লোহাগাড়ায় চুনতি ১০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রটি উদ্বোধনের ১১ মাসেও চালু হয়নি। যার ফলে কাঙ্খিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এলাকার নারী ও শিশুরা। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী।
জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব প্রয়াত মেজর জেনারেল মিয়া মুহাম্মদ জয়নুল আবেদীন বীরবিক্রমের প্রচেষ্টায় নিজ গ্রামে চুনতি মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রটি স্থাপনের উদ্যোগ নেয়। তিনি নিজেই ২০১৯ সালের ৪ জুলাই নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন। কাজ শেষে ২০২২ সালের ৪ ডিসেম্বর কেন্দ্রটি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রটিতে চিকিৎসাসেবা চালু হলে মা–শিশুর স্বাস্থ্য, পরিকল্পিতভাবে পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি কার্যক্রমসহ বিভিন্ন ধরনের সেবা দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু উদ্বোধনের ১১ মাসেও চিকিৎসকসহ জনবল না থাকায় এটি আর চালু হয়নি। ফলে চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা। এভাবে পড়ে থাকলে সাড়ে চার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রটি চালু হওয়ার আগেই নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশংঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
সরেজমিনে দেখা যায়, চুনতি ১০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রটি ঘিরে রয়েছে উপজেলার চুনতি, আধুনগর, বড়হাতিয়া, পুটিবিলা ও পাশ্ববর্তী পার্বত্য লামা উপজেলার আজিজ নগর ইউনিয়ন। সাড়ে তিন লক্ষাধিক মানুষের বসবাস এই অঞ্চলে। এখানে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ সরকারি–বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। চিকিৎসার জন্য এখানকার মানুষকে কয়েক মাইল পথ পাড়ি দিয়ে যেতে হয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। তিনতলা বিশিষ্ট এই মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের ভবনে দামি যন্ত্রপাতি ও আসবাবপত্রে সুসজ্জিত। এখানে আছে আধুনিক ডেলিভারি রুম, আল্ট্রাসনোসহ নানা পরীক্ষা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা। সবকিছু অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। রয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগও। জনবল নিয়োগ না হওয়ায় দীর্ঘ প্রত্যাশার সেবার দরজাটা এখনো বন্ধ রয়ে গেছে।
চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য আনোয়ার কামাল বলেন, চুনতি মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রটির নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার পর ধারণা করেছিলাম দ্রুত সময়ের মধ্যে চিকিৎসাসেবা চালু হবে। এলাকাবাসী সহজেই সেবা পাবেন। মা ও শিশু মৃত্যুর হার কমবে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মুহাম্মদ জয়নুল আবেদীন বীরবিক্রম মারা যাবার পর রাজনৈতিক নেতা ও জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে এলাকাবাসীর সেই আশা অপূর্ণই থেকে গেছে। এই ভবনে কবে নাগাদ চিকিৎসাসেবা চালু হবে কেউ জানে না। এছাড়া মুহাম্মদ জয়নুল আবেদীন বীরবিক্রম জীবিত থাকা অবস্থায় ওই কেন্দ্রটি ১০ শয্যা থেকে ২০ শয্যায় উন্নীত করার প্রস্তাবনার পর বাজেটও পাশ হয়েছিল। কিন্তু রাজনৈতিক নেতা ও জনপ্রতিনিধিসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অবহেলায় তাও ভেস্তে গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা রোখেয়া বেগম জানান, নিজ এলাকায় মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রটি স্থাপনের পর খুব খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে চালু না হওয়ায় হতাশা দেখা দিয়েছে। এলাকায় আর কোন চিকিৎসা ব্যবস্থা না থাকায় রোগীদের সীমাহীন দুর্ভোগে পড়তে হয়। নিরুপায় হয়ে তাদের ছুটে যেতে হয় গ্রাম্য ধাত্রিদের কাছে। এতে অনেকেই মৃত্যু মুখে ঢলে পড়েন। কবে কাক্সিক্ষত সেবা মিলবে সেই অপেক্ষার দিন গুনছে এলাকাবাসী।
চুনতি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন জানান, চুনতি মা ও শিশু কেন্দ্রটি নির্মিত হলেও চালু না হওয়ায় জটিল প্রসূতিদের উপজেলা সদর কিংব স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। এতে গ্রামের দরিদ্র মানুষের অর্থ ব্যয় হচ্ছে। তাছাড়া মহাসড়ক হয়ে রোগীদের নিয়ে যাওয়া খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এটি চালু হলে প্রসূতি মায়েরা নিরাপদ ডেলিভারির সুবিধা পেতো।
উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রুনা আক্তার জানান, জনবল সংকটে মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রটি চালু করা যাচ্ছে না। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।