শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় সাজার রায়ের বিরুদ্ধে শান্তিতে নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসসহ গ্রামীণ টেলিকমের চার কর্মকর্তার আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করে তাদের জামিন বহাল রেখেছে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনাল। শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের বিচারক এম এ আউয়াল গতকাল রোববার ইউনূসসহ চারজনের আবেদনের শুনানি করে এ আদেশ দেন। শ্রম আদালতের রায়সহ মামলার নথি আগামী ৩ মার্চ আদালতে উপস্থাপনের তারিখ রাখেন তিনি।
ইউনূসের পাশাপাশি গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আশরাফুল হাসান এবং দুই পরিচালক নুরজাহান বেগম ও মো. শাহজাহানকে ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে এ মামলায়। আপিল শুনানি কবে শুরু হবে, আগামী ৩ মার্চ নথি উপস্থাপন হলে তা জানিয়ে দেবে আদালত।
ইউনূসের আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন বলেছেন, সাজার রায় থেকে খালাস চেয়ে ৩০টি যুক্তি তারা আপিলে তুলে ধরেছেন। আপিল করে জামিন চাইতে গতকাল বেলা পৌনে ১১টা কাকারাইলে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে হাজির হন ইউনূসসহ দণ্ডিত চারজন।
তাদের জামিন শুনানিতে আইনজীবী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, শ্রম আদালতের দেওয়া জামিনের অপব্যবহার করেননি দণ্ডিতগণ। তাদের প্রত্যেকের বয়স পঁচাত্তরের বেশি। এর মধ্যে ইউনুসের বয়স ৮৪ বছর। দণ্ডিত আসামি মিস্টার শাহজাহান পক্ষাঘাতগ্রস্ত। তিনি হাঁটতে পারেন না। এই দুজনের পক্ষে সরাসরি আদালতে হাজিরা মওকুফ করে ২০৫ ধারায় আইনজীবীর মাধ্যমে হাজির হওয়ার আবেদন মঞ্জুর করা ছিল। তারপরও নিয়ম অনুযায়ী আর্গুমেন্ট এবং রায়ের দিন তারা সশরীরে হাজির ছিলেন।
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান এ সময় ওকালতনামাসহ কথা বলতে চাইলে বিচারক তাকে প্রশ্ন করেন, আইন কি বলে? আপিলটি শুনানির জন্য গ্রহণের (অ্যাডমিশন) আগে কি আপনি কথা বলতে পারেন?
খুরশীদ বলেন, ছোট্ট একটা বিষয়। বিচারক বলেন, আগে গ্রহণযোগ্যতার শুনানি হোক, পরে আপনি কথা বলার অধিকার রাখেন। এর আগে নয়।
পরে বিচারক আপিল সম্পর্কে আইনজীবী মামুনের কথ শোনেন এবং জামিন মঞ্জুর করে আপিলটি শুনানির জন্য গ্রহণ করে নিম্ন আদালতের নথি তলব করেন।
শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় সাজার রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার জন্য গতকাল ঢাকার শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে হাজির হন নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূস। গত ১ জানুয়ারি এই মামলায় চারজনকে ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতের বিচারক শেখ মেরিনা সুলতানা। তবে আপিলের শর্তে সেদিনই সাজাপ্রাপ্তদের এক মাসের জামিন দেওয়ায় কাউকে কারাগারে যেতে হয়নি। ১১ জানুয়ারি ৮৪ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হলে আপিলর প্রক্রিয়া শুরু করেন ইউনূসের আইনজীবীরা।
মামলাটা করল কে, প্রশ্ন ইউনূসের : শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে দণ্ডিত নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূস প্রশ্ন তুলেছেন, তার বিরুদ্ধে ওই মামলার বাদী আসলে কে, শ্রমিকরা, নাকি সরকার? তিনি বলেছেন, আমার দিক থেকে একটা বিষয় স্পষ্ট করা দরকার। সরকার বারবার বলতেছে, সকল পর্যায়ে থেকে বলতেছে, এই মামলা সরকার করেনি। কিন্তু আপনারা তো (সাংবাদিক) সাক্ষী। আপনারা তো কোনো কিছু বলছেন না। এটা কি সরকার করল, নাকি শ্রমিক করল? এ জবাবটা আমাকে দেন।
ইউনূস নিজেই উত্তর দেন, এটা কলকারখানা অধিদপ্তর, সরকারের অধিদপ্তর করেছে। শ্রমিকেরা করে নাই। শ্রমিকেরা এর কিছুর মধ্যে নাই। ওই রায়ের বিরুদ্ধে গতকাল শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে আপিল করে সাংবাদিকদের সামনে বক্তব্য দিচ্ছিলেন ইউনূস।
তিনি বলেন, গ্রামীণ ব্যাংক ছিল আমাদের একটা স্বপ্ন। আমরা পৃথিবীকে বদলাতে চাই। দারিদ্র্যকে মুছে ফেলতে চাই। এটাই ছিল আমাদের স্বপ্ন। যে স্বপ্ন বাস্তবায়নে আমরা পেছনে লেগেছিলাম। কিন্তু যারা এই স্বপ্ন বাস্তবায়নের সঙ্গে ছিলেন, তাদেরও মামলার আসামি করা হয়েছে।
এজলাস থেকে বের হয়ে ইউনূস সাংবাদিকদের সামনে অন্য আসামিদের সঙ্গে গ্রামীণ ব্যাংকের সম্পর্কের কথা তুলে ধরেন। তার ভাষ্য, এ মামলার আসামি নূরজাহান বেগমের হাত দিয়েই জোবরা গ্রামে গ্রামীণ ব্যাংক শুরু হয়। মোহাম্মদ শাহজাহানও গ্রামীণ ব্যাংকের গোড়া থেকে সঙ্গে আছেন। আশরাফুল হাসান বুয়েট থেকে পাস করে যোগ দিয়েছিলেন গ্রামীণ ব্যাংকে।
ইউনূসের আইনজীবী আবদুল্লাহ আল–মামুনও মামলার বাদী নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে কলকারখানা অধিদপ্তরের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান সাংবাদিকদের বলেন, সরকারের মামলা হলে অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিস থাকত অথবা পাবলিক প্রসিকিউটর অফিস থাকত। আমি একজন বেসরকারি আইনজীবী। উনারা বেসরকারিভাবে আমাকে হাই কোর্টে এনগেজ করেছিলেন, বিচারকি আদালতে করেছিলেন, এখানেও করেছেন। কলকারখানা প্রতিষ্ঠান নিজেই মামলা পরিচালনা করে।