নগরীর লালখান বাজারে সরকারদলীয় বিবদমান গ্রুপগুলোর মধ্যে উত্তেজনা বেড়েই চলছে। শুক্রবার রাতে আলমগীর নামে এক যুবককে ছুরিকাঘাতের ঘটনার চব্বিশ ঘণ্টা না পেরোতেই একই এলাকায় শাকিল নামে আরেকজনকে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে। আসন্ন সিটি নির্বাচন কেন্দ্রিক আধিপত্যের বিস্তার নিয়ে এ ধরনের হামলার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।
গতকাল শনিবার বেলা দুইটা নাগাদ লালখান বাজার টাঙ্কির পাহাড় এলাকায় এ ছুরিকাঘাতের ঘটনা ঘটে। পরে স্থানীয়রা শাকিলকে উদ্ধার করে চমেক হাসপাতালে নিয়ে যায়।
স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, আহত শাকিল স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা দিদারুল আলম মাসুমের সমর্থক হিসেবে পরিচিত। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে কাউন্সিলর প্রার্থী আবুল হাসনাত বেলালের ১০/১২ অনুসারী মিলে শাকিলের ওপর হামলা চালায় বলে অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনার পর লালখান বাজারে ফের উত্তেজনা তৈরি হয়। দুটি গ্রুপের লোকজনই এলাকায় মুখোমুখি অবস্থান নেয়। এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। উত্তপ্তকর পরিস্থিতি থেকে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে এলাকাটিতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। দুই পক্ষের লোকজনই বিক্ষোভ ও সভা সমাবেশ করার চেষ্টা করলে পুলিশ তাতে বাধা দেয়।
আহত শাকিলের ভাই সাগর আজাদীকে বলেন, আমার ভাই দোকানে ছিল। দুইটা বেজে যাওয়ায় তাকে বাসায় খাবার খেতে পাঠিয়ে দিয়ে আমি নিজে দোকানে বসেছিলাম। দোকান থেকে বেরিয়ে সামান্য কিছু দূর যাওয়ার পর টাঙ্কির পাহাড়ে আবু হাসনাত বেলালের অনুসারী ১০/১২ জন মিলে প্রথমে তাকে ধরে মারধর করে। এ সময় সন্ত্রাসীদের হাতে ছুরি, লাঠি ও লোহার রড ছিল।
তারা আমার ভাইকে দৌড়াতে বলে। পরে আমার ভাই দৌড়ানো শুরু করলে সন্ত্রাসীরাও পেছন থেকে দৌড়ে দৌড়ে ভাইকে ছুরি মারার পাশাপাশি লাঠি লোহার রড দিয়ে আঘাত করতে থাকে। পরে খবর পেয়ে আমিসহ অন্যান্য ঘটনাস্থলে গিয়ে ভাইকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসি।
সাগর দাবি করেন, তার ভাই কোনো রাজনীতির সাথে জড়িত নেই। কিন্তু তার কিছু বন্ধু রাজনীতির সাথে জড়িত।
তবে হামলায় আহত শাকিল নিজের লোক না বলে দাবি করেন আওয়ামী লীগ নেতা দিদারুল আলম মাসুম। তিনি আজাদীকে বলেন, আমি ছেলেটাকে (শাকিল) কখনো দেখিনি। হামলার পর তার নামটি শুনেছি। আলমগীরের ওপর যারা হামলা করেছে তাদের বাসা পাশাপাশি। আলমগীর কোনো দলের সাথে জড়িত নেই। তবে সে আওয়ামী লীগ সমর্থক হিসেবে আমরা জানি। শুক্রবার ও শনিবারের হামলায় আমাদের কেউ জড়িত নেই বলে দাবি করেন তিনি।
ওসি মোহাম্মদ শাহীনুজ্জামান বলেছেন, শনিবারের হামলার ঘটনায় এখনো থানায় কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পাওয়া গেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এর আগে শুক্রবারের ছুরিকাঘাতের ঘটনায় একটি পক্ষের বিক্ষোভের মুখে ওইদিন রাতেই পুলিশ অভিযান চালিয়ে সুদীপ্ত হত্যার আসামিসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে বলে আজাদীকে জানান খুলশী থানার ওসি মোহাম্মদ শাহীনুজ্জামান। এরা হলেন জাহিদুর রহমান জাহেদ (২৮), সুমন (১৯), মাহিদী হাসান ইমন (২০), সাজ্জাদ (২৩) ও ইব্রাহিম মাহমুদ (৩০)।
পুলিশ জানায়, গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে জাহেদ সুদীপ্ত হত্যা মামলার আসামি। তার বিরুদ্ধে খুলশী থানায় হত্যা, চাঁদাবাজি, মারামারি সহ বিভিন্ন অভিযোগের ঘটনায় ১২টি মামলা রয়েছে বলে জানায় পুলিশ। বাকীরাও একাধিক মামলার আসামি। গ্রেপ্তারকৃতরা সাবেক কাউন্সিলর মানিক ও আওয়ামী লীগ নেতা দিদারুল আলমের অনুসারী হিসেবে এলাকায় পরিচিত। বিভিন্ন সভা-সমাবেশে এ দুই নেতাদের সাথে তাদের ছবি পাওয়া যায়। অন্যদিকে হামলায় আহত আলমগীর কাউন্সিলর প্রার্থী আবুল হাসনাত বেলালের অনুসারী।
ওসি বলেন, পাঁচজনকে গ্রেপ্তারের পাশাপাশি হামলায় ব্যবহৃত ছুরিটি উদ্ধার করা হয়েছে।
স্থানীয়দের ভাষ্য, আসন্ন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সরকারদলীয় মনোনীত প্রার্থী আবুল হাসনাত বেলাল ও বিদ্রোহী প্রার্থী সাবেক কাউন্সিলর আবুল ফজল কবির আহমেদ মানিকের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারের লড়াই চলছে। সম্প্রতি উভয় গ্রুপের লোকজন একে অপরের ওপর হামলা ও পাল্টা হামলার মাধ্যমে শক্তি প্রদর্শন করছে। এতে আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে স্থানীয় বাসিন্দারা।
এরমধ্যে মাসুম নির্বাচনে প্রার্থী না হলেও মানিকের পক্ষে অবস্থান করছে বলে এলাকায় বিভিন্ন জনের সাথে কথা বলে জানা গেছে। তবে তা প্রকাশ্যে না বলে জানা যায়।
মাসুম বলেন, সিটি নির্বাচন ইস্যুকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক ফায়দা লুটার জন্য কাউন্সিলর প্রার্থী বেলালের অনুসারী লোকরাই নিজেদের মধ্যে এসব হামলার ঘটনা ঘটাচ্ছে। তারা নিজেরা নিজেদের ওপর হামলা করে আমাদের ওপর দোষ চাপাচ্ছে। এর বাইরে কিছু নেই। এসব করে তারা এলাকায় ভয়ভীতি প্রদর্শন করে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
জানা গেছে, এর আগেও প্রতিপক্ষ গ্রুপগুলোর মধ্যে একাধিকবার হামলার ঘটনা ঘটেছে।
পুলিশের ঊর্ধ্বতনদের কয়েকজন বলছেন, সিটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সরকারদলীয় দুটি গ্রুপের মধ্যে ক’দিন ধরে উত্তেজনা চলছে। বিভিন্ন সভা-সমাবেশ করে একে ওপরের ওপর নানা দোষারোপে লিপ্ত থাকছে। তবে পুলিশও সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বলে জানান তারা।