করোনাকালীন সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যস্ততার সুযোগে আবারো সক্রিয় হয়ে উঠেছে ‘কিশোর গ্যাং’। উদ্ভট সব নামে এলাকাভিত্তিক নতুন নতুন সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তুলছে তারা। এরই মধ্যে এদের সংশ্লিষ্টতায় সন্ত্রাসী গ্রুপের তৎপরতা ভয়াবহ ও বেপরোয়া রূপ নিয়েছে। পাড়া-মহল্লা-বস্তির ছিঁচকে সন্ত্রাসী থেকে শুরু করে ধনীর দুলাল, এমনকি স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাও এসব বাহিনীতে জড়িয়ে পড়ছে। গত এক মাসে নগরীর বিভিন্ন থানায় ছিনতাই, চুরি, অপহরণ, মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপরাধে ৫৬ জন ধরা পড়েছে, যাদের বয়স ১৮ থেকে ২০ বছরের মধ্যে। এসব কিশোর অপরাধীদের বেশিরভাগই মাদকসেবী।
সিএমপির তথ্যমতে, নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডে দেড় শতাধিক কিশোর গ্যাং শনাক্ত করেছে গোয়ন্দা পুলিশ। এলাকার অন্তত ৫০ জন বড় ভাইয়ের ছত্রছায়ায় এসব কিশোর গ্যাং গড়ে ওঠে। বড় ভাইয়েরা ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতিক হিসাবে পরিচিত। যাদের কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ-র্যাব কারাগারেও পাঠিয়েছে। তারপরও দমছে না কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতা। চলছে নানা অপরাধ কর্মকাণ্ড। এদের মধ্যে নগরীর বিভিন্ন উড়াল সড়কসহ কমপক্ষে তিন শতাধিক স্পটে আড্ডার ছলে ছিনতাইসহ নানা অপরাধ কর্মকাণ্ড করছে এরা।
নির্ভরযোগ্য সূত্রমতে সারাদেশের কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণে বছরখানেক আগে উদ্যোগ নেয় পুলিশ সদর দপ্তর। এরই অংশ হিসেবে সক্রিয় এবং তাদের সহায়তাকারীদের তালিকা করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। এ তালিকার কাজ প্রায় গুছিয়ে এনেছে পুলিশ। এতে সারা দেশে নামে-বেনামে সহস্রাধিক সক্রিয় কিশোর গ্যাংয়ের সন্ধান পাওয়া গেছে। এসব গ্রুপের তালিকার সঙ্গে একটি প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বেশ কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে। শিগগির এটি পুলিশ সদর দপ্তরে পাঠানো হবে। এদিকে, নগরীতে অপরাধ দমনে কিশোর গ্যাং ও মদদদাতাদের তথ্য চেয়েছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)। গতকাল শনিবার বিকাল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত নগরীর ১৬টি থানার ১৪৫ জন বিট অফিসার তাদের বিটের নির্ধারিত এলাকায় এসব তথ্য সংগ্রহে দায়িত্ব পালন করেন। নগরীর বিভিন্ন বিট এলাকায় এলাকার মানুষ তাদের নিজ নিজ এলাকার বিট অফিসারদের কাছে এলাকায় বসবাসরত কিশোর গ্যাং এবং তাদের মদদদাতাদের বিষয়ে তথ্য দিতেও দেখা গেছে।
সিএমপির নবনিযুক্ত কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে প্রথমবার মতবিনিময়েই হাল সময়ে পাড়া-মহল্লায় দৃশ্যমান হওয়া পশ্চিমা ধাচের ‘কিশোর গ্যাং কালচার’ ভবিষ্যত প্রজন্ম ও জাতীয় স্বার্থের বিরুদ্ধে বড় হুমকি হয়ে উঠতে পারে বলে মন্তব্য করেন। একইসাথে দায়িত্বে থাকাকালীন সময়ে শহরের কোথাও কিশোর গ্যাং- নামে কোনও উৎপাত মোটেও সহ্য করা হবে না জানিয়ে এ ধরনের কালচারের নামে যারা অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িত হবে তাদের পাশাপাশি আড়ালে থেকে ছত্রছায়া প্রদানকারী বড় ভাইদেরও কোনও ছাড় না দেয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
এরপর পুলিশ কমিশনার সিএমপির অপরাধ বিভাগের সবকটি শাখার দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদেরকে ১৬ থানা এলাকার কিশোর গ্যাং-এর তালিকা হালানাগাদ করার ব্যাপারে নির্দেশনা দেন। কিশোর অপরাধচক্রের কারা কোন এলাকায় সক্রিয় রয়েছে, কোন চক্রের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে রয়েছে, কাদের বিরুদ্ধে কী মামলা রয়েছে বা নেই- বিস্তারিত সব তথ্য হালনাগাদ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে বলা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট জোনের ডিসিরা তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম তদারক করছেন। ওই তালিকা ধরেই প্রতিটি চক্র ও তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দাতাদের আইনের আওতায় আনতে অভিযান পরিচালনা করা হবে।