ঈদের আনন্দ সবখানে

আজ সন্ধ্যায় আকাশের দিকে চোখ থাকবে মানুষের নগরে ঈদের প্রধান জামাত সকাল ৮টায়

মোরশেদ তালুকদার | মঙ্গলবার , ৯ এপ্রিল, ২০২৪ at ৪:৪৪ পূর্বাহ্ণ

চাঁদ উঠিয়াছে, ঈদের চাঁদ কি উঠেছে? শুধায় সবে।/ লাখো জনতার আঁখি থির আজি সুদূর সুনীল নভে।/এই ওঠে, ওই উদিল গগনে সুন্দর শিশু চাঁদ/ আমিন। আমিন। রাব্বুল আলামিন করে সবে মোনাজাত।’ আজ সন্ধ্যায় সুনীল নভে অর্থাৎ নীল আকাশে স্থির হয়ে থাকবে লাখো লাখো মানুষের চোখ। সবাই খোঁজে বেড়াবে নতুন চাঁদ। কবি সুফিয়া কামালের মত একের অপরের কাছে জিজ্ঞেস করবে, ‘চাঁদ উঠিয়াছে…’। মানুষের এমন উচ্ছ্বাসমাখা প্রশ্নের উত্তর দিতে বাদ মাগরিব বায়তুল মোকাররমে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সভাকক্ষে বৈঠকে বসবে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটি।

চাঁদ নিয়ে এত উচ্ছ্বাসের কারণ, চাঁদের হাসির মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয় প্রত্যাশার আলো, মনকে পরিশুদ্ধ করার আনন্দ। তাছাড়া পহেলা শাওয়ালের এই চাঁদ মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয় আনন্দের বার্তা। এ আনন্দ ঈদের, পবিত্র ঈদুল ফিতরের। আজ চাঁদ দেখা গেলে কাল বুধবার পালিত হবে পবিত্র ঈদুল ফিতর। অন্যথায় আগামী পরশু বৃহস্পতিবার। তবে আজ হোক বা কাল। চাঁদ দেখার সুসংবাদে ঘরে ঘরে বেজে ওঠবে ‘ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ, তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দিবি শোন আসমানি তাগিদ।’

দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর আসে ঈদ। ঈদ মানে আনন্দ। ঈদ মানে খুশি। মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের মহামিলনের এক পবিত্র মহা উৎসব এই ঈদ। ঈদের আনন্দ সবার হৃদয়ে ভুলিয়ে দিবে প্রীতিপ্রেম আর শান্তির পরশ, চোখে আনবে সমতা ও করুণার স্নিগ্ধতা। সারা বিশ্বে রচনা করবে প্রীতি ও মিলনের সম্মিলন। কবি আ. . ম বজলুর রশীদ এর ভাষায়, ‘ঈদ আসে হাসিখুশী তোমাদের আমাদের সকলের ঘরে/ অনেক আনন্দ নিয়ে কিছুক্ষণ ভুলে যাই দুঃখ জ্বালা যত/ আজ শুধু মেলামেশা অন্তরঙ্গ হয়ে থাকা।’ মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদ। দীর্ঘ এম মাস সিয়াম সাধনার পর আসে ঈদুল ফিতর। ঈদ শব্দের আরেক অর্থ বারবার ফিরে আসা। সাম্য প্রতিষ্ঠা ও আনন্দের বার্তা নিয়ে ঈদ প্রতি বছর মুসলিম সমাজে বারবার ফিরে আসে বলেই এ উৎসবের অন্য নাম ঈদ। এদিন ছোটবড়, ধনীগরিব সকলে ভেদাভেদ ভুলে মেতে ওঠবে আনন্দ উৎসবে। ঈদের আনন্দে ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে যায় সকল সংকীর্ণতা ও মলিনতা। এই দিনটি মানুষের মধ্যে সাম্য ও সমপ্রীতির মেলবন্ধন তৈরি করে। সামপ্রদায়িক সমপ্রীতি, ভ্রাতৃত্ববোধ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কের অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে পবিত্র ঈদুল ফিতর।

স্বর্গের আলোকবার্তা নিয়ে আসা ঈদকে বলা হয় ইসলামী কৃষ্টি কালচারের অনন্য বহিঃপ্রকাশ। সেই ইসলামের সূচনালগ্ন থেকেই ঈদকে ঘিরে মুসলমানদের ঘরে ঘরে থাকে নানা আয়োজন। প্রথম রমজান থেকে ঘরে ঘরে শুরু হয় ঈদ উদযাপনের প্রস্তুতি। যা গতি পায় ১৫ রমজানের পর। ঈদের দিন প্রত্যেকে নিজেকে উপস্থাপন করেন ভিন্নভাবে। সবাই নতুন পোশাক পরার চেষ্টা করেন। তাই তো প্রথম রমজান থেকে শপিংমলগুলোতে ছিল ভিড়। এছাড়া ঘরে ঘরে তৈরি হয় ঈদের বিশেষ খাবার। সেমাই, জর্দা, কোর্মা পোলাও ইত্যাদি। দ্র্যমূল্যের উর্ধ্বগতিসহ নানা নাগরিক সমস্যা, দুঃখদুর্বিপাকের মধ্যেও এবারও সবাই চেষ্টা করবেন ইসলামী ঐতিহ্য আঁকড়ে ধরতে।

ঈদের আনন্দ কয়েক গুণ বেড়ে যায় প্রিয়জনের সাথে ভাগাভাগি করার মধ্য দিয়ে। স্বজনদের সঙ্গে ভাগাভাগি করতে না পারলে সে আনন্দে পূর্ণতা আসে না। তাই ঈদের আনন্দ উদযাপনে সবাই ছুটছেন বাড়ি। আজও সরকারি অফিস খোলা। অনেকে অফিস শেষে, কেউ বা একটু আগেভাগে অফিস থেকে বের হয়ে ছুটবেন নিজ নিজ এলাকায়। এছাড়া ট্রেনবাস কিংবা লঞ্চ স্টেশনে গত কয়েকদিন ধরে ছিল ঘরমুখো মানুষের অস্বাভাবিক ভিড়। প্রতিবছর ঈদকে ঘিরে প্রায় ৫০ লক্ষ মানুষ শহর ছেড়ে চলে যায়। এবারও ব্যতিক্রম হবে না। এদিকে পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী প্রদান করেন। বাণীতে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী দেশবাসী ও বিশ্বের সকল মুসলমানকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও ঈদ মোবারক জানান।

এছাড়া শুভেচ্ছা জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, শিক্ষামন্ত্রী মহীবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়েশা খান, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরী, সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, আবদুচ ছালাম এমপি, চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এটিএম পেয়ারুল ইসলাম, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, সাবেক মন্ত্রী মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, সাবেক মেয়র মোহাম্মদ মনজুর আলম, বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, নগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন ও সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর নগরবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

ঈদ জামাত : চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) তত্ত্বাবধানে ঈদের প্রথম ও প্রধান জামাত সকাল ৮টা এবং দ্বিতীয় জামাত সকাল পৌনে ৯টায় জমিয়াতুল ফালাহ জাতীয় মসজিদে অনুষ্ঠিত হবে হবে চসিকের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। প্রথম ও প্রধান জামাতে ইমামতি করবেন জমিয়াতুল ফালাহ জাতীয় মসজিদের খতিব আল্লামা সৈয়দ আবু তালেব মোহাম্মদ আলাউদ্দীন আল কাদেরী, দ্বিতীয় জামাতে ইমামতি করবেন জমিয়াতুল ফালাহ জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম। লালদীঘি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন শাহী জামে মসজিদে ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৮ টায়। এছাড়া নগরে চসিকের তত্ত্বাবধানে সকাল ৮টায় ঈদ জামাতের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে যথাক্রমে হযরত শেখ ফরিদ (.) চশমা ঈদগাহ মসজিদ, সুগন্ধা আবাসিক এলাকা জামে মসজিদ, চকবাজার সিটি কর্পোরেশন জামে মসজিদ, জহুর হকার্স মার্কেট জামে মসজিদ, দক্ষিণ খুলশী (ভিআইপি) আবাসিক এলাকা জামে মসজিদ, আরেফীন নগর কেন্দ্রীয় কবরস্থান জামে মসজিদ, সাগরিকা গরুবাজার জামে মসজিদ ও মা আয়েশা সিদ্দিকী চসিক জামে মসজিদ (সাগরিকা জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়াম সংলগ্ন)। পাশাপাশি চসিকের ৪১টি ওয়ার্ডে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলরগণের তত্ত্বাবধানে একটি করে প্রধান ঈদ জামাত স্ব স্ব মসজিদ অথবা ঈদগাহে অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া কেন্দ্রীয় ঈদ জামাত কমিটির তত্ত্বাবধানে সকাল ৯ টায় এম এ আজিজ স্টডিয়াম সম্মুখ মাঠে অনুষ্ঠিত হবে। এতে ঈমামতি করবেন মাওলানা অধ্যক্ষ ড. সাইয়েদ মুহাম্মদ আবু নোমান।

চাঁদ দেখা কমিটির সভা আজ : হিজরি ১৪৪৫ সনের পবিত্র শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা এবং পবিত্র ঈদুল ফিতরের তারিখ নির্ধারণের লক্ষ্যে আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টায় (বাদ মাগরিব) বায়তুল মোকাররমে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সভাকক্ষে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির এক সভা অনুষ্ঠিত হবে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা শায়লা শারমিন স্বাক্ষরিত গতকাল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে একথা জানানো হয়েছে। সভায় সভাপতিত্ব করবেন ধর্ম মন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান এমপি।

বাংলাদেশের আকাশে কোথাও পবিত্র শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা গেলে তা টেলিফোন নম্বর : ০২২২৩৩৮১৭২৫, ০২৪১০৫০৯১২, ০২৪১০৫০৯১৬ ও ০২৪১০৫০৯১৭, ফ্যাঙ নম্বর : ০২২২৩৩৮৩৩৯৭ ও ০২৯৫৫৫৯৫১ অথবা সংশ্লিষ্ট জেলার জেলা প্রশাসক অথবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানানোর জন্য বিজ্ঞপ্তিতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমাহে রমজানের সওগাত
পরবর্তী নিবন্ধ১০ টাকার টিটেনাস দিয়ে বানানো হেপাবিগ ভ্যাকসিন বিক্রি হয় ৪৬০০ টাকায়