ইচ্ছা করে ভোট মে বা জুনে নেব না : আইন উপদেষ্টা

‘অযথা কালক্ষেপণের বিন্দুমাত্র চেষ্টা আমাদের মধ্যে থাকবে না’

| বৃহস্পতিবার , ১৭ এপ্রিল, ২০২৫ at ৬:১৪ পূর্বাহ্ণ

ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন করার যে ধারণা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছ থেকে আসছে সে বিষয়ে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল আরও খোলাসা করে বলেছেন, এ সময়ের মধ্যে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সংসদ নির্বাচন হবে। গতকাল বুধবার প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনুসের সঙ্গে বিএনপির প্রতিনিধি দলের বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে এসে তিনি বলেন, ডিসেম্বর থেকে জুন মানে আমরা ইচ্ছা করে দেরি করে করে মে বা জুন মাসে নির্বাচন করব, সেটা না।

বৈঠকের পর ব্রিফিংয়ে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, আমাদের প্রধান উপদেষ্টা প্রথম থেকে বলেছেন, ডিসেম্বর থেকে জুন, আজকের আলোচনায় আমরা কয়েকটা বিষয় স্পষ্ট করেছি সেটা আপনাদের বলি, একটা হচ্ছে ডিসেম্বর থেকে জুন মানে আমরা ইচ্ছা করে দেরি করে করে মে বা জুন মাসে নির্বাচন করব, সেটা না। ডিসেম্বর থেকে জুন মানে হচ্ছে ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে যত দ্রুত তাড়াতাড়ি সম্ভব। যদি ডিসেম্বরে সম্ভব হয় ডিসেম্বরেই না হয় জানুয়ারিতে, আমরা এভাবে বলেছি যে ডিসেম্বর থেকে জুন মানে আমরা ইচ্ছা করে একটু বেশি সময়ে ক্ষমতা ভোগ করার জন্য, অকারণে আমরা একমাস বা দুই মাস বেশি ক্ষমতায় থাকলাম মোটেই সেটা না। ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে যত তাড়াতাড়ি সম্ভবডিসেম্বর থেকে জুন মানে হচ্ছে, ডিসেম্বর থেকে জুন। অযথা কালক্ষেপণের বিন্দু মাত্র চেষ্টা আমাদের মধ্যে থাকবে না।

আসিফ নজরুল বলেন, এখন উনারা (বিএনপি নেতারা) জানতে চেয়েছেন যে, সংস্কার যদি হয়ে যায় এতো দেরি করার মানে কি আছে? আমরা ব্যাখ্যা করে বুঝিয়েছি, জুলাই চাটার্ড প্রণীত হলেও প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা, নীতিগত ব্যবস্থা যেটি গ্রহণ করতে মাঝে মধ্যে সময় লাগে। যেমন একটা উদাহরণ দিয়ে বলেছি যে, ডিজিটাল সুরক্ষা আইনএটা ২৩ বার ড্রাফট করেছি বিভিন্ন অংশীজনের মতামত নেয়ার জন্য এবং বেশ কয়েক মাস সময় লেগেছে। সেজন্য আমরা বলেছি যে, আমরা তো পিন পয়েন্ট করতে পারব না। তিনি বলেন, জুলাই চার্টার প্রণীত হওয়ার পর, অতো দিনে হয়ে যাবেআমরা তো অংশীজনের সাথে কথা বলে ব্রড কনসালেটেশনের ভিত্তিতে করব।

বৈঠকের আগে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা নির্বাচনের রোডম্যাপসহ বিভিন্ন ইস্যুতে আমাদের বক্তব্য প্রধান উপদেষ্টাকে জানাব। এ বিষয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, নির্বাচনি রোডম্যাপ ঘোষণা করতে কত দিন লাগতে পারে সেটা নিয়ে তো আলোচনা হয়নি। এটা আমাদের প্রধান উপদেষ্টা সিদ্ধান্ত নেবেন। আপনারা একটা জিনিস জানেন, নির্বাচনের সিডিউলআগের নির্বাচনের যদি প্যাটার্ন দেখেন তাহলে সিডিউল ঘোষণা করার পর ৬০ দিন দিলেই হয়। সেই হিসেবে যখন আমরা নির্বাচন করব তার অন্তত দুই মাস আগে আমাদের রোডম্যাপটা ঘোষণা করতে হবে।

