উন্মুক্ত খাল-নালার ৫৬৩ ঝুঁকিপূর্ণ স্থান চিহ্নিত

দ্রুত সময়ে চিহ্নিত স্থানগুলোতে নিরাপত্তা বেষ্টনী দেয়া হবে : মেয়র । খাল-নালায় পড়ে প্রতি বছর দুজনের প্রাণহানি

মোরশেদ তালুকদার | মঙ্গলবার , ২৯ এপ্রিল, ২০২৫ at ৫:৫৯ পূর্বাহ্ণ

নগরে বিভিন্ন খালনালায় ৫৬৩টি ‘মরণফাঁদ’ চিহ্নিত করেছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। খালনালার পার্শ্ববর্তী চিহ্নিত এসব স্পটগুলোতে নেই নিরাপত্তা বেষ্টনী ও স্ল্যাব। আবার কয়েকটি স্পট আছে যেখানে ম্যানহোলের ঢাকনা নেই। তাই স্পটগুলোকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ স্থান হিসেবে চিহ্নিত করে চসিকের প্রকৌশল বিভাগ।

ঝুঁকিপূর্ণ স্থান চিহ্নিত করার বিষয়টি নিশ্চিত করে সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন আজাদীকে বলেন, আজ (গতকাল সোমবার) আমার কাছে কয়েকটি ওয়ার্ডের তালিকা উপস্থাপন করা হয়। নিরাপত্তা নিশ্চিতে বেষ্টনী দেয়ার কাজ শুরু করতে নির্দেশনা দিয়েছি। খুব দ্রুত সময়ে চিহ্নিত স্থানগুলোতে নিরাপত্তা বেষ্টনী দেয়া হবে। আপাতত বাঁশ দিয়ে অস্থায়ী ঘেরাও দেয়া হবে। এরপর সেখানে লাল ফিতা দিয়ে পথচারীদের সতর্ক করা হবে। পরে স্থায়ী ঘেরাও দেয়া হবে।

চসিক সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে নগরের ঝুঁকিপূর্ণ নালানর্দমা ও খালের একটি তালিকা করে সংস্থাটি। ওই তালিকা অনুযায়ী, নগরের ৪১ ওয়ার্ডে খালনালা রয়েছে এক হাজার ১৩৭ কিলোমিটার। এর মধ্যে নিরাপত্তা বেষ্টনী ছাড়া খালের পাড় রয়েছে ১৯ হাজার ২৩৪ মিটার। উন্মুক্ত নালা রয়েছে পাঁচ হাজার ৫২৭টি স্থানে। যেগুলোকে মরণফাঁদ হিসেবে ওই সময় অবিহিত করেন সংশ্লিষ্টরা। এ তালিকা প্রণয়নের পর সাড়ে ৩ বছর পার হলেও এখনো অরক্ষিত রয়েছে শহরের খালনালা।

এরপর ২০২২ সালের ৬ এপ্রিল জলাবদ্ধতা নিরসন মেগা প্রকল্প নিয়ে চসিকসিডিএ একটি সমন্বয় করে। ওই সভায় দুর্ঘটনা রোধে খাল ও নালার পাড়ে নিরাপত্তা বেষ্টনী নির্মাণে জোর দেয় দুই সংস্থায়। এরপর কেটে গেছে তিন বছর। দুর্ঘটনারোধে শহরের শতভাগ খালনালার এখনো নিরাপত্তা বেষ্টনী দিতে পারে নি কোনো সংস্থা। তবে এবার মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন নিরাপত্তা বেষ্টনী দেয়ার উদ্যোগ নেন। এরই অংশ হিসেবে ঝুঁকিপূর্ণ তালিকা চিহ্নিত করা হয়।

