রাঙ্গুনিয়ার ইউসুফ আলী হত্যা মামলার ১২ আসামিকে খালাস দিয়েছেন আদালত। গতকাল চট্টগ্রামের বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ হালিম উল্লাহ চৌধুরী এ রায় ঘোষণা করেন। এ সময় ১২ আসামি কাঠগড়ায় হাজির ছিলেন। রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছেন, মামলাটি আষাঢ়ের গল্প, অবিশ্বাস্য কাহিনী। তদন্ত কর্মকর্তার দায় রয়েছে। তিনি (তদন্তকারী কর্মকর্তা খান নুরুল ইসলাম) পুলিশ বিভাগের কলঙ্ক। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।
খালাস পাওয়া ১২ আসামি হলেন, আজগর আলী, টিপু, মামুন, আলী আকবর, মাহবুবুল আলম, সাগর খান, মোমিন, আলমগীর, আয়ুব আলী খান, মোহসিনুল হক, আবু তালেব ও আবু বক্কর। এদের মধ্যে আজগর আলী প্রায় তিন বছর ধরে কারাগারে আছেন। অন্যরা জামিনে থাকলেও ঘটনার পর বিভিন্ন মেয়াদে কারাগারে ছিলেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অশোক কুমার দাশ আজাদীকে বলেন, আমরা মনে করছি, আমরা অপরাধ প্রমাণ করতে পেরেছি। ১৬ জন সাক্ষীর সবাই আদালতে একই বক্তব্য দিয়েছেন। কিন্তু আদালত মামলা সাজানো হয়েছে উল্লেখ করে সব আসামিকে খালাস দিয়েছেন। আমরা এতে আশাহত, মর্মাহত। বাদী উচ্চ আদালতে যেতে চাইলে আমরা সব রকম সহযোগিতা করব। ঘটনার তারিখে ভিকটিমকে মেরে নিথর করা হয়। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় মোটরসাইকেলে করে। আদালতের কথা হচ্ছে, তাকে ভ্যানে করে নিয়ে যাওয়ার কথা। মোটরসাইকেলে করে কেন! এ বিষয়ে আমাদের কথা হচ্ছে, ঘটনার সময় তাৎক্ষণিক যেটি পাওয়া গেছে সেটিতে করেই ভিকটিমকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তদন্ত কর্মকর্তা ভুল করলেও আসামি খালাস পায় না উল্লেখ করে অশোক দাশ বলেন, যিনি ভুল করেছেন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করলেই হয়। আসামি পক্ষের আইনজীবী উজ্জ্বল সরকার আজাদীকে বলেন, আনীত অপরাধ রাষ্ট্রপক্ষ প্রমাণ করতে পারেননি। এজাহার, চার্জশিট সব কিছু ত্রুটিপূর্ণ। সাক্ষীরাও সাজানো গল্প বলেছেন। মামলার কাহিনী অবিশ্বাস্য, আষাঢ়ের গল্প বলেছেন আদালত। তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ বাহিনীর কলঙ্কও বলেছেন আদালত।
উজ্জ্বল সরকার বলেন, ঘটনাস্থল হচ্ছে একটি রাস্তা। ভিকটিমকে যখন মারা হচ্ছিল তখন তার ১০–১২ জন আত্মীয় সেখানে ছিল। বাবা, মা’ও ছিল। অথচ তারা কোনো রকম প্রতিরোধ করেননি। ভিকটিমকে বাঁচানোর চেষ্টা করেননি। এটি অবিশ্বাস্য মনে হয়েছে আদালতের কাছে। তাই আষাঢ়ের গল্প বলেছেন আদালত। রক্তাক্ত অবস্থায় ভিকটিম পড়েছিল কিন্তু তাকে কেউ ছুঁয়ে দেখেননি বা জড়িয়েও ধরেননি। আদালতে দেওয়া সাক্ষ্যে স্বজনরা এসব বলেছেন। সন্তান রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকবে আর বাবা মা ছুঁয়ে দেখবেন না তা কী করে হয়! তিনি আরো বলেন, এটি একটি ফলস কেইচ। কে বা কারা মেরেছে, প্রকৃত কী কাহিনী রাষ্ট্রপক্ষ তা পরিষ্কার করতে সক্ষম হননি।
আদালত সূত্র জানায়, আসামিরা পরিকল্পিতভাবে স্বামী মো. ইউসুফ আলীকে ভারী অস্ত্র দিয়ে মারধর করে হত্যা করেছেন উল্লেখ করে ২০২২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন শাহিনুর আকতার শাহিন। মামলার এজাহারে তিনি বলেন, রাঙ্গুনিয়ার বগাবিলি ইছামতি ব্রিজের পশ্চিম–উত্তর পাশের রাস্তা এবং পাশের কলাবাগান এলাকায় প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে ভারী ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে ইউসুফকে গুরুতর আহত করা হয়। একপর্যায়ে হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এজাহারে আরো বলা হয়, ভিকটিমের ভাই এম আবু তৈয়ব দুই বারের মতো ইউপি মেম্বার নির্বাচিত হয়েছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ছিলেন আজগর আলী। পরাজয়কে ভালোভাবে নিতে পারেন নি তিনি। একপর্যায়ে তিনি প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে উঠেন এবং প্রথমে এম আবু তৈয়বের ওপর ও পরে ইউসুফের ওপর হামলা করা হয়। আদালত সূত্র জানায়, মামলাটি তদন্ত করে ২০২২ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন রাঙ্গুনিয়া থানার তৎকালিন পরিদর্শক (তদন্ত) খান নুরুল ইসলাম। পরের বছরের ১৪ আগস্ট আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জগঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন।