প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঈদে গ্রামের বাড়ি যাওয়ার জন্য মহামারির মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে ছোটাছুটি না করে যে যেখানে আছেন, সেখানে থেকেই উৎসব উদযাপনের আহ্বান জানিয়েছেন। গত রোববার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের প্লট বরাদ্দ অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান। শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি জানি, ঈদের সময় মানুষ পাগল হয়ে গ্রামে ছুটছে। কিন্তু এই যে আপনারা একসাথে যাচ্ছেন, এই চলার পথে ফেরিতে হোক, গাড়িতে হোক, যেখানে হোক- কার যে করোনাভাইরাস আছে আপনি জানেন না। কিন্তু আপনি সেটা বয়ে নিয়ে যাচ্ছেন আপনার পরিবারের কাছে।’ তিনি বলেন, ‘মা, বাবা, দাদা, দাদি, ভাই, বোন- যেই থাকুক, আপনি কিন্তু তাকেও সংক্রমিত করবেন। তার জীবনটাও মৃত্যুর ঝুঁকিতে ফেলে দেবেন।’
কিন্তু মানুষজন প্রধানমন্ত্রীর এ আহ্বান কতোটা মানবেন, তা নিয়ে আমরা দ্বিধান্বিত। কেননা, ঈদ উপলক্ষে সরকারি বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে বিকল্প ব্যবস্থায় রাজধানী ছাড়ছে প্রচুর মানুষ। উদ্বেগজনক হলো, ঘরমুখো মানুষের মধ্যে অনেকের মুখেই মাস্ক ছিল না; উপরন্তু সামাজিক দূরত্ব বা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার প্রবণতাও ছিল উপেক্ষিত। এর ফলে করোনা সংক্রমণের হার পুনরায় বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
এখানে উল্লেখ করতে পারি, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী আন্তঃজেলা পরিবহন বন্ধ। জেলাভিত্তিক বাস চলাচল শুরু হলেও বন্ধ রয়েছে দূরপাল্লার গণপরিবহন। কিন্তু প্রচুর মানুষ শহর ছাড়ছে বলে গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, ‘থেমে নেই মানুষের বাড়িফেরা। সরাসরি ভ্রমণের সুযোগ নস্যাৎ হওয়ায় মানুষ বরং এবার আগেভাগেই ঈদযাত্রা শুরু করেছে। দেখা গেছে, বিভিন্ন যানবাহনে ভেঙে ভেঙে বাড়ি ফিরছে সড়কপথের যাত্রীরা। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ নানা বাহনে করে ঘাটে পৌঁছার পর ফেরিতে গাদাগাদি করে নদী পাড়ি দিচ্ছে। বস্তুত অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, যাত্রীদের ভিড় সামলাতে না পেরে অনেক ফেরি কোনো যানবাহন না নিয়েই গন্তব্যে রওনা দিতে বাধ্য হয়েছে। এর ফলে ফেরিঘাটগুলোয় পণ্যবাহী ও ব্যক্তিগত যানবাহনের জট সৃষ্টির খবর পাওয়া গেছে। এ প্রেক্ষাপটে সরকারি সিদ্ধান্তের অসারতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। কেউ কেউ বলছেন, শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে দূরপাল্লার বাস ও ট্রেন চলাচলের অনুমতি দেওয়া হলে বরং পরিস্থিতি এর চেয়ে অনেক ঝুঁকিমুক্ত থাকত। ঈদের মতো সর্বজনীন উৎসবের আগে এ ধরনের সরকারি নির্দেশনা মানুষকে নিরস্ত করতে ব্যর্থ হওয়ায় সাধারণ মানুষের জীবনের ঝুঁকি ও অর্থ ব্যয় যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে ভোগান্তি।’
দেশে করোনাভাইরাসের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় এপ্রিল থেকে লকডাউনের বিধিনিষেধ জারি রেখেছে সরকার। এর মধ্যে দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকলেও ঈদে প্রিয়জনের কাছে ফেরার তীব্র আকাঙ্ক্ষা নিয়ে মানুষের শহর ছাড়া থেমে নেই। তারা ছুটছে গ্রামে নানাভাবে। ঢাকা থেকে বিভিন্ন ছোট যানবাহন, এমনকি পণ্যের ট্রাক বা পিকআপে চড়ে ভেঙে ভেঙে মানুষ ছুটছে উত্তর ও দক্ষিণের বিভিন্ন জেলায়। গাদাগাদি করে তাদের পদ্মা পার হওয়া ঠেকাতে দিনের বেলায় ফেরি বন্ধ রেখে এবং বিজিবি মোতায়েন করেও কাজ হচ্ছে না। মরিয়া এই যাত্রীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটা ঈদে কোথাও না গিয়ে নিজের ঘরে থাকতে কী ক্ষতিটা হয়? কাজেই আপনারা ছোটাছুটি না করে যে যেখানে আছেন, সে সেইখানে থাকেন। সেইখানে নিজের মতো করে ঈদটা উদযাপন করেন।’ দেশবাসীর উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনারা একটু ধৈর্য ধরেন, নিজের ভালো চিন্তা করেন। সাথে সাথে যার যার পরিবারের ভালোর চিন্তা করেন।’ সরকারের নানা পর্যায় থেকে ঈদযাত্রায় নিরুৎসাহিত করে বক্তব্য প্রদান ও অনুরোধ জানানো হয়েছে। করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত একটু ধৈর্য ধরার আহ্বান জানানো হয়েছে। কিন্তু মানুষ সেদিকে কোনো ভ্রূক্ষেপই করছে বলে মনে হয় না। নিজের ভালো যদি নিজেই চিন্তা না করে, তাহলে অবনতি কীভাবে রোধ করা যাবে? মুশকিল হলো, নিজে ক্ষতিগ্রস্ত হবে শুধু তা নয়, অন্যকেও ঝুঁকিতে রাখা হবে। সংকটকালে সুরক্ষা নিশ্চিত করা না গেলে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে- সেই আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।