আসিফ নজরুল বলেন, এটা ব্যাপারে একটু খালি আপনার ভিন্নমত হতে পারেসেটা হচ্ছে, ওনারা যেটা বলেছেন যে, ডিসেম্বরের মধ্যেই ইলেকশন দিলে ভালো হয়। ওনারা বলেছেন যে, আমাদের কথাবার্তার মধ্যে এতো অস্পষ্টতা থাকেকেউ কেউ আমাদের কোনো কোনো উপদেষ্টার কথা বলেন। আমরা ক্যাটাগরিক্যালি বলেছি যে যেটাই বলুক না কেন, আমাদের প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে বারবার যেটা রিপিট করেছেন সেটাই সরকারের অবস্থান। অন্য কেউ যদি বেফাঁস কথা, নিজস্ব বিবেচনায় কথা বলেন সেটাতে তারা (বিএনপি) যেন বিভ্রান্ত না হন।

আসিফ নজরুল বলেন, আমাদের জনগণের তো একটা আকাঙ্খা আছে যে, আমরা বিচার করে যাই। আমরা যদি কোনো বিচার না করে যাই, আমরা যদি ইলেকশন দেই, আমরা মানুষের কাছে নিজের কাছে জবাব দিবো কীভাবে? ফলে শুধু ইলেকশন, সংস্কার, বিচার এবং আমাদের সরকারের গৃহীত কিছু পদক্ষেপের ওপর নির্ভর করে এজন্যই ডিসেম্বর থেকে জুন টাইম বারটা করা হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করার পর বিএনপি মহাসচিব অসন্তুষ্টির কথা বলেছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আসিফ নজরুল বলেন, বিএনপি মহাসচিবের এটা বলার অবশ্যই অধিকার আছে। একটা আলোচনার থেকে একজন একভাবে পারসিভ করে, আরেকজন আরেকভাবে পারসিভ করে। আমার কাছে ওনাদেরকে দেখে হ্যাপি লেগেছে। যখন আমাদের ডায়লগটা শেষ হয়েছে। মনে হয়েছে উনাদের মনে যে প্রশ্ন ছিল তার অনেকগুলো উত্তর ওনারা পেয়েছেন। আমার কাছে এটা মনে হয়েছে। ফখরুল ভাইয়ের কাছে অন্যরকম মনে হতে পারে।

বিএনপি বলেছে ডিসেম্বরে, প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। তাতে বিএনপির সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের দূরত্ব সৃষ্টি হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে আইন উপদেষ্টা বলেন, কোনো দূরত্ব তৈরি হয় নাই। আপনাদেরকে উত্তর দিলাম তো। ফখরুল ভাই আপনাদের বলেছেন যে, উনি সন্তুষ্ট না। আমাদের কাছে মনে হয়েছে যে, আমাদের অনেক ব্যাখ্যা ওনারা বুঝতে পেরেছেন। আমার কাছে মনে হয়েছে ওনারা সন্তুষ্ট। আসিফ নজরুল বলেন, ওনারা (ডিসেম্বরে নির্বাচন না হলে) যে সমস্ত আশঙ্কার কথা বলেছেন, আমরা আমাদের মত বলেছি যে, এই সমস্ত আশংকার কোনো কারণ নাই। এসব ব্যাপারে আমরা সচেতন আছি। আমরা অত্যন্ত রেসপেক্টফুলি ওনাদের মতামত বিবেচনায় নিয়েছি। আমরা এ ব্যাপারে আরও সচেতন থাকব।

