পবিত্র ঈদুল আজহায় ঘরমুখো মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে। ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক ও নির্বিঘ্ন করতে পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক ও হাইওয়ে পুলিশের প্রধান শাহাবুদ্দিন খান। তিনি বলেছেন, ‘এবারের ঈদে একটু ভিন্নমাত্রা আছে। এ সময় পশুবাহী গাড়ি বেশি চলাচল করে। মহাসড়ক সংলগ্ন ও অদূরে পশুর হাট থাকে। এ চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলায় পুলিশ মাঠে কাজ করছে। হাটের ইজারাদারসহ স্থানীয় প্রশাসন, জেলা প্রশাসন সকলে মিলে এবারও স্বস্তিদায়ক ঈদযাত্রা নিশ্চিত করতে আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে।’ গত ২২ জুন দুপুরে ঢাকা–টাঙ্গাইল মহাসড়ক ও বঙ্গবন্ধু সেতু পরিদর্শনকালে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন। শাহাবুদ্দিন খান বলেন, ‘ফিটনেসবিহীন ও মেয়াদ উত্তীর্ণ যানবাহন নিয়ে যে আমরা শুধু ঈদের আগে কাজ করি তা নয়। প্রতিনিয়ত এসব যানবাহন নিয়ে আমরা কাজ করে থাকি। প্রতিনিয়ত ফিটনেসবিহীন ও মেয়াদ উত্তীর্ণ যানবাহন ডাম্পিং করা হচ্ছে। গত মে মাসে এ রকম যানবাহনের বিরুদ্ধে ২৫ হাজার মামলা দেয়া হয়েছে। এছাড়া অনেক গাড়ি আটক করা হয়েছে। এসব ব্যবস্থার কারণে গত ঈদে এ যাবতকালের স্বস্তিদায়ক ঈদযাত্রা হয়েছে। যানজট ও নিরাপদ ঈদ আমরা উপহার দিতে পেরেছি।’ তিনি বলেন, ‘ফিটনেস ও রেজিস্ট্রেশনবিহীন গাড়ি ও লাইসেন্সসহ নানা অপরাধের বিরুদ্ধে কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ করা হচ্ছে। এ ধারাবাহিকতা বর্তমানেও অব্যাহত আছে। আশা করছি এর সুফল এবারও পাব।’ হাইওয়ে পুলিশ প্রধান বলেন, ‘তারপরও ভাল গাড়ি তাৎক্ষণিকভাবে বিকল হয়ে গেলে, সেগুলোর জন্য ব্যবস্থা নেয়া হবে। সব মহাসড়কের যানবাহন মেরামতে ওয়ার্কশপের মালিকদের নম্বর আমরা রেখেছি। বিকল হওয়া গাড়ি যাতে তাৎক্ষণিক চালু করা যায়, সে বিষয়েও আমাদের প্রচেষ্টা রয়েছে। যেসব যানবাহন চালু করা যাবে না, সেগুলো রেকার দিয়ে অপসারণ করা হবে।’
বলা জরুরি যে, ঈদযাত্রা নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন করা বাংলাদেশের জন্য অন্যতম চ্যালেঞ্জের বিষয়। নাড়ির টানে বাড়ির পানে ছুটতে থাকা লোকজনকে নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছানো বড় কঠিন হয়ে পড়েছে। ঈদযাত্রায় ঝুঁকি ও বিড়ম্বনার কিছু কারণ রয়েছে এবং প্রতি বছরই উৎসব উদযাপনে বাড়ি ফিরতে গিয়ে দুর্ঘটনায় মারা যায় বিপুলসংখ্যক মানুষ, আহত হয় অনেকে। এ ছাড়া অতিরিক্ত ভাড়া ও ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন ভোগান্তি–বিড়ম্বনার কারণ।
আমরা জানি, ঈদযাত্রায় মানুষ প্রধানত সড়ক ও নৌপথের ওপরই ভরসা করে। তাই সড়ককে নিরাপদ রাখা জরুরি। বিশেষজ্ঞরা বলেন, দেশে সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ চালকের অসতর্কতা, অসচেতনতা, বেপরোয়া বা অনিয়ন্ত্রিত গতিতে গাড়ি চালনা এবং ত্রুটিপূর্ণ সড়ক। ঈদের সময় অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহনের জন্য চালকরা বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালিয়ে থাকেন। যার ফলে দুর্ঘটনার ঘটনা বেড়ে যায়। এছাড়া ঈদের সময় পর্যাপ্ত বিশ্রাম না নিয়ে চালকরা অনেক সময় ক্লান্ত–পরিশ্রান্ত অবস্থায় গাড়ি চালিয়ে থাকেন। এটিও দুর্ঘটনার একটি কারণ। তাই চালকদের এ ব্যাপারে অধিক সচেতন হতে হবে। কোনো অবস্থাতেই অসুস্থ বা ক্লান্ত–পরিশ্রান্ত অবস্থায় গাড়ি চালানো যাবে না।
তাঁরা বলেন, সব মিলিয়ে ঈদযাত্রা একটা কঠিন যাত্রায় পরিণত হওয়ার আশংকা তৈরি হয় প্রতি বছর। তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে লাখ লাখ মানুষের ঈদযাত্রাকে নির্বিঘ্ন করতে প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সড়ক, নৌ ও রেলপথে যেহেতু অধিকাংশ মানুষ ভ্রমণ করে, সেক্ষেত্রে ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করার পাশাপাশি যাত্রীদের জীবনের নিরাপত্তার বিষয়টিকে সমানভাবে গুরুত্ব দিতে হবে। কেননা ঈদযাত্রায় অনেক সময় নানা দুর্ঘটনা ঘটে। লঞ্চডুবির ঘটনা প্রায়ই আমরা দেখতে পাই। সুতরাং অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করার ব্যাপারটিও গুরুত্বের সঙ্গে তদারকির প্রয়োজন। বিশেষ করে লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী না তোলা এবং ট্রেনের ছাদে যাতে কোনো যাত্রী ভ্রমণ করতে না পারে সে ব্যাপারটি নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি মহাসড়কগুলোর যানজট নিয়ন্ত্রণে হাইওয়ে পুলিশের সংখ্যা এবং তৎপরতা বাড়ানোকে অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনায় নেয়া জরুরি।