জানা গেছে, গত পাঁচ বছরে নগরে খালনালায় পড়ে ১০ জনের প্রাণহানি হয়। ওই হিসেবে প্রতিবছর উন্মুক্ত খালনালায় পড়ে মারা যাচ্ছে দুইজন। তাই উন্মুক্ত খালনালাগুলো নগরবাসীর কাছে একধরনের মরণফাঁদ। খালনালায় পড়ে প্রাণহানি এড়াতে নগরবাসী বিভন্ন সময়ে দাবি জানায়, খালনালার পাড়ে নিরাপত্তা বেষ্টনী দেয়া হোক। কিন্তু তা খুব একটা আমলে নেয় না চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)-সিডিএ’সহ অন্যান্য সেবাসংস্থাগুলো। সর্বশেষ গত ১৮ এপ্রিল হিজরা খালে পড়ে ছয় মাসের শিশু শেহরিজের মৃত্যুর পর এ দাবি আরো জোরালো হয়।

এরপর চসিকের পক্ষ থেকে পত্রিকায় গণবিজ্ঞপ্তি দিয়ে নগরবাসীর কাছ থেকে উন্মুক্ত খালনালার তথ্য চাওয়া হয়। তথ্য সংগ্রহে দায়িত্ব দেয়া ৬ জন আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাকে। এছাড়া মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন গত ২০ এপ্রিল বেষ্টনী ও স্ল্যাবহীন খালনালা ও ঢাকনাহীন ম্যানহোল আছে এমন ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্টগুলোর তালিকা প্রস্তুত করে ২৪ এপ্রিলের মধ্যে জমা দেয়ার নির্দেশনা দেন চসিকের প্রকৌশলীদের। এরপ্রেক্ষিতে চলতি সপ্তাহে সংস্থাটির ৬টি জোনের আওতায় নগরের ৪১ ওয়ার্ডের তালিকা প্রস্তুত করা হয়।

ঝুঁকিপূর্ণ ৫৬৩ স্থান :

তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ৪১ ওয়ার্ডের মোট ৫৬৩টি জায়গাকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে ১ নম্বর জোনে ৪৭টি, দুই নম্বর জোনে ৭৮টি, ৩নম্বর জোনে ৬৮টি, চার নম্বর জোনে ৭৪টি, ৫ নম্বর জোনে ৩৩টি এবং ৬ নম্বর জোনে ঝুঁকিপূূর্ণ স্থান আছে ২৬৩টি। তালিকা অনুযায়ী, দুর্ঘটনা এড়াতে বিভিন্ন জায়াগায় বিভিন্ন পরিমাপের ৮৬৩ টি স্ল্যাব বসাতে হবে। এছাড়া বেষ্টনী নেই ১৪৬ জায়গায়। ম্যানহোল নেই কয়েকটি স্পটে।

চসিকের প্রধান প্রকৌশলী মো. আনিসুর রহমান আজাদীকে বলেন, তালিকা পেয়েছি। যেহেতু বর্ষা চলে আসছে তাই আপাতত বাঁশ দিয়ে অস্থায়ী নিরাপত্তা বেষ্টনী দেয়া হবে। কিছু জায়গায় প্রজেক্টের কাজ চলছে, সেখানে প্রজেক্টএ যদি ধরা থাকে তাহলে ওয়াল দিয়ে স্থায়ী নিরাপত্তা বেষ্টনী দেয়া হবে। স্ল্যাবের বিষয়টি চলমান থাকবে। যেখান থেকে আমরা তথ্য পাব সেখানেই স্ল্যাব বসানো হবে।

নগরের চকবাজার এলাকার বাসিন্দা ইমরান আলম আজাদীকে বলেন, শহরের উন্মুক্ত খালনালাগুলোকে মরণফাঁদ বললে ভুল হবে না। এরকম অসংখ্য মরণফাঁদ আছে। তবে এর মধ্যে বেশি ঝুঁকি আছে এমন মরণফাঁদগুলোতে বেষ্টনী দিয়ে নিরাপত্তা বাড়াতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅন্তর্বর্তী সরকারকেই ভালো সমাধান মনে করছে মানুষ
পরবর্তী নিবন্ধদুদকের অভিযানের খবরে সটকে পড়লেন কানুনগোসহ কর্মচারীরা