ইগনাৎস ফিলিপ জেমেলভাইস (১৮১৮–১৮৬৫)। তিনি একজন হাঙ্গেরীয় চিকিৎসক। শল্যচিকিৎসায় জীবাণুমুক্তকরণ পদ্ধতি অনুসরণের পথিকৃৎ হিসেবে তাঁকে ধরা হয়। ১৮১৮ সালে ১ জুলাই তিনি জন্মগ্রহণ করেন। ১৮৪৬ সালে ভিয়েনা হাসপাতালে প্রসূতি বিভাগের প্রধান হিসাবে তিনি কর্মরত ছিলেন। ১৮৫০ সাল নাগাদ ইউরোপে সন্তান জন্মদানের অবস্থা খুব একটা ভালো ছিল না। সেখানকার শিশু পরিচর্যার ক্লিনিকগুলোতে মাঝে মধ্যেই জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মা ও শিশুর মৃত্যু ঘটত। এই মৃত্যু যখন কোনো কিছুতেই থামানো যাচ্ছিল না। সে সময় ফিলিপ গবেষণা করে দেখলেন যে, ডাক্তারদের হাতে থেকে যাওয়া জীবাণু থেকেই শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে। অর্থাৎ ডাক্তারদের হাতেই জীবাণু অন্যত্র সংক্রমিত হচ্ছে। তিনি নির্দেশ দিলেন, ডাক্তারেরা যাতে ক্লোরিন দিয়ে ভালোমতো হাত এবং সার্জিক্যাল যন্ত্রপাতি ধুয়ে তারপর সন্তান প্রসব করান। এতে নাটকীয়ভাবে রোগীদের মৃত্যুহার কমে যায়। কয়েক দশক পরে, তাঁর ধারণাগুলি ‘জীবাণু তত্ত্ব’ অবদানের জন্য কৃতিত্ব পেয়েছিল। আধুনিক এন্টিসেপ্টিকের জনক জোসেফ লিস্টার ইগনাৎস ফিলিপ জেমেলভাইস সম্পর্কে বলেন ‘আমি তাঁর কৃতিত্বের প্রশংসা করি এবং এটি আমাকে আনন্দে ভরিয়ে দেয় যে, তাকে সম্মান জানাতে হয়।’ কিন্তু অন্যান্য ডাক্তারটা ইগনাৎসের বিরোধিতা শুরু করলেন। তাদের মনে হলো, যে ডাক্তারেরা জীবন বাঁচান, তারাই রোগ ছড়িয়ে রোগীদের মারছেন, এমনটা কিছুতেই হতে পারে না। ইগনাৎসের ধারণার বিপরীতে তীব্র প্রতিরোধ আসা শুরু করলো। ডাক্তার বলেই বসলেন, ‘কোনো ডাক্তার হাত ধুবে না’।‘ তাঁর হাত ধোয়ার পরামর্শে কান না দিয়ে তাঁকে নিয়ে হাসাহাসি করা শুরু করল সবাই। তার পরামর্শের কারণে তাঁকে চাকরিও হারাতে হয়। এই বৈপ্লবিক আবিষ্কারের মাত্র এক যুগের মাথায় ইগনাৎস পুরো হতাশায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়েন। প্রায়ই মাতাল হয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ডাক্তারদের ‘কসাই, জানোয়ার, অশিক্ষিত গণ্ডমূর্খের দল’ বলে গালাগালি শুরু করলেন। শেষ পর্যন্ত তাকে নিয়ে যাওয়া হয় এক মানসিক হাসপাতালে। আর সেই হাসপাতালেই তাঁর মৃত্যু হয়। দুঃখজনক হলেও সত্যি, তাঁর অসুস্থতা এবং মৃত্যু তার ডান হাতের একটি ক্ষত সংক্রমণের ফলে হয়েছিল, সম্ভবত অসুস্থ হওয়ার আগে তার করা অপারেশনের ফলস্বরূপ। তিনি সেই কারণেই মারা যান যার বিরুদ্ধে তিনি আজীবন সংগ্রাম করেছিলেন। ১৮৬৫ সালের ১৩ই আগস্ট তিনি মৃত্যুবরণ করেন।