ইয়াবা পাচার : সমন্বিতভাবে এগিয়ে আসতে হবে প্রতিরোধে

| মঙ্গলবার , ১৯ আগস্ট, ২০২৫ at ৯:১০ পূর্বাহ্ণ

ইয়াবার রাজত্ব হ্রাস পায়নি, বরং ক্ষেত্রবিশেষে বৃদ্ধি পেয়েছে। আগের মতোই ইয়াবা এখন নানা জায়গায় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। কেননা মাদকের নীল দংশন পুরো দেশকে গ্রাস করে ফেলছে। এ সব মাদকের মধ্যে বর্তমানে ইয়াবার চালান একেবারে অপ্রতিরোধ্য হয়ে পড়েছে। লাখে লাখে পাচার হচ্ছে এ ট্যাবলেট। কখনো বাসের চাকায়, কখনো বাইকের তেলের ট্যাংকে, কখনো বা সিএনজি টেক্সির সিলিন্ডারে করে যে যেভাবে পারছে সেভাবে পাচার করছে ইয়াবা। র‌্যাবপুলিশের অভিযানে ধরাও পড়ছে পাচারকারীরা। তবুও যেন থামানো যাচ্ছে না ইয়াবা পাচারকারীদের।

গত ১৬ আগস্ট দৈনিক আজাদীতে ‘উখিয়ায় ১৪ কোটি টাকার ইয়াবা ফেলে পালাল পাচারকারীরা’ শীর্ষক একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, কক্সবাজারের উখিয়ার মিয়ানমার সীমান্তবর্তী এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৪ লাখ ৮০ হাজার ইয়াবা উদ্ধার করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। তবে অভিযানে কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। গত বৃহস্পতিবার রাতে উখিয়ার পালংখালী সীমান্ত এলাকা থেকে ১৪ কোটি ৪০ লাখ টাকার এসব ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। বিজিবি জানায়, মাদক পাচারকারীরা পালংখালী সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে বিপুল পরিমাণ ইয়াবার একটি চালান নিয়ে আসছেএমন খবরের ভিত্তিতে রাতে পালংখালীর কাটাখাল এলাকায় অবস্থান নেয় উখিয়া ৬৪ বিজিবির একটি দল। রাত ৮টার দিকে বিজিবির সদস্যরা দেখতে পান ৭ জন ব্যক্তি মিয়ানমার থেকে মাছের ঘেরের সঙ্গে থাকা সরু রাস্তা বেয়ে বাংলাদেশের দিকে আসছে। একপর্যায়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঢোকার সময় বিজিবির সদস্যরা তাদের চ্যালেঞ্জ করেন। এ সময় চারটি কাপড়ের ব্যাগ ফেলে ওই ৭ ব্যক্তি পালিয়ে যায়।ইতোপূর্বে পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, প্রায় প্রতিদিনই লাখ লাখ ইয়াবা প্রবেশ করছে চট্টগ্রাম হয়ে সারা দেশে। মিয়ানমার থেকে প্রতি মাসে গড়ে ৩০ কোটি টাকার ইয়াবার চালান আসছে। এই হিসাব অনুযায়ী প্রতিবছর সাড়ে ৩শ কোটি টাকার ইয়াবার চালান আসছে। বাংলাদেশের বাজারকে টার্গেট করে মিয়ানমারের এ ইয়াবা কারখানাগুলোতে তৈরি হচ্ছে ১৩ ধরনের ইয়াবা। প্রতিমাসে এসব ইয়াবা ঢুকছে ২২টি রুট দিয়ে। দেশের কারাগারগুলোতে মোট আসামির ৭০ ভাগই মাদক মামলার। এদের বেশিরভাগই শুধু বাহক। মূল হোতারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে মাদক আমদানি করেই চলেছে। ইয়াবার উৎপত্তিস্থল মিয়ানমার থেকে নৌপথে প্রবেশ করতো ইয়াবা। এরপর চোরাচালানে নতুন সংযোজন হয় স্থলপথ ও পাহাড়। চট্টগ্রামের পার্বত্য অঞ্চলগুলোর গহীন অরণ্য হয়ে উঠে ইয়াবা পাচারের অভয়ারণ্য। পাহাড়ের দুর্গম পথ ধরে এসব ইয়াবা চলে যাচ্ছে চট্টগ্রামঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। তবে সবকিছুকে ছাপিয়ে যায় ইয়াবা পাচারে ব্যয়বহুল বেসরকারি হেলিকপ্টারের ব্যবহার। অনুসন্ধানে জানা গেছে, মিয়ানমার থেকে ইয়াবার চালান দেশে আনতে ও দেশের ভেতর বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে দিতে নিত্য নতুন কৌশল অবলম্বন করছেন কারবারিরা। এই কৌশলের অংশ হিসেবে শুধু নতুন রুটই না, নতুন নতুন মুখও ব্যবহার করা হচ্ছে।

অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, মাদক নিয়ন্ত্রণ করতে হলে গডফাদারদের ধরতে হবে। তাদের আইনের আওতায় এনে বিচার নিশ্চিত করতে হবে। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেখলে অন্য মাদক ব্যবসায়ীরা ব্যবসা ছেড়ে দেবে। তবে শুধু আইন প্রয়োগের মধ্য দিয়ে মাদকের বিস্তার রোধ সম্ভব নয়। মাদকের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। পারিবারিক বন্ধনকে দৃঢ় করতে হবে। মাদকের অপব্যবহার এবং কুফল সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। আইন প্রয়োগের পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি, মাদক প্রতিরোধ আন্দোলন, গণমাধ্যম এবং নাটকনাটিকার মাধ্যমে মাদকের কুফল নিয়ে ব্যাপক প্রচারণা চালাতে হবে। তাঁরা বলেন, এ মাদকের কারণে একটা প্রজন্ম ধ্বংস হতে পারে না। তাই সকলকে সমন্বিতভাবে তা প্রতিরোধে এগিয়ে আসতে হবে। মাদকের সহজলভ্যতা রোধ করতে না পারলে মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ফলপ্রসূ হবে না। মাদক প্রতিরোধে আইন প্রয়োগের পাশাপাশি পারিবারিক ও সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। সামাজিক বন্ধনকে আরও সুদৃঢ় করতে হবে। ইয়াবা পাচার বন্ধ করতে হলে সবার সহযোগিতা দরকার।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে