নগরীর গোয়ালপাড়া–তুলাতলী বস্তি উচ্ছেদের পর আবারও পূর্বের আদলে গড়ে তোলা হয়েছে বস্তির বাসা–বাড়ি ও দোকানপাট। রেলওয়ের বহু মূল্যবান এ জমির পরিমাণ প্রায় সাড়ে ৩ একর।
রেলওয়ের এস্টেট বিভাগ এবং বিদ্যুৎ বিভাগের বেশ কয়েকজন কর্মচারী জানান, সিআরবির সন্নিকটে রেলওয়ে হাসপাতাল কলোনি সংলগ্ন রেলের বিশাল জায়গা দখল করে প্রভাবশালীরা ‘গোয়ালপাড়া–তুলাতলী বস্তি’ গড়ে তুলেছে। এটি রেলওয়ের অনেক মূল্যবান জায়গা। রেলের এই বিশাল মূল্যবান জমি বছরের পর বছর অবৈধ দখলদারদের কাছ থেকে স্থায়ীভাবে উচ্ছেদে রেল কর্তৃপক্ষের কেন অনীহা তা নিয়ে প্রশ্ন রেলওয়ের কর্মচারীদের মাঝেও!
সরেজমিনে ‘গোয়ালপাড়া–তুলাতলী বস্তি’ এলাকায় গিয়ে জানা যায়, রেলের সাড়ে ৩ একর জমি জুড়ে ১২শ’ থেকে ১৩শ’ বস্তিঘর ও দোকাপাট গড়ে তুলেছে অবৈধ দখলদাররা। সরেজমিনে ঘুরে বিভিন্ন জনের সাথে কথা বলে গোয়ালপাড়া–তুলাতলী বস্তি সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, এই বস্তি এখন নগরীর মাদকের সবচেয়ে বড় সাম্রাজ্য। প্রশাসনের নাকের ডগায় দিনে–রাতে এখানে ইয়াবা এবং গাঁজা বিক্রি হয় বলে গোপন একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
এখানে পাহাড়ের ঢালুতে এবং গাছের আড়ালে বসে কিশোর–তরুণদের দিনের বেলায়ও মাদক সেবনের চিত্র স্বচক্ষে দেখা যায়। সন্ধ্যা পর থেকে রাতব্যাপী বস্তির অনেক ঘরে মাদক ক্রয়–বিক্রয়সহ জুয়ার আসর এবং সেবন কার্যক্রম চলে বলে স্থানীয় অনেকেই জানিয়েছেন।
রেলওয়ের ভূ–সম্পত্তি বিভাগ থেকে জানা গেছে, ২০২২ সালের ২০ ও ২১ মার্চ টানা দুইদিনের অভিযানে রেলওয়ের ভূ–সম্পত্তি বিভাগ নগরীর বহুল আলোচিত গোয়ালপাড়া–তুলাতলী বস্তির ১৪শ’ বস্তিঘর উচ্ছেদ করেছিল। উচ্ছেদের কিছুদিন পর থেকে আবার আগের মতই আস্তে আস্তে যার যার দখলকৃত জায়গায় গড়ে তোলা হয়েছে বস্তিঘর ও দোকান। অনেকে নিজেও থাকছেন আবার ভাড়া দিয়ে মাসে লাখ লাখ টাকা আয় করছেন। প্রায় বস্তির সামনে দোকান করে অনেকেই দোকানদারী করছেন আবার অনেকেই ভাড়া দিয়েছেন।
স্থানীয় বেশ কয়েকজন দোকানদারের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এখান থেকে রেলওয়ের কর্মচারীদের একটি সিন্ডিকেট মাসে মাসে টাকা নিয়ে থাকে।
এই ব্যাপারে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান ভূ–সম্পত্তি কর্মকর্তা মাহবুবউল করিম আজাদীকে বলেন, রেলের জমি থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদে আমরা নিয়মিত অভিযান করি। এখন অল্প অল্প করে উচ্ছেদ হচ্ছে; সামনে আরো বাড়বে। গোয়ালপাড়া তুলাতলী বস্তি উচ্ছেদে আমরা প্রোগ্রাম নিব। অনেক সময় উচ্ছেদের জন্য সব কিছু ঠিকঠাক করা হলেও ফোর্স না পাওয়ার কারণে করা সম্ভব হয় না। কিন্তু অবৈধ দখলদার উচ্ছেদে আমাদের অভিযান চলমান আছে। গোয়ালপাড়া তুলাতলী আমরা আগে একবার উচ্ছেদ করেছি; ওরা আবার বসে গেছে। সামনে আমরা আবার উচ্ছেদের উদ্যোগ নিবো।
গত দুইদিনে সরেজমিনে এই তিনটি বস্তি ঘুরে দেখা গেছে এই তিনটি বস্তি এলাকায় প্রায় সাড়ে ৪ হাজারের মত সেমিপাকা ও কাঁচা ঘর এবং দোকানসহ অন্যান্য বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে। এই বস্তিগুলো একেকটি নগরীর সিংহভাগ অপরাধ ও মাদকের রাজ্য। এখানে থাকার ঘরের পাশাপাশি গড়ে উঠেছে মুদির দোকান, চায়ের দোকান, বিউটি পার্লার, কোচিং সেন্টার, রিকশার গ্যারেজ, ষ্টোর রুম, স্থানীয়দের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অফিস। দিনেরাতে বসে জুয়ার আসর।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ভূ–সম্পত্তি কর্মকর্তার দপ্তর থেকে জানা গেছে, সিআরবির সবুজ পাহাড় আর প্রকৃতির কোলঘেঁষে বছরের পর বছর রেলের বিপুল পরিমাণ মূল্যবান জমি দখল করে আছে গোলায়পাড়া তুলাতলী বস্তি ও মালিপাড়া বস্তি।
সরেজমিনে এই দুইটি বস্তি এলাকা ঘুরে বিভিন্ন জনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, স্থানীয়দের পাশাপাশি এই বস্তিগুলোতে রেলের কর্মচারী–নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য এবং রেলের সাবেক কর্মচারী ও তাদের পরিবারের সদস্যরা দখল করে আছেন। তবে বেশ কিছু স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাবশালীও রয়েছেন।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালে গত ৭ মার্চ তুলাতলী এলাকায় বস্তিতে রেলের অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে গিয়ে স্থানীয় দখলদারদের হামলায় রেলের এক প্রকৌশলীসহ ৮ জন আহত হয়েছিলেন।