উত্তম-সৌমিত্রের লড়াই

| সোমবার , ১৬ নভেম্বর, ২০২০ at ৯:৩৭ পূর্বাহ্ণ

সৌমিত্র মানেই দীর্ঘাঙ্গি সু-পুরুষ। উত্তমের পর সে সময় মেয়েদের মনে ঝড় তুলতে সক্ষম হয়েছিলেন একমাত্র সৌমিত্রই। ১৯৩৫ সালের জানুয়ারি মাসের ১৯ তারিখ জন্ম হয় সব্যসাচী এই শিল্পীর। চট্টোপাধ্যায় পরিবারের আদি বাড়ি ছিল অধুনা বাংলাদেশের কয়া গ্রামে। তবে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের ঠাকুরদার সময় থেকেই চট্টোপাধ্যায় পরিবারের সদস্যরা নদিয়া জেলার কৃষ্ণনগরে থাকতে শুরু করেন। বাবার বদলির চাকরি কারণে ক্লাস ফাইভের পর হাওড়ায় চলে যান সৌমিত্র। সেখানেই স্কুলে পড়াশোনা। তারপর কলকাতার সিটি কলেজে বাংলা নিয়ে পড়তেন তিনি। প্রথম থেকেই কবিতা, আবৃত্তি, সাহিত্য, বাম রাজনীতির দিকে ঝোঁক ছিল তার। তাই সৌমিত্র মানেই যে শুধু সিনেমার পর্দায় ডাকসাইটে অভিনেতা, তা একেবারেই নয়। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় নিজেকে মেলে ধরেছিলেন সংস্কৃতির নানা দিকে। বাংলা-ঘটির লড়াইয়ে সব সময়ই উত্তম-সৌমিত্র কেন্দ্রবিন্দু। ভক্তরাও দু’ভাগ। একদিকে যখন উত্তমের নামে বঙ অফিসে দৌড়াচ্ছে, অন্যদিকে সৌমিত্রও তার স্টাইলে চমক দেখিয়েছেন পর্দায়। ১৯৫৬ সালে সত্যজিৎ রায় যখন ‘অপরাজিত’র জন্য নতুন মুখ খুঁজছিলেন, তখনই তার সঙ্গে ২০ বছরের সৌমিত্রর দেখা হয়। বয়স বেশি হওয়ার কারণে সেই সময় তাকে নেননি পরিচালক সত্যজিৎ। কিন্তু বেশি বয়সের অপুর জন্য ২০ বছরের যুবককে পছন্দ করে রেখেছিলেন তার অজ্ঞাতেই। দুই বছর বাদে যখন ‘জলসাঘর’-এর শুটিং করছিলেন সেটে যুবক সৌমিত্র গিয়েছিলেন সেটে তার কাজ দেখতে। শুটিং শেষ হওয়ার পর সৌমিত্রকে নিয়ে ছবি বিশ্বাসের সামনে দাঁড় করান সত্যজিৎ। পরিচয় করাতে গিয়ে বলেন, এ হচ্ছে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, আমার ‘অপুর সংসার’-এর নায়ক। সেই শুরু। তারপরের পাঁচ দশক যেন রূপকথার মতো। ‘দেবী’, ‘ক্ষুধিত পাষাণ’, ‘ঝিন্দের বন্দি’, ‘সাত পাকে বাঁধা’, ‘কাপুরুষ’, ‘আকাশ কুসুম’, ‘বাঘিনী’, ‘পরিণীতা’, ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’ থেকে হালফিলের ‘ময়ূরাক্ষী’, ‘বেলাশেষে’, ‘সাঁঝবাতি’ একের পর এক মণিমুক্তা ছড়িয়ে রয়েছে বাঙালির স্মৃতির ভাণ্ডারে। বাঙালির মহানায়ক উত্তম কুমারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নিজের আলাদা পরিচিতি গড়ে তুলেছেন স্বকীয়তার ওপর ভিত্তি করে। তিনি বাঙালির আদি অকৃত্রিম ফেলুদা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধতার মতো শিল্পীর মৃত্যু হয় না : ববিতা
পরবর্তী নিবন্ধএকজন সৌমিত্র ও তার আলোকিত কর্মজীবন