আছে শতেক প্রতারণার বেড়াজাল। ‘ঈদ ধান্ধা’য় অনেকেই সর্বস্বান্ত হচ্ছেন। ছিনতাইকারীরা ওঁত পেতে আছে সড়কের আনাচে কানাচে। আছে সালাম পার্টি, মলম পার্টি, থুথু পার্টি, ধাক্কা পার্টির সীমাহীন দৌরাত্ম্য। সক্রিয় রয়েছে পকেটমার চক্রের কয়েকশ সদস্য। মাঝেমধ্যে পুলিশের হাতে চক্রের কিছু সদস্য ধরা পড়লেও অধিকাংশই থাকে অধরা। যাদের আটক করা হয় তারা আইনের ফাঁক গলে বাইরে এসে আবারও একই কাজ করে। তবে এবার নগরে ১১১টি স্পট চিহ্নিত করে ছিনতাই প্রতিরোধে মাঠে নেমেছে পুলিশ। শুধু রমজানের সময় নয়, ঈদের ছুটিতেও তৎপর থাকে এসব অপরাধী চক্র। তাই রমজান মাস শুরু হওয়ার পর থেকে ঈদের ছুটিকালীন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে, তারা মাঠে সক্রিয় আছে। অপরাধীরা সুবিধা করতে পারবে না। তবে তারই ফাঁকে ঘটে যাচ্ছে ঘটনা।
সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় জানান, নিরাপত্তা ব্যবস্থা দুই পালায় ভাগ করে পর্যাপ্ত সংখ্যক মহিলা পুলিশ, সাদা পোশাকের পুলিশ, অন্যান্য পুলিশ বাহিনীর সদস্য, র্যাব ও এপিবিএন মাঠে নামানো হয়েছে। প্রতিটি মার্কেটে প্রথম রোজা থেকে ১৫ রোজা পর্যন্ত বেলা ২টা থেকে রাত ১২টা এক পালা এবং ১৬ রোজা থেকে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত সকাল ১১টা থেকে রাত ৮টা এবং ৮টা থেকে ভোর ৪টা পর্যন্ত দুই পালায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছে।
হরেক রকম পার্টির সমাহার : সালাম পার্টি, মলম পার্টি, থুথু পার্টি, ধাক্কা পার্টি–হরেক পার্টির সমাহার এ রমজান মাসে। তাদের প্রকৃত পরিচয় ছিনতাইকারী। এরা আগেও ছিল। তবে ঈদে–চাঁদে এদের তৎপরতা বেড়ে যায়। ঈদ সামনে রেখে পুলিশ মার্কেট, শপিং মলকেন্দ্রিক টহল ও সাদা পোশাকে অবস্থান বাড়ালেও তাদের দৌরাত্ম্য চলছে সমান তালে। সুযোগের অপেক্ষায় থাকে তারা।
নারী অপরাধীদের দৌরাত্ম্য : ঈদ সামনে রেখে নিত্যনতুন অপরাধ কর্মকাণ্ডে নারীদের অংশগ্রহণ তুলনামূলকভাবে বেড়েছে। নানা প্রলোভনে নতুন কৌশলে অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায় ও ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটাচ্ছে নারী অপরাধীরা। কখনো কখনো গায়ে পড়ে কারও সঙ্গে বিবাদ সৃষ্টি করছে, ‘কু’ প্রস্তাব দেওয়ার মিথ্যা কথা বলে পথেঘাটে জিম্মি করে টাকা আদায় করছে এ চক্রের সদস্যরা। চক্রগুলো রেলস্টেশন, সিআরবি, জিইসির মোড়, বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, ইপিজেড, পতেঙ্গাসহ বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। টার্গেট ব্যক্তিকে কৌশলে বাসা কিংবা নির্জন স্থানে নিয়ে টাকা–পয়সা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনাও ঘটছে। এ ধরনের কয়েকটি চক্র সাম্প্রতিক সময়ে ধরা পড়লেও তাদের দৌরাত্ম্য পুরোপুরি বন্ধ করা যাচ্ছে না।
পকেটমার, টার্গেট মোবাইল চুরি : বিভিন্ন মোড়ে এদের দাপট চোখে পড়ার মতো। বাস মোড়ে দাঁড়াতে না দাঁড়াতেই যাত্রী নামার হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। একই ভাবে কার আগে কে বাসে উঠবে তার তোড়জোড়ও চলে। এরই মাঝে হাত সাফাইয়ের কাজ করে এই চক্রটি।
টিনু সর্দার (ছদ্ম নাম) নগরে পকেটমার বা মোবাইল চুরির একটি চক্রের দলনেতা। মূলত লালদিঘীর পাড়–কোতোয়ালীর মোড়–নিউ মার্কেট মোড়– রেলস্টেশন হয়ে কদমতলী পর্যন্ত তার আস্তানা। সে জানায়, তার গ্রুপটি ১২ সদস্যের। চক্রের সর্দার হিসেবে সে মোট আয়ের (ছিনতাইকৃত অর্থের) ৩০ শতাংশ পায়। যারা সরাসরি পকেটমার বা মোবাইল চুরির সঙ্গে জড়িত তাদের বলা হয় কামলা বা কর্মী। এর পরের ধাপে আছে লোকাল সর্দার। তার উপরে আছে সর্দার বা বড় ভাই। প্রতিটি চক্রের সঙ্গে সম্পর্ক আছে কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির। এসব প্রভাবশালীর অনেকের আছে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা। এরাই মূলত ছিনতাইকৃত অর্থের বড় অংশটি (৪০ শতাংশ) পেয়ে থাকেন। চক্রের সঙ্গে প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশ থাকে। টিনু জানায়, সাধারণত দুই শিফটে তার গ্রুপ অভিযান চালায়। তবে ঈদ মৌসুমে কাজের চাপ বেশি থাকায় এ সময় ৩ শিফটে কাজ হয়।