শেখ হাসিনার মামলার বিচার বিলম্ব হচ্ছে, বৈঠকে বিএনপির তরফে এমন বক্তব্য এসেছে তুলে ধরে আসিফ নজরুল বলেন, আমরা এর আগে যে বিচার হয়েছে সেটা কম্পেয়ার করে দেখিয়েছি। বলেছি, যে কোনো রকম বিলম্ব করা হচ্ছে না। আমরা ওনাদের সব কিছু বুঝিয়ে বলার পর ওনারা আর কথা বলেননি। তার মানে ওনারা বুঝতে পেরেছেন। তারা আরেকটা ট্রাইব্যুনাল গঠন করার কথা বলেছেন। আমরা বলেছি যে, এটা অচিরেই হয়ে যাবে।

এক প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, উনারা ট্রাব্যুনালের সংখ্যা বাড়াতে বলেছেন। আমরা বাড়ানোর প্রক্রিয়া কমপক্ষে একমাস আগে থেকে শুরু করেছি। আমাদের তো উপযুক্ত বিচারপতি নিয়োগ করতে হবে, আমাদের লজিস্টিক ঠিক করতে হবে। এটা এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে হয়ে যাবে।

আসিফ নজরুল বলেন, দুই ঘণ্টা আলোচনা হয়েছেঅত্যন্ত খোলামেলা পরিবেশে আন্তরিকতার সাথে আলোচনা হয়েছে। তারা মন খুলে কথা বলেছেন। ওনারা বলেছেন, বিএনপি দেশে গত ১৫ বছর যাবত নিরবচ্ছিন্নভাবে নির্যাতিত হয়েছে। অবশ্যই এটার জন্য আমরা শ্রদ্ধাবোধ দেখিয়েছি।

তিনি বলেন, ওনারা বলেছেন যে আমাদের অন্তর্বর্তী সরকারের কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যেটা বিএনপির প্রতিকূলে গেছে। আমরা উদাহরণ দিয়েছি, সিদ্ধান্ত আছে যেটা বিএনপির অনুকূলে গেছে। তারপরও ওনারা বলেছেন যে, রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারে বিলম্ব হচ্ছে। আমরা বলেছি যে, পাবলিক প্রসিকিউটর অফিসপুরো সরকারি আইনজীবীদের অফিসটা পুনর্গঠন হয়েছে মাত্র তিন মাস আগে। এ সময়ে ৮ হাজারের মতো মামলা প্রত্যাহার হয়েছে, ১৬ হাজারের মতো মামলা লিস্টেড আছে। আমরা বলেছি যে, এতো দ্রুত গতিতে সম্ভব কিনা? ওনারা আমাদের বলেছেন, তারা বুঝতে পেরেছেন।

বৃহস্পতিবার (আজ) জাতীয় ঐকমত্য কমিশন বিএনপির সঙ্গে সংস্কার বিষয়ে সংলাপ করবে। তার আগে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দলটির প্রতিনিধি দলের বৈঠক হল। বৈঠকে বিএনপি সংস্কার প্রশ্নে ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবের বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে বলে তুলে ধরেন আইন উপদেষ্টা। আসিফ নজরুল বলেন, ওনারা (বিএনপি নেতা) বলেছেন যে, দলের যে সংস্কার ভাবনা এটা বহু পুরনো। ওনারা সবসময় সংস্কারপন্থি দল। আমরা এটা অ্যাগরি করেছি। অবশ্যই বিএনপি সবসময় সংস্কারের কথা বলেছে। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, জুলাই সনদ খুব দ্রুত গতিতে হয়ে যাবে। এ ব্যাপারে বিএনপিও তাদের আশ্বাস দিয়েছে। আমাদের কাছে মনে হয়েছে যে বিএনপি সংস্কারের ব্যাপারে অত্যন্ত আন্তরিক।

সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, ডেপুটি প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার ও অপূর্ব জাহাঙ্গীর উপস্থিত ছিলেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধটাইম ম্যাগাজিনের ১০০ প্রভাবশালীর তালিকায় ড. ইউনূস
পরবর্তী নিবন্ধআলোচনায় ‘সন্তুষ্ট নয়’ বিএনপি : ফখরুল