রাঙ্গুনিয়ার রোয়াজারহাট বাজারের পাশে ইছামতী খাল। এ খালে বছরের পর বছর ধরে বর্জ্য ফেলে আসছে রাঙ্গুনিয়া পৌরসভার ব্যবসায়ীরা। ফলে এ খাল আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। এতে পথচারী ও স্থানীয় বাসিন্দারা দুর্ভোগে পড়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এ অবস্থা চলে আসলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সমস্যা সমাধানে কোনও উদ্যোগ নেয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।
অন্যদিকে, আবর্জনার কারণে ইছামতী খালে পানির প্রবাহও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বিষাক্ত পানি আটকে গিয়ে বর্ষাকালে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করছে আর শুষ্ক মৌসুমে দুর্গন্ধ প্রকট হয়ে উঠছে। এবারের নির্বাচনসহ মোট চারবার রাঙ্গুনিয়া পৌর নির্বাচন হলেও আবর্জনার ভাগাড় নিয়ে সুষ্ঠু কোনও সমাধান হয়নি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রাঙ্গুনিয়া পৌর এলাকার একমাত্র বাজার রোয়াজারহাটে যেখানে সেখানে ময়লা ফেলার কারণে দুর্গন্ধে নাকাল এলাকার পরিবেশ। ময়লা আবর্জনা ফেলার নির্দিষ্ট কোনো জায়গা না থাকায় খোলা জায়গায় কিংবা দোকানের সামনে ফেলা হচ্ছে ময়লা। বাজারের অধিকাংশ ময়লা ফেলা হচ্ছে ইছামতি ও কুরমাই খালে। ময়লার দুর্গন্ধে দুর্বিষহ জীবন অতিবাহিত করছেন স্থানীয়রা।
রোয়াজারহাট বাজারে গিয়ে দেখা যায়, তিনজন সুইপার বাজারের ময়লা ভ্যান গাড়িতে রাখছে। জানতে চাইলে এক সুইপার বলেন, প্রতিদিন বাজারের ময়লা পরিষ্কার করা হয়। লোকজন ময়লা নির্দিষ্ট স্থানে রাখলে ময়লা পরিষ্কার করতে সুবিধা হয়। ময়লা ফেলার নির্দিষ্ট কোনো জায়গা না থাকায় এসব ময়লা পাশের ইছামতি নদীতে প্রতিদিন ফেলা হয়।
স্থানীয় বাজারের ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বাজারে দীর্ঘদিন ধরে কোনো ডাস্টবিন নেই। সমপ্রতি পৌরসভার পক্ষ থেকে একটি ডাস্টবিন স্থাপন করা হলেও সেটিরও বেহাল দশা। বছরের পর বছর বাজারের বর্জ্য অবাধে ফেলা হচ্ছে পাশের ইছামতী ও কুরমাই খালে। অবাধে বর্জ্য ফেলার ফলে ইছামতী নদী তার প্রকৃত রূপ হারাচ্ছে, নদী ভরাট হয়ে ছোট হয়ে আসছে। নদীর পানি দূষিত হয়ে নানা প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হচ্ছে। বাজারের বর্জ্যের কারণে ইতিমধ্যেই বিলুপ্ত হতে চলেছে কুরমাই খাল। খালের ওপর পাকা পিলার দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে দোকান ও ঘরবাড়ি। খালের ওপর বসানো হয়েছে খোলা টয়লেট। পানি নিষ্কাশনের জন্য নির্মিত ড্রেনেও আবর্জনা ফেলে ভরাট করে রাখা হয়েছে। সামান্য বৃষ্টিতে পানি উপচে রোয়াজারহাটের অলিগলি পানিতে তলিয়ে যায়। এতে জলাবদ্ধতা দেখা দেয় এবং জনদুর্ভোগ ব্যাপক আকার ধারণ করে।
আরফাত নামে বাজারের এক ব্যবসায়ী বলেন, পৌরসভার নিয়োজিত সুইপার বাজারের বর্জ্য পরিষ্কার করে তা আবার ফেলছে পাশের ইছামতি খালে। নদীতে অবাধে বর্জ্য ফেলার কারণে দূষিত হচ্ছে নদী, বর্জ্যের গন্ধে সৃষ্টি হচ্ছে জনদুর্ভোগ।
রোয়াজার হাট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাসেল চৌধুরী বলেন, বর্জ্য অপসারণসহ বাজারের বিভিন্ন বিষয়ে পৌরসভার মেয়রের সাথে আলোচনা করা হয়েছে। পৌরসভার মেগা প্রকল্পের সাথে ব্যবসায়ী সমিতির সমন্বিত উদ্যোগে এই বাজারের বর্জ্যমুক্তসহ যাবতীয় সমস্যার সমাধান করা হবে।
রাঙ্গুনিয়া পৌরসভার মেয়র মোহাম্মদ শাহজাহান সিকদার বলেন, বাজারের বর্জ্য নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনা স্বাভাবিক করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
পৌরসভার পক্ষ থেকে ডাস্টবিন, ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে। গণশৌচাগার নির্মাণের জন্য একটি ডাস্টবিন সরিয়ে নেয়া হয়েছে। প্রয়োজনে আরো ডাস্টবিন নির্মাণ করা হবে। পৌরসভার সুইপার প্রতিদিন বাজারের বর্জ্য অপসারণ করছে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা স্বাভাবিক করতে যেখানে সেখানে ময়লা ফেলা চলবেনা। পরিবেশ স্বাভাবিক রাখতে বাজারের ব্যবসায়ীদের আরো সচেতন হতে হবে।