বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটিয়ার মধ্যে একটি ভালো চুক্তি উভয়ের অধিকার সংরক্ষণে একটি রক্ষা কবচ। বাড়িওয়ালা চাইলে যখন তখন ভাড়াটিয়াকে উচ্ছেদ করতে পারেন না। এজন্যে ভাড়াটিয়া ব্যক্তি বা পরিবার হলে কমপক্ষে এক মাস, শিল্প প্রতিষ্ঠান হলে ৬ মাস অথবা চুক্তিতে উল্লেখিত মতে সময় দিতে হবে। বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটিয়ার মধ্যে চুক্তি যদি ১ বছরের হয় তাহলে সে চুক্তি রেজিস্ট্রি করা বাধ্যতামূলক নয়। কিন্তু ১ বছরের অধিক মেয়াদ হলে তার জন্য রেজিস্ট্রি আবশ্যক। রেজিস্ট্রি না হলে সম্পত্তি হস্তানান্তর আইনের ১০৭ ধারা লঙ্ঘিত হয়। আর এ কারণে ঐ চুক্তিপত্রটি সাক্ষ্য প্রমাণের জন্য গৃহীত হয় না। মনে রাখতে হবে উচ্ছেদের আদেশ দেবেন আদালত। চুক্তিপত্রের মেয়াদ বলবৎ থাকা অবস্থায়, ভাড়াটিয়া যদি চুক্তিপত্রের কোনও শর্ত লঙ্ঘন না করেন এবং নিয়মিত ভাড়া পরিশোধ করতে থাকেন তাহলে ভাড়াটিয়া উচ্ছেদ করা যায় না। বাড়িওয়ালার কোনোরূপ অন্যায় পদক্ষেপের বিরুদ্ধে ভাড়াটিয়াকে চুপ করে বসে থাকলে হবে না, তড়িৎ আইনের আশ্রয় নিতে হবে। বাড়িওয়ালা অন্যায়ভাবে ভাড়াটিয়াকে উচ্ছেদ করে দিলে, ঐ ভাড়াটিয়া পুনঃদখলের মামলার পর পুনঃদখল পেলেই চলবে না, বাড়িওয়ালার বিরুদ্ধে যথাযথ ক্ষতিপূরণের মামলাও করতে পারে। তবে চুক্তির মেয়াদ শেষে ভাড়াটিয়া বাড়ির দখল অবশ্যই বাড়িওয়ালাকে বুঝিয়ে দিতে বাধ্য, সেটা চুক্তিতে লেখা থাক বা না থাক, তাতে কিছু যায় আসে না। কেননা ভাড়াটিয়ার কোনও অধিকার নেই মেয়াদ শেষে বাড়ি দখল করে রাখার। চুক্তিতে এজন্য দৈনিক ক্ষতিপূরণ ধার্য করার বিধান রাখা যায়। চুক্তির মেয়াদ শেষে ভাড়াটিয়া অন্যথা করলেই তাকে আদালত কর্তৃক দণ্ডিত হতে হবে। ১৮ (১)Transfer of Property Act, ১৮৮২ (IV of ১৮৮২) অথবা Contract Act, ১৮৭২ (IX of ১৮৭২) এ যাই কিছু থাকুক না কেন, কোন ভাড়াটিয়া এ আইনের অধীন অনুমোদনযোগ্য ভাড়া যতদিন পর্যন্ত পূর্ণমাত্রায় আদায় করিবেন এবং ভাড়ার শর্তাদি পূরণ করবেন ততদিন পর্যন্ত বাড়ি–মালিকের অনুকূলে বাড়ির দখল পুনরুদ্ধারের জন্য কোনও আদেশ বা ডিক্রি প্রদান করা যাইবে না : তবে শর্ত থাকে যে, যে ক্ষেত্রে– (ক) ভাড়াটিয়া Transfer of Property Act, ১৮৮২ (IV of ১৮৮২) এর section 108 এর clause (m), clause (c) বা clause (p) এর বিধানের পরিপন্থী কোনও কাজ করেন; বা (খ) ভিন্নরূপ কোন চুক্তির অবর্তমানে, ভাড়াটিয়া, বাড়ি–মালিকের লিখিত সম্মতি ব্যতিরেকে, বাড়ি বা বাড়ির কোন অংশ উপ–ভাড়া দেন; বা (গ) ভাড়াটিয়া এমন আচরণের জন্য দোষী যা সংলগ্ন বা পার্শ্ববর্তী বাড়ির দখলকারীগণের নিকট উৎপাত বা বিরক্তি স্বরূপ; বা (ঘ) ভাড়াটিয়া, বাড়ির কোনও অংশ অর্থনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করেন বা ব্যবহার করতে অনুমতি দেন; বা (ঙ) বাড়ির নির্মাণ বা পুনঃনির্মাণের জন্য অথবা নিজ দখলের জন্য অথবা যার উপকারার্থে বাড়িটি রাখা হয়েছে তার দখলের জন্য বাড়িটি বাড়ি–মালিকের প্রকৃতই প্রয়োজন হয় অথবা বাড়ি–মালিক এমন কোনও কারণ দর্শাইতে পারেন যা আদালতের নিকট সন্তোষজনক বলে গণ্য হয়; সেক্ষেত্রে এ উপ–ধারার কিছুই প্রযোজ্য হবে না। (২) ভাড়ার মেয়াদ শেষ হয়েছে কিংবা বাড়ি–মালিকের স্বার্থ হস্তান্তরিত হয়েছে কেবলমাত্র এটাই উপ–ধারা (১)(ঙ) তে উল্লিখিত সন্তোষজনক কারণ বলে গণ্য হবে না যদি ভাড়াটিয়া এ আইনের অনুমোদনযোগ্য পূর্ণ ভাড়া প্রদানের প্রস্তুত এবং ইচ্ছুক থাকেন। (৩) যেক্ষেত্রে-(ক) কোন ভাড়াটিয়া বাড়ি–মালিকের সম্মতিক্রমে, বা উপ–ভাড়া দেয়ার সুস্পষ্ট অনুমতি সম্বলিত ভাড়া চুক্তি অনুসারে, কোনও বাড়ি বা এর কোনও অংশ ভাড়া দিয়ে থাকেন, অথবা (খ) কোনও ভাড়াটিয়া বাণিজ্য বা শিল্পের জন্য তৎকর্তৃক ব্যবহৃত বা প্রধানতঃ ব্যবহৃত কোনও বাড়ি বা এর কোনও অংশ উপ–ভাড়া দিয়ে থাকেন এবং উক্ত বাণিজ্য বা শিল্প প্রতিষ্ঠানটি উক্ত বাড়ি বা বাড়ির অংশসহ হস্তান্তর করেন; সেক্ষেত্রে উপ–ধারা (১)(ঙ) তে উল্লিখিত কোনও কারণে বাড়ি–মালিক কর্তৃক প্রাপ্ত আদালতের ডিক্রি বা আদেশ ব্যতীত অন্য কারণে উক্ত বাড়ি বা এর কোনও অংশে ভাড়াটিয়ার স্বার্থের আইনানুগ অবসান হলে, উপ–ভাড়াটিয়া উক্ত বাড়ি বা এর অংশের ভাড়াটিয়া বলে গণ্য হবেন এবং উপরিউক্তভাবে ভাড়াটিয়ার স্বার্থের অবসান না হলে তিনি যে শর্তাধীনে তার অধীন ভাড়াটিয়া থাকতেন সে শর্তাধীনে তিনি বাড়ি–মালিকের অধীন সরাসরি ভাড়াটিয়া থাকবেন : তবে শর্ত থাকে যে, বাড়ি–মালিক বা এ ধারার অধীন ভাড়াটিয়া বলে গণ্য কোন ব্যক্তি উক্ত বাড়ি বা এর অংশ সম্পর্কে মানসম্মত ভাড়া নির্ধারণের জন্য ধারা ১৫ এর অধীন নিয়ন্ত্রকের নিকট দরখাস্ত করতে পারবেন এবং অনুরূপ দরখাস্তের ভিত্তিতে নিয়ন্ত্রক কর্তৃক মানসম্মত ভাড়া নির্ধারিত না হওয়া পর্যন্ত উক্ত ব্যক্তি ভাড়াটিয়াকে তার স্বার্থ অবসানের পূর্বে যে ভাড়া দিতে বাধ্য ছিলেন সে ভাড়া বাড়ি–মালিককে দিতে বাধ্য থাকবেন; (৪) যেক্ষেত্রে নির্মাণ বা পুনঃনির্মাণ বা নিজ দখল বা যাঁহার উপকারার্থে বাড়িটি রাখা হয়েছে তার দখলের জন্য প্রকৃতই প্রয়োজন হওয়ায় বাড়ি–মালিক বাড়ির দখল পেয়েছেন কিন্তু বাড়ির প্রাক্তন ভাড়াটিয়া কর্তৃক বাড়ি খালি করার তারিখ হতে দু্থমাসের মধ্যে এর নির্মাণ বা পুনঃনির্মাণ শুরু করা হয় নি বা বাড়ি–মালিক বা উক্ত যে ব্যক্তির উপকারার্থে বাড়ি রাখা হয়েছে সে ব্যক্তি কর্তৃক এর ভোগ দখল করা হয় নি বা বাড়িটির দখল নেওয়ার পর দখল নেওয়ার তারিখ হতে ছয় মাসের মধ্যে প্রাক্তন ভাড়াটিয়া বাড়িতে অন্য কোনও ব্যক্তির নিকট বাড়িটি ভাড়া দেয়া হয়েছে সেক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক, প্রাক্তন ভাড়াটিয়া কর্তৃক বাড়ি খালি করার সাত মাসের মধ্যে তত্কর্তৃক পেশকৃত দরখাস্তের ভিত্তিতে বাড়িটি প্রাক্তন ভাড়াটিয়ার দখলে নেওয়ার জন্য অথবা তত্কর্তৃক নির্দ্ধারিত ক্ষতিপূরণ উক্ত ভাড়াটিয়াকে দেয়ার জন্য অথবা দখল বা ক্ষতিপূরণ উভয় দেয়ার জন্য বাড়ি–মালিককে নির্দেশ দিতে পারবেন। (৫) কোনও ভাড়াটিয়া কোনও বাড়ি সম্পর্কে এ ধারায় কোনও সুবিধা পাবার অধিকারী হবেন না যদি– (ক) তিনি ভাড়া চুক্তিতে নির্দিষ্ট তারিখের মধ্যে অথবা অনুরূপ কোনও চুক্তির অবর্তমানে ভাড়া মাসের পরবর্তী মাসের পনের দিনের মধ্যে, এ আইনের অধীন অনুমোদনযোগ্য তৎকর্তৃক প্রদেয় পূর্ণ ভাড়া পরিশোধ না করেন; অথবা (খ) ধারা ১৯ এ বিধৃত ক্ষেত্রে, তিনি উক্ত ধারায় উল্লিখিত সময়ের মধ্যে এর বিধান মোতাবেক ভাড়া জমা না করেন এবং উক্ত ধারার উপ–ধারা (১)(খ) এ বর্ণিত ক্ষেত্রে উক্ত উপ–ধারায় উল্লিখিত ভাড়া প্রেরণ খরচসহ জমা না করেন; (৬) এ ধারার উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, কোন বাড়ির ক্ষেত্রে এ আইনের অধীন অনুমোদনযোগ্য ভাড়া অর্থ– (ক) যেক্ষেত্রে উক্ত বাড়ি সম্পর্কে ধারা ১৫ এর অধীন নিয়ন্ত্রক কর্তৃক মানসম্মত ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে, নির্ধারিত মানসম্মত ভাড়া;(খ) যেক্ষেত্রে অনুরূপ মানসম্মত ভাড়া নির্ধারণ করা হয় নি, বাড়ি–মালিক এবং ভাড়াটিয়ার মধ্যে চুক্তিকৃত ভাড়া। আমাদের ঘরভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৯১ আইনটি প্রায় তিন যুগের প্রাচীন। আইনটি যুগোপযোগী ও কার্যকর করা দরকার। বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আদালতে মামলার জট এর কারণে বিচারপ্রার্থীদের ভোগান্তির শেষ নেই, চার্জকোর্ট দিয়ে এ আদালতগুলো চালানো হয়, এর নিজস্ব কোন অফিসার বা জজ নেই।
লেখক: আইনবিদ, কলামিস্ট, মানবাধিকার ও সুশাসন কর্মী।