নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মো. আনিছুর রহমান গত ২৪ এপ্রিল নগরীর পিটিআই মিলনায়তনে ৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ সাধারণ নির্বাচন উপলক্ষে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি জেলার রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসার, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও নির্বাচন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সাথে মতবিনিময় সভায় মিলিত হন। এসময় তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচনের মতো এবারের ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কোনো অনিয়ম হলে কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে কুন্ঠাবোধ করা হবে না। দ্বাদশ জাতীয় সংসদে যে নির্বাচন করেছি সেই নির্বাচনের চেয়ে নিচে নামার কোনো সুযোগ নেই। আমাদেরকে ওই সময় যেমন দেশের মানুষ দেখেছে, আন্তর্জাতিক মহল যেমন দেখেছে, এখনও কিন্তু দেখবে। এই নির্বাচনকেও দেখবে। নতুন সরকারের আওতায় কিভাবে নির্বাচন হচ্ছে সেটি সবাই দেখবে।
ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে ইসি মো. আনিছুর রহমান বলেছেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মত এ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী থাকছে না এবং দলীয় প্রতীক দেওয়া হচ্ছে না। কাজেই নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে। আশা করছি ভোটারের সংখ্যাও বাড়বে। এ নির্বাচনে কোনো ধরনের অনিয়ম গ্রহণযোগ্য হবে না। কোনো কেন্দ্রে যদি ভোট কারচুপি বা অনিয়ম হয় তবে সে কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রিজাইডিং অফিসার সাথে সাথে ভোট বন্ধ করে দিতে পারবে। নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা আইনের স্বপক্ষে থেকে যে কোনো ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারবে। নিরাপত্তা নিশ্চিতে আইন–শৃঙ্খলা বাহিনী সর্বদা আপনাদের পাশে থাকবে।
তিনি বলেন, গত নির্বাচন একই দিনে সম্পন্ন হলেও এবারের নির্বাচনে ব্যবস্থাপনার সুবিধা ও কৃচ্ছ্রতাসাধনের লক্ষ্যে চার ভাগে নির্বাচন শেষ করার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। ৮ মে ১৫০টি উপজেলায় প্রথম পর্যায়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বাকি জেলাগুলোতে ২১ মে, ২৯ মে ও ৫ জুন নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। তবে বান্দরবান জেলার তিনটি উপজেলায় নির্বাচন স্থগিত রাখা হয়েছে। দুর্গম, পাহাড়ি ও দ্বীপ এলাকাগুলোতে স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় ভোটের আগের দিন নির্বাচনী সরঞ্জাম পৌঁছে দেয়া হবে এবং বাকি জেলাগুলোতে ভোটের দিন সকাল ৮টার আগে ব্যালট পেপার পৌঁছে দেয়া হবে এবং বিকাল ৪টায় ভোট গ্রহণ শেষ হবে। আসন্ন উপজেলা পরিষদ সাধারণ নির্বাচনে ৯টি জেলার প্রতিটি উপজেলায় ইভিএম’র মাধ্যমে এবং বাকি জেলাগুলোর উপজেলা পরিষদে ব্যালট পেপারের মাধ্যমে নির্বাচন সম্পন্ন হবে।
উপজেলা নির্বাচনকে ঘিরে যেন উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়, যেন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি না হয়, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীদের ‘হস্তক্ষেপ’ রোধে কঠোর বার্তা দেওয়ার পাশাপাশি দলীয় প্রার্থী না দেওয়া, দলীয় প্রতীক না রাখা এবং দলের মধ্যে কোনো ধরনের মতবিরোধ না রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন। এছাড়া আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ নির্বাচনে কেউ অবৈধ হস্তক্ষেপ করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে সতর্ক করেছেন। তিনি বলেছেন, নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠুভাবে হয় সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ নির্বাচন পরিচালনার কাজে নিয়োজিত প্রশাসন শতভাগ নিরপেক্ষতা বজায় রাখবে।
নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে যেভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে, তা এককথায় প্রশংসাযোগ্য। শান্তি বজায় রাখতে এবারই প্রথম পুরোপুরি অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে। এ কারণে মনোনয়নপত্র দাখিলের দিন রিটার্নিং কর্মকর্তার দপ্তরগুলোতে হৈচৈ ছিল না, আচরণ বিধিমালা লঙ্ঘনেরও তেমন খবর মেলেনি। তবে কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন, স্থানীয় এমপিদের পুরোপুরি প্রভাবমুক্ত রাখা যাচ্ছে না। সাধারণ জনগণ প্রত্যাশা করছেন, নির্বাচন উপলক্ষ্যে যেন শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিনষ্ট না হয়। ভোটের দিনগুলোয় পরিস্থিতি কী হবে, তা অনিশ্চিত হলেও আমরা আশাবাদী যে নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ হবে। কেননা, ইসি আনিছুর রহমান নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের উদ্দেশে মতবিনিময়কালে বলেন, আমাদের একটাই চাওয়া–নির্বাচনকে সুন্দর করতে হবে। যেখানেই কোনো অনিয়ম হবে, কারচুপি বা অন্যায় কার্যক্রম হবে সেখানে প্রিজাইডিং অফিসার ব্যবস্থা নিতে পারবেন। ইসির জন্য এ নির্বাচনও চ্যালেঞ্জের হলেও আমরা সফলতাই কামনা করবো।