নগরের ও আর নিজাম রোডের প্রবর্তক মোড় থেকে পাঁচলাইশ পর্যন্ত অংশে সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে ‘গ্রিড এ ওয়ান ইঞ্জিনিয়ারিং’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পাঁচ বছর মেয়াদী চুক্তি করে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। চুক্তির আওতায় প্রতিষ্ঠানটি শেভরন ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সামনে মক্কী মসজিদের পাশে রাস্তা ঘেঁষে নির্মাণ করে দুটি দোকান। বাণিজ্যিকভাবে পরিচালিত দোকান দুটির একটি হচ্ছে ‘ফ্রেশ ফুড’ নামে রেস্টুরেন্ট, অপরটি ‘শ্রেষ্ঠা মেডিসিন কর্নার’ নামে ফার্মেসি। তাই স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ছিল, এখানে সৌন্দর্যবর্ধন নাকি বাণিজ্যিকীকরণ প্রাধান্য পেয়েছে?
অবশেষে চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ায় গতকাল সোমবার দোকান দুটি উচ্ছেদ করে চসিক। এতে চুক্তি নবায়ন না করে দোকানগুলো উচ্ছেদ করায় সন্তোষ প্রকাশ করে স্থানীয় লোকজন ‘ধন্যবাদ’ জানিয়েছেন চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীকে। একইসঙ্গে তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেন, উচ্ছেদের পর উন্মুক্ত হওয়া জায়গাটি ভবিষ্যতে আর বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করা হবে না। এছাড়া প্রকৃত অর্থে সবুজায়ন করে জায়গাটিকে নান্দনিক ও দৃষ্টিনন্দন করতে উদ্যোগ নেবেন মেয়র–এমনটাই প্রত্যশা তাদের।
গতকাল এ উচ্ছেদ অভিযানে নেতৃত্ব দেন চসিকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট চৈতী সর্ববিদ্যা। আজাদীকে তিনি বলেন, চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে। এরপর ওনাদের সময় দেয়া হয়েছে। সরে না যাওয়ায় উচ্ছেদ করা হল।
চসিকের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পাঁচলাইশ মক্কী মসজিদ সংলগ্ন সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পের আওতায় নির্মিত স্থাপনার চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ায় এবং শর্তানুযায়ী কার্যক্রম পরিচালনা না করার কারণে গ্রিড এ ওয়ান ইঞ্জিনিয়ারের সাথে সম্পাদিত চুক্তি বাতিল করা হয়। ইতোপূর্বে স্থাপনাটি সরিয়ে নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে সময় দেয়া হয়। কিন্তু নির্ধারিত সময় অতিক্রান্ত হওয়ায় উচ্ছেদ অভিযানের মাধ্যমে তিনটি দোকান ভেঙে দেয়া হয়।
তবে পর্যাপ্ত সময় না দেয়ার অভিযোগ করেছেন ‘গ্রিড এ ওয়ান ইঞ্জিনিয়ারিং’ এর স্বত্ত্বাধিকারী সুমন বসাক। তিনি আজাদীকে বলেন, আমরা জায়গাটি জোর করে দখল করিনি। কর্পোরেশন আমাদের বরাদ্দ দিয়েছে এবং আমরা চুক্তিও করেছি। চুক্তি নবায়নের জন্য গত তিন মাস ধরে সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও কোনো সাড়া দেয়নি। নবায়ন করবে বা করবে না একটা বলে দিলেই হতো। করবে না বললে আমরা সরে যেতাম। কিন্তু কর্পোরেশন কিছুই জানায়নি। আমরা জানুয়ারি মাসের ভাড়াও পরিশোধ করেছি কর্পোরেশনকে। এ অবস্থায় বৃহষ্পতিবার বিকেল ৫টায় আমাদের চিঠি দিয়ে জানায় চুক্তির মেয়াদ শেষ। আমাদের সরে যেতে বলে। তবে কয়দিনের মধ্যে সরতে হবে তা উল্লেখ করেনি চিঠিতে। তবুও ওইদিন রাতেই আমরা দোকান সিলগালা করে দিই। একইসঙ্গে মালামাল সরিয়ে নিতে এবং দোকানের স্ট্রাকচার খুলতে মিস্ত্রি খুঁজছিলাম। এরইমধ্যে আজ (গতকাল) এসে ভেঙে দিল। স্ট্রাকচারগুলো তৈরি করতে তিন মাস সময় লেগেছে। অথচ খুলে নিতে তিন দিনও সময় দিল না। ফার্মেসিতে সাড়ে ১০ লাখ টাকার ওষুধ ছিল, সেগুলো গুঁড়িয়ে দিল। রেস্টুরেন্টে মালামাল ছিল সেগুলোও ভেঙে দিল। যেহেতু আমরা জোর করে দখল করিনি তাই মালামাল সরিয়ে নিতে আমাদের কয়েকদিন সময় দেয়া দরকার ছিল।
১১ জনকে জরিমানা : এদিকে চসিকের স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট মনীষা মাহজনের নেতৃত্বে গতকাল বাকলিয়া এঙেস রোডে পরিচালিত অপর অভিযানে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালামাল ও নির্মাণ সামগ্রী রাস্তায় রেখে যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির দায়ে ১১ জনকে ৩১ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।