দেশের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হলেও সন্দ্বীপে প্রায় তিন হাজার বছর ধরে জনবসতি রয়েছে। এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামও মুগ্ধ হয়েছিলেন। একসময় এখানে লবণশিল্প, জাহাজ নির্মাণ কারখানা ও বস্ত্রশিল্পের খ্যাতি বিশ্বব্যাপী ছিল। তুর্কি সাম্রাজ্যের সুলতান পর্যন্ত সন্দ্বীপে নির্মিত জাহাজের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে এখান থেকে বেশ কিছু জাহাজ সংগ্রহ করেছিলেন। বহির্বিশ্বের ভ্রমণতরী ও বাণিজ্যিক জাহাজও সন্দ্বীপে নোঙর ফেলত। সেই সুবাদে পুর্তগিজদের লোলুপ দৃষ্টি পড়ে সন্দ্বীপের ওপর। গড়ে তোলে নিজেদের উপনিবেশ অঞ্চল। এরপর ১৬১৫ সালে পুর্তগিজদের সঙ্গে আরাকান রাজ্যের যুদ্ধে ২০০ সৈন্যসহ পর্তুগিজ সেনাপতি ইমানুয়েল মার্তুস নিহত হলে তারা সন্দ্বীপ ছেড়ে গেলে, ১৬১৬ সালে মগরাজ সন্দ্বীপ দখলে নেয়। এরপর আরাকান ও মগদের প্রাধান্য থাকলেও তাদের পরাধীনতা অস্বীকার করে এ অঞ্চল প্রায় অর্ধশতাব্দী রাজত্ব করে দেলোয়ার খাঁ। বিখ্যাত পর্যটক ইবনে বতুতাসহ পৃথিবীর অনেক পর্যটক সন্দ্বীপের সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হয়ে এখানটাতে এসে মুগ্ধ হয়েছিলেন। তাতে কোনো সন্দেহই নেই। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখলেই তা বোঝা যায়। সৌন্দর্যের লীলাভূমি সন্দ্বীপে রয়েছে ইকু–ট্যুরিজমের অপার সম্ভাবনা। পশ্চিমে মেঘনা নদী আর পূর্বে সন্দ্বীপ চ্যানেলের উত্তাল ঢেউ। বৃত্তাকারের দীর্ঘ ৪১ কিলোমিটার সমুদ্রসৈকত আর পূর্বে গুপ্তছড়া ঘাটে আছে ম্যানগ্রোভ বন। প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য রয়েছে অপরূপ নিসর্গ। এখানকার প্রাকৃতিক স্থানগুলোকে ঘিরে পর্যটন শিল্পের অপার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। সন্দ্বীপের পশ্চিমে রহমতপুর পুরাতন স্টিমার ঘাট এলাকায় মেঘনা নদীর তীর জুড়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত স্থান প্রকৃতিপ্রেমীর আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে পারে। সন্দ্বীপে যেমন রয়েছে নৈসর্গিক রূপ, রয়েছে নানা রকম শাক–সবজি ও ফসলের ক্ষেত। মাঝ দরিয়ায় অপূর্ব সবুজের বেষ্টনি দর্শনার্থীর মন কেড়ে নেয়। নদীর বুকে অথৈ জলের মাঝে ছোট ছোট দ্বীপ–বন বাতাসের দোলায় কেঁপে ওঠে। এসব বনে পাখির মেলা। বক, চিল, মাছরাঙা, পানকৌড়ি, বালিহাঁস, ময়না, টিয়া, ঘুঘুসহ আরও কত রকমের পাখি রয়েছে! এখানে শীতকালে অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখর হয়ে ওঠে। জেলেদের সাথে পাল্লা দিয়ে পাখিরাও মাছ শিকার করে। দলবেঁধে পাখিদের ওড়াউড়ি মন কেড়ে নেয়।
চট্টগ্রাম শহর থেকে সড়কপথে কুমিরা–গুপ্তছড়া ঘাটে এসে স্পিড বোটে কয়েক মিনিটের পথ। সন্ধ্যার আগ মুহূর্তে আকাশের রংধনু নদীর বুক জুড়ে মিতালী গড়ে তোলে। মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখে প্রাণ জুড়ায়।