ইম্পেরিয়াল হাসপাতালের সাড়ে ৮শ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

আই ইনফার্মারি ট্রেনিং কমপ্লেক্স ট্রাস্টের ম্যানেজিং ট্রাস্টি ডা. রবিউল হোসাইনের বিরুদ্ধে মামলা ।। ঘটনা ধামাচাপা দিতে ভুয়া সভা করে মিথ্যা রেজুলেশন তৈরিরও অভিযোগ

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ at ৫:৪৭ পূর্বাহ্ণ

ইম্পেরিয়াল হাসপাতালের ৮শ ৪৯ কোটি ৮৩ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে চিটাগাং আই ইনফার্মারি অ্যান্ড ট্রেনিং কমপ্লেক্স ট্রাস্টের (সিইআইটিসি) ম্যানেজিং ট্রাস্টি প্রফেসর ডা. রবিউল হোসাইনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। নগরীর খুলশী থানায় করা মামলায় অপর তিনজনসহ কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে পরস্পর যোগসাজশ করে বিপুল অংকের অর্থ আত্মসাৎ করার অভিযোগের পাশাপাশি ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার জন্য ভুয়া সভা করে মিথ্যা রেজুলেশন তৈরিসহ নানা ছলচাতুরীর আশ্রয় নেয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। সিইআইটিসির চেয়ারম্যান এম এ মালেক বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রফেসর রবিউল হোসাইন সিইআইটিসির ম্যানেজিং ট্রাস্টি হিসেবে ইম্পেরিয়েল হসপিটাল লিমিটেডের (আইএইচএল) চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। নিয়ম অনুযায়ী সিইআইটিসির আর্টিকেলস্‌ অব এসোসিয়েশন মতে, কোম্পানির বোর্ড অব ডিরেক্টর্সের ৫১% ডিরেক্টর্স চিটাগাং আই ইনফার্মারি অ্যান্ড ট্রেনিং কমপ্লেক্স ট্রাস্ট থেকে মনোনীতদের মধ্য থেকে নির্বাচিত হয় এবং সিইআইটিসি কর্তৃক মনোনীত ডিরেক্টর ইম্পেরিয়াল হসপিটাল লিমিটেডের বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে ২০০১ সাল থেকে গত বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ইম্পেরিয়াল হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করেন। দায়িত্ব পালনকালে নানা অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি এবং দুর্নীতির মাধ্যমে প্রফেসর রবিউল হোসাইন কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন। গত ২৩ নভেম্বর সিইআইটিসি ট্রাস্টি বোর্ডের ৮৭তম সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ওয়াহিদ মালেককে প্রফেসর রবিউল হোসাইনের স্থলাভিষিক্ত করে ইম্পেরিয়াল হসপিটাল লিমিটেডের ডিরেক্টর ও চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেয়া হয়। ওয়াহিদ মালেকসহ নতুন বোর্ড দায়িত্ব নেয়ার পর অনিয়মের চিত্রটি ধরা পড়ে। প্রফেসর ডা. রবিউল হোসাইন হসপিটালের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনকালীন অপর আসামিদের যোগসাজসে ইম্পেরিয়াল হাসপাতালে ৪৪৯ কোটি ৮৩ লাখ টাকা লোকসান দেখান এবং ৪০০ কোটি টাকার ব্যাংক দায় সৃষ্টি করেন। ইম্পেরিয়াল হসপিটালের চেয়ারম্যান, ম্যানেজিং ডিরেক্টর এবং অন্যান্য ডিরেক্টরগণসহ এই ব্যাপারে আইএইচএল দীর্ঘদিন কর্মরত থাকা প্রফেসর রবিউল হোসাইনের কাছে কৈফিয়ত ও হিসাব তলব করলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। বিপুল অংকের এই অর্থের গরমিল ধামাচাপা দেয়ার জন্য তিনি নানা অপকৌশলের আশ্রয় নিয়ে সিইআইটিসির বোর্ড সভার নামে গোঁজামিলের আশ্রয় নেন।

মামলার এজাহারে আরো উল্লেখ করা হয়, ট্রাস্টের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে ট্রাস্টের বোর্ড অব ট্রাস্টির সভা পরিচালিত হয়। প্রফেসর ডা. রবিউল হোসাইন ট্রাস্টের ম্যানেজিং ট্রাস্টি হিসেবে চেয়ারম্যানের অনুমতিক্রমে সভা আহ্বান করে থাকেন। গত ২১ ডিসেম্বর তিনি চেয়ারম্যাানের অনুমতিক্রমে সিইআইটিসি ট্রাস্টি বোর্ডের ৯০তম সভা আহ্বান করেন। সুনির্দিষ্ট এজেন্ডার ভিত্তিতে সভা আহ্বান করে তিনি ১১ ডিসেম্বর নোটিশ প্রদান করেন। উক্ত নোটিশে ছয়টি সুনির্দিষ্ট এজেন্ডা ছিল এবং সাত নম্বর এজেন্ডায় চেয়ারম্যানের অনুমতিক্রমে অন্যান্য বিষয়, যদি থাকে, অন্তর্ভুক্ত ছিল। নির্দিষ্ট দিনে সকাল ১০.৩০টায় সিইআইটিসি ট্রাস্টি বোর্ডের ৯০তম সভা প্রতিষ্ঠানের সম্মেলন কক্ষে ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান এম এ মালেকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। যথারীতি সুনির্দিষ্ট ছয় এজেন্ডার মধ্যে ১ম থেকে ৫ম এজেন্ডা পর্যন্ত বিস্তারিত আলোচনা শেষে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

৬ষ্ঠ এজেন্ডায় প্রফেসর ড. রবিউল হোসাইনের ইম্পেরিয়েল হসপিটাল লিমিটেডের বোর্ড থেকে পদত্যাগের বিষয় ধার্য ছিল। সভায় উক্ত এজেন্ডার ওপর আলোচনাকালে সভার সভাপতি তাকে মৌখিকভাবে বক্তব্য উপস্থাপন না করে লিখিতভাবে পদত্যাগপত্র দাখিল করার জন্য অনুরোধ করেন। এতে প্রফেসর ডা. রবিউল হোসেন মারমুখী আচরণ শুরু করেন। তিনি লিখিত পদত্যাগপত্র দাখিল না করার কারণে উক্ত এজেন্ডাটি পরবর্তী সময়ে আলোচনা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের কথা বলে সভাপতি সভা মুলতবি ঘোষণা করেন। বৈঠকের সভাপতি এম এ মালেক এবং অপর ৪ জন বোর্ড সদস্য ডা. কাজী মো. অহিদুল আলম, প্রফেসর ডা. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী এবং শওকত হোসেন এফসিএ মিটিং রুম ত্যাগ করে চলে আসেন।

এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, আশ্চর্যজনকভাবে কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে মাত্র ২ জন সদস্যকে নিয়ে প্রফেসর ডা. রবিউল হোসাইন পার্সোনাল রুমে মিথ্যা মিটিং চলমান দেখিয়ে নিয়ম বহির্ভূত ও অনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের অপচেষ্টা করেন। তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত যাবতীয় দুর্নীতি, অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও অপকর্ম থেকে নিজেকে দায়মুক্ত রাখার লক্ষ্যে অপরাপর আসামিদের নিয়ে পারস্পরিক যোগসাজসে দুরভিসন্ধিমূলক নানা প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডের আশ্রয় নেন।

ট্রাস্টের বিধিবদ্ধ চেয়ারম্যান কর্তৃক সভার কার্যক্রম মুলতবি করার পর তিনি সভার কার্যক্রম শুরু করতে পারেন না বলেও এজাহারে উল্লেখ করা হয়। মামলার অপর আসামিরা হচ্ছেন মো. মোস্তাফিজুর রহমান, মো. জাহাঙ্গীর আলম খান ও কাজী মো. অহিদুল আলম।

খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ মোহাম্মদ নেয়ামত উল্লাহ জানান, বিপুল অর্থ আত্মসাৎ এবং প্রতারণার অভিযোগে খুলশী থানায় মামলা হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধভাষা আন্দোলনের মূল শক্তি ছিল ছাত্রছাত্রীদের ঐক্য
পরবর্তী নিবন্ধধর্ষণ চেষ্টায় অভিযুক্ত চবি শিক্ষক চাকরিচ্যুত