ইসরায়েলে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ঠিক ২৫ দিন পরে দেশটি থেকে প্রায় ১৪৫০ কিলোমিটার দূরে ইরানে প্রতিশোধমূলক হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। গতকাল শনিবার ইসরায়েলে স্থানীয় সময় রাত প্রায় ২টার দিকে ইরান থেকে বিস্ফোরণ ঘটার খবর আসতে শুরু করে, এতে দেশটিতে ইসরায়েল পাল্টা হামলা শুরু করেছে এমন ইঙ্গিত পরিষ্কার হতে থাকে।
এরপর থেকে পরবর্তী তিন ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে তিন ধাপে তীব্র হামলা চালানো হয়। ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর ডজন ডজন যুদ্ধবিমান ও আকাশযান ইরানের রাজধানী তেহরানে এবং পশ্চিমাঞ্চলীয় খুজেস্তান ও ইলাম প্রদেশে সামরিক কমপ্লেক্স, বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন কারখানা এবং স্থল থেকে স্থলে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র লঞ্চারগুলোকে লক্ষ্যস্থল করে। নিউ ইয়র্ক টাইমসের তথ্য অনুযায়ী, ২০ ভিন্ন ভিন্ন লক্ষ্যে আঘাত হানা হয়েছে। ইসরায়েলে সম্ভাব্য পাল্টা হামলা না চালাতে ইরানকে সতর্ক করেছে যুক্তরাষ্ট্র। খবর বিডিনিউজের।
ইরান জানিয়েছে, তাদের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সফলভাবে ইসরায়েলি হামলা প্রতিরোধ করতে পেরেছে, তারপরও দুই সেনা নিহত হয়েছেন এবং কিছু স্থানে ‘সীমিত ক্ষয়ক্ষতি’ হয়েছে। ইসরায়েলি হামলার ‘আনুপাতিক প্রতিক্রিয়া’ দেখানো হবে বলে ইরানের আধা স্বায়ত্তশাসিত একটি বার্তা সংস্থা জানিয়েছে।
তবে ইরানে হামলা সমাপ্তির ঘোষণা দিয়েছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। ইসরায়েলের সামরিক মুখপাত্র ড্যানিয়েল হ্যাগারি বলেছেন, গত কয়েক মাস ধরে ইরান যেসব হামলা চালিয়েছে তার জবাবে ইরানের সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানো হয়েছে। তিনি দাবি করেন, কয়েক দফায় এ হামলা চালানো হয়েছে এবং হামলা শেষে তার ভাষায় ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানগুলো নিরাপদে তাদের ঘাঁটিতে ফিরে গেছে।
প্রথম ধাপে রাত ২টায় তেহরানের পাশাপাশি সিরিয়া ও ইরাক থেকেও বিস্ফোরণের খবর আসে। এ সময় তিনটি দেশেরই আকাশপথ বন্ধ করে দেওয়া হয়। হামলার প্রথম ধাপে তিনটি দেশেরই বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে লক্ষ্যস্থল করা হয় বলে বিভিন্ন খবরে ইঙ্গিত দেওয়া হয়। ইসরায়েলি বিমান বাহিনী যেন কোনো বাধা ছাড়াই ইরানের লক্ষ্যস্থলগুলোতে হামলা চালাতে পারে সেটি নিশ্চিত করতেই প্রথম ধাপের হামলাগুলো চালানো হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে ঘটনার সময় পরিস্থিতি পরিষ্কার ছিল না। বিস্ফোরণের শব্দে তেহরানের আতঙ্কিত বাসিন্দারা রাস্তায় নেমে আসেন। ইরানের রাজধানীর বিমানবন্দরগুলোতে আঘাত হানা হচ্ছে বলে আশঙ্কা করছিলেন তারা।
স্থানীয় সময় প্রায় ৩টার দিকে ইসরায়েল জানায়, যেসব ঘটনা ঘটছে সে বিষয়ে তারা মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে ‘বিস্তারিত হালনাগাদ
তথ্য দিয়ে অবহিত করেছে’। এর প্রায় আধ ঘণ্টা পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় পেন্টাগন জানায়, ইরানে হামলার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র যুক্ত নয়, কিন্তু তাদের এ হামলার বিষয়ে জানানো হয়েছে।
ভোররাত ৪টার আগ পর্যন্ত ইরানের কোথায় ও কোন স্থাপনায় হামলা চালানো হচ্ছে, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো সে বিষয়ে অন্ধকারেই ছিল। আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থাগুলো খবর দেয়, সিরিয়া জানাচ্ছে ইসরায়েল তাদের দেশের কেন্দ্রস্থলে ও দক্ষিণাঞ্চলে সামরিক এলাকাগুলোতে বিমান হামলা চালাচ্ছে। এরপর ইরান থেকে আরেক ধাপের হামলার খবর আসতে শুরু করে। এ সময় ইরান তাদের আকাশে হামলা প্রতিরোধের চেষ্টা করছে এমন কিছু ফুটেজ গণমাধ্যমের হাতে আসে।
নিউ ইয়র্ক টাইমস জানায়, সর্বশেষ পর্যায়ের হামলা ভোর ৫টা বাজে শুরু করে প্রায় আধ ঘণ্টার মধ্যেই শেষ করা হয়। এ সময় ইরানের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্র, ইউএভি ও উৎক্ষেপণ স্থানগুলোতে হামলা চালানো হয়। ভোর ৬টায় আইডিএফ ঘোষণা করে, তাদের যুদ্ধবিমানগুলো ইরানের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও স্থল থেকে স্থলে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্রগুলোতে আঘাত হানার পর নিরাপদে ফিরে এসেছে। এ সময় তারা জানায়, ইরানে চালানো সামরিক অভিযানের নাম ‘অনুতাপের দিন’। আইডিএফের এ ঘোষণার প্রায় ২০ মিনিট পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় হোয়াইট হাউজের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে পুরোপুরি সমর্থন করে আর ইরানকে ইসরায়েলে পাল্টা হামলা না চালানোর জন্য সতর্ক করেছে। তবে ইসরায়েলের ধারণা, ইরান এ হামলারও জবাব দেবে।