবার বিএনপির অনেক নেতা একে একটি সুযোগ হিসেবেও দেখছেন।

ঝিনাইদহ জেলার সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট এম এ মজিদ বলেন, যেখানে দলীয় সরকারের অধীনে আমরা জাতীয় নির্বাচন বয়কট করলাম, সেখানে উপজেলা নির্বাচনে যাওয়ার প্রশ্ন উঠবে কেন? এই ভোটে অংশগ্রহণ মানে সরকারকে স্বীকৃতি দেয়া। এই নির্বাচন কমিশনকে স্বীকৃতি দেয়া। সুতরাং এই নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ করার কোনো লজিকই নাই।

বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির একজন সম্পাদক বলেন, উপজেলা নির্বাচন স্থানীয় সরকার নির্বাচন। এখানে না গেলে নেতাকর্মীদের কেউ কেউ নিজ আগ্রহ থেকে ভোটে অংশ নেবে। সেক্ষেত্রে ভোট থেকে দূরে থাকার চেয়ে ভোটে যাওয়াই ভালো। তবে বিএনপি শীর্ষ নেতাদের কেউ কেউ মনে করেন উপজেলা নির্বাচন নিয়ে এসব আলোচনার পক্ষে বিপক্ষে যে সব মত আসছে তাতে দলের জন্য লাভ ক্ষতি দুই ধরনেরই হিসাব আছে। স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, বিএনপির নির্বাচনে যাওয়া নিয়ে এটা কোনো কোনো মহল থেকে গুজব ছড়ানো হচ্ছে। আমরা আপাতত এ বিষয়ে কোনো চিন্তা করছি না। যেহেতু আমরা বর্জন করেছি। এই নির্বাচন কমিশনকে আমরা গ্রহণযোগ্য মনে করি না।

তবে, স্থানীয় সরকার বিশ্লেষক ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, সরকার যদি বিএনপিকে ডিস্টার্ব না করে তাহলে এই নির্বাচনে অংশ নেয়া বিএনপির জন্যও ভালো, দেশের জন্যও ভালো।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমহাপরিচালক নিয়ে বিরোধের নিষ্পত্তি, দীর্ঘদিনের অচলাবস্থার অবসান
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে বাড়ছে ক্যান্সার আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা