‘আজ নূতন ঈদের চাঁদ উঠেছে নীল আকাশের গায়/ তোরা দেখবি কারা ভাই–বোনেরা আয়রে ছুটে আয়/ আহা কতই মধূর খুবসুরাৎ ঐ ঈদের চাঁদের মুখ/ ও ভাই তারও চেয়ে, মধুর যে ওর স্নিগ্ধ হাসিটুক/ যেন নবীর মুখের হাসি দেখি ওই হাসির আভায়।’
সারা বছর আকাশে চাঁদ ওঠে। কিন্তু কবি গোলাম মোস্তফার এমন উচ্ছ্বাস কেবল শাওয়াল মাসের চাঁদ নিয়ে। কারণ সূক্ষ্ম বুনন শাড়ির আঁচলের মত এ চাঁদ মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয় আনন্দের বার্তা। এ আনন্দ ঈদের, পবিত্র ঈদুল ফিতরের।
আজ সন্ধ্যায় সুনীল আকাশে চাঁদ খুঁজে বেড়াবে ছোট–বড় সবাই। চাঁদ দেখা গেলে আগামীকাল পালিত হবে পবিত্র ঈদুল ফিতর। আনন্দের হাওয়া ছড়িয়ে পড়বে সবখানে। উৎসবে শামিল হবে সবাই। ঘরে ঘরে বেজে উঠবে– ‘ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ, তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দিবি শোন আসমানি তাগিদ।’
মুসলিম উম্মাহর প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদ। বেহেস্তের আলোকবার্তা নিয়ে আসা ঈদকে বলা হয় ‘ইসলামী কৃষ্টি কালচারেরর অনন্য বহিঃপ্রকাশ’। ঈদ মানে খুশি, ঈদ মানে আনন্দ। এক মাসের সিয়াম সাধনার পর খুশি ও আনন্দের বার্তা নিয়ে হাজির হয় ঈদ। ছোট–বড়, ধনী–গরিব সকলে ভেদাভেদ ভুলে আনন্দ উৎসবে মেতে উঠে এদিন। সম্প্রীতির অনন্য মেলবন্ধন তৈরি হয় ঈদের মাধ্যমে। কবি সুফিয়া কামালের ভাষায়, ‘কাল ঈদগাহে ধনী–দরিদ্র মিলবে যে বুকে বুকে/ কাল ঈদগাহে ধনীর ধনের দীনও হবে ভাগীদার/ পুরাতে হইব কত দিবসের খালি অঞ্জলি তার।’ ঈদ শব্দের আরেক অর্থ বারবার ফিরে আসা। প্রীতি–প্রেম আর শান্তির পরশ এবং আনন্দের বার্তা নিয়ে ঈদ প্রতি বছর মুসলিম সমাজে বারবার ফিরে আসে বলেই এ উৎসবের অন্য নাম ঈদ। ঘরে ঘরে প্রথম রমজান থেকে শুরু হয় ঈদ উদযাপনের প্রস্তুতি। যা গতি পায় ১৫ রমজানের পর থেকে। ইসলাম ধর্মের সূচনালগ্ন থেকেই ঈদের দিন প্রত্যেকে নিজেকে উপস্থাপন করেন ভিন্নভাবে। সবাই নতুন পোশাক পরার চেষ্টা করেন। সেই প্রথম রমজান থেকে শপিংমলগুলোর ভিড় জানান দিচ্ছে এবারও ঈদের দিন নতুন কাপড়ে সাজবেন সবাই। এছাড়া ঈদের দিন ঘরে ঘরে তৈরি হয় বিশেষ ৫ম পৃষ্ঠার ৬ষ্ঠকলাম
খাবার। এবারও ব্যতিক্রম হবে না তার।
ঈদের আনন্দ কয়েকগুণ বেড়ে যায় প্রিয়জনের সাথে ভাগাভাগি করার মধ্য দিয়ে। তাই প্রিয়জনের সান্নিধ্য পেতে সবাই ছুটে যাচ্ছেন নিজ নিজ এলাকায়। তাই তো ট্রেন–বাস কিংবা লঞ্চ স্টেশনে গত কয়েকদিন ধরে ছিল ভীড়। ধারণা করা যায়, স্বজনদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে কয়েক লক্ষ লোক ইতোমধ্যে শহর ছেড়েছেন।
এদিকে পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণীতে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী দেশবাসী ও বিশ্বের সকল মুসলমানকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও ঈদ মোবারক জানান।
শুভেচ্ছা জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহীবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। এছাড়া চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দীন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এটিএম পেয়ারুল ইসলাম, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ, সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, সাবেক মন্ত্রী মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, সাবেক মেয়র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী, বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, নগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন, সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর নগরবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
ঈদ জামাত : চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের তত্ত্বাবধানে ঈদের প্রথম ও প্রধান জামাত সকাল ৮টা এবং দ্বিতীয় জামাত সকাল ৯টায় জমিয়াতুল ফালাহ জাতীয় মসজিদে অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম ও প্রধান জামাতে ইমামতি করবেন জমিয়াতুল ফালাহ জাতীয় মসজিদের খতিব হযরতুল আল্লামা সৈয়দ আবু তালেব মোহাম্মদ আলাউদ্দীন আল কাদেরী, দ্বিতীয় জামাতে ইমামতি করবেন জমিয়াতুল ফালাহ জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মৌলানা আহমদুল হক। লালদীঘি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন শাহী জামে মসজিদে ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৮ টায়। এছাড়া নগরে চসিকের তত্ত্বাবধানে সকাল ৮টায় ঈদ জামাতের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে যথাক্রমে হযরত শেখ ফরিদ (র.) চশমা ঈদগাহ মসজিদ, সুগন্ধা আবাসিক এলাকা জামে মসজিদ, চকবাজার সিটি কর্পোরেশন জামে মসজিদ, জহুর হকার্স মার্কেট জামে মসজিদ, দক্ষিণ খুলশী (ভিআইপি) আবাসিক এলাকা জামে মসজিদ, আরেফীন নগর কেন্দ্রীয় কবরস্থান জামে মসজিদ, সাগরিকা গরুবাজার জামে মসজিদ ও মা আয়েশা সিদ্দিকী চসিক জামে মসজিদ (সাগরিকা জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়াম সংলগ্ন)। পাশাপাশি চসিকের ৪১টি ওয়ার্ডে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলরগণের তত্ত্বাবধানে একটি করে প্রধান ঈদ জামাত স্ব স্ব মসজিদ অথবা ঈদগাহে অনুষ্ঠিত হবে।