বিশ্বকাপ এক রকম দরজায় কড়া নাড়ছে। বিশ্বকাপের আগে ফিফা আয়োজন করতো কনফেডারেশন্স কাপ। কিন্তু সেটি এখন বন্ধ। তাই নতুন উদ্যেগ হিসেবে ইউরোপ এবং লাতিন আমেরিকার চ্যাম্পিয়নদের নিয়ে আয়োজন করা হচ্ছে এক বিশেষ ম্যাচের। যার নাম দেওয়া হয়েছে ফিনালিস্িসমা । যার অর্থ চ্যাম্পিয়নদের চ্যাম্পিয়ন। আর সেই ম্যাচে বুধবার রাতে ইউরোপ সেরা ইতালিকে উড়িয়ে দিয়ে নিজেদের শ্রেষ্টত্ব প্রমাণ করেছে আর্জেন্টিনা। ইংল্যান্ডের ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে বছরখানেক আগে ইউরো জয়ের উৎসব করেছিল ইতালি। বুধবার রাতে সেই ওয়েম্বলিতেই লজ্জার চাদর জড়াতে হলো আর্জেন্টিনার কাছে ৩–০ গোলে হেরে। ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন ও কোপা আমেরিকা জয়ীর মধ্যে এমন ম্যাচের আয়োজন আগেও দুবার হয়েছে। ১৯৮৫ সালের প্রথম ম্যাচে উরুগুয়ের বিপক্ষে ফ্রান্স জিতেছিল ২–০ গোলে । আর ১৯৯৩ সালে দিয়েগো ম্যারাডোনার নেতৃত্বে ডেনমার্কের বিপক্ষে ১–১ গোলে ড্রয়ের পর টাইব্রেকারে জয়োল্লাস করেছিল আর্জেন্টিনা। গুরুর সে দেখানো পথে দারুনভাবেই হাটলেন লিওনেল মেসি।
কদিন আগে ফরাসি লিগের খেলা শেষ করে ইংল্যান্ড রওয়ানা হওয়ার আগে মেসি বলেছিলেন সমর্থকদের জন্য আরকেটি ট্রফি আনতে যাচ্ছি। শেষ পর্যন্ত নিজের কথা রাখলেন মেসি। মাঠে দুর্দান্ত এক মেসিকে দেখল ফুটবল বিশ্ব। গোল করতে না পারলেও দুটি গোল করিয়েছেন মেসি। খেলেছেন দারুন ফুটবল। গোলবারে নিয়েছিলেন একাধিক শট। কিন্তু মন্দভাগ্য তার গোল পাননি। তবে ঠিকই ট্রফিটা জিতে নিয়েছেন। গত বছর কোপা আমেরিকা কাপের ফাইনালের ২৪ ঘন্টা পর হয়েছিল ইউরো কাপের ফাইনাল। আর মে ফাইনালে জিতেছিল ইতালি। কিন্তু এরপর থেকে কেবলই পিছিয়েছে আজ্জুরিরা। যেতে পারেনি বিশ্বকাপের চুড়ান্ত পর্বে। অপরদিকে কোপা কাপ জয়েল পর থেকে কেবলই এগিয়েছে আর্জেন্টিনা। ২০১৯ সালের জুলাই থেকে কোনো ম্যাচ না হারা দলটি এই নিয়ে টানা ৩২ ম্যাচ অপরাজিত রইল। নিজেদের ইতিহাসে তাদের আগের রেকর্ড ছিল ৩১ ম্যাচের। ১৯৯১ থেকে ১৯৯৩ সালের মধ্যে এই রেকর্ড গড়েছিল আর্জেন্টিনা।
বিশ্বসেরা হওয়ার হাইভোল্টেজ এই ম্যাচটি ঢিমেতালে শুরু হলেও গতি মিলতে বেশি সময় লাগেনি। আক্রমণ–পাল্টা আক্রমণে জমে ওঠে ম্যাচ। খেলার ২৫ মিনিটে লিওনেল মেসির শট প্রতিহত হয়। পরক্ষণেই মেসির অসাধারণ নৈপুণ্যে দলকে এগিয়ে নেন মার্তিনেস। সতীর্থের পাস ধরে বাঁ দিক দিয়ে ডি–বঙে ঢুকে পড়েন মেসি। আরও খানিকটা এগিয়ে গোলমুখে বল বাড়ান মেসি। সেখানে ছোট্ট টোকায় বাকি কাজ সারেন মার্তিনেস। দুই মিনিট পর পাল্টা জবাব দেওয়ার সুযোগ পেয়েছিল ইতালি। কিন্তু নিকোলো বারেল্লা বঙের বাইরে থেকে শট নিলেও তা লক্ষ্যে থাকেনি। প্রথমার্ধের অতিরিক্ত সময়ে দ্বিতীয় গোল করে চালকের আসনে উঠে বসে আর্জেন্টিনা। মাঝমাঠ থেকে বল পেয়ে মার্তিনেস তা বাড়িয়ে দেন ডি মারিয়ার উদ্দেশ্যে। চোখের পলকে বঙে ঢুকে প্রথম ছোঁয়ায় চিপ শটে আগুয়ান গোলরক্ষকের ওপর দিয়ে বল জালে পাঠিয়ে দেন ডি মারিয়া।
দ্বিতীয়ার্ধেও আক্রমণের ধারা অব্যাহত ছিল আর্জেন্টিনার। ৬০ মিনিটে ডি মারিয়ার জোরালো শট গোলে ঢুকার মুহুর্তে রক্ষা করে ইতালি গোল রক্ষক। পরের মিনিটে মেসির কর্নার থেকে দারুন শট নিয়েছিলেন ডি মারিয়া। কিন্তু সেটিও রক্ষা করেন গোল রক্ষক। ৬৯ মিনিটে মেসিকে হতাশ করেন দোন্নারুম্মা। তার েেজারাল শট ডানদিকে ঝাঁপিয়ে ঠেকান ইতালি গোলরক্ষক। পরের ১০ মিনিটে আরও দুটি শট নেন মেসি। কিন্তু মেলেনি গোলের দেখা। অবশেষে ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধের অতিরিক্ত সময়ের চতুর্থ মিনিটে তৃতীয় গোলের দেখা পায় আর্জেন্টিনা। মাঝমাঠ থেকে আক্রমণে উঠে ডি–বঙের ঠিক বাইরে বলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন মেসি। কিন্তু বদলী দিবালা দারুন কোনাকোনি শটে বল পাঠান জালে। আর তাতেই ৩–০ গোলের জয় নিওয়ে উচ্ছাসে ভাসে আর্জেন্টিনা।