ইউনাইটেড মেডিকেলের বিরুদ্ধে আয়ানের বাবার মামলা

খতনার সময় মৃত্যু

| বুধবার , ১০ জানুয়ারি, ২০২৪ at ৯:১০ পূর্বাহ্ণ

খতনার জন্য অজ্ঞান করা শিশু আয়ান আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় ঢাকার ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হসপিটালের দুই চিকিৎসকসহ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করেছে শিশুটির পরিবার। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে বাড্ডা থানায় আয়ানের বাবা শামীম আহামেদ মামলাটি করেন বলে জানিয়েছেন ওসি ইয়াসিন গাজী। তিনি বলেন, শিশুটির মৃত্যুর অভিযোগ এনে হাসপাতালের দুই চিকিৎসক এবং অজ্ঞাতনামা পরিচালকসহ কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে। অভিযোগ পেয়ে আমরা মামলাটি নিয়েছি। মামলায় ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অবেদনবিদ (অ্যানেস্থেসিওলজিস্ট) সাইদ সাব্বির আহমেদ, সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক তাসনুভা মাহজাবিনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া সাঁতারকুল এলাকার ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হসপিটাল এবং গুলশানের ইউনাইটেড হসপিটালের অজ্ঞাতনামা পরিচালক, ডাক্তার ও কর্মকর্তাকর্মচারীদের আসামি করা হয়েছে। খবর বিডিনিউজের।

এজাহারে বলা হয়েছে, খতনা করানোর জন্য পাঁচ বছর বয়সী আয়ানকে গত ৩১ ডিসেম্বর সাঁতারকুল এলাকার ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হসপিটালে নেওয়া হয়। সেখানে সকাল ৯টায় শিশুটিকে অস্ত্রোপচার কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। আয়ানের স্বজনদের ২০২৫ মিনিট অপেক্ষা করতে বলা হয়। এর ঘণ্টা খানেক বাদে আরো চিকিৎসক উদ্বেগ নিয়ে অস্ত্রোপচার কক্ষে প্রবেশ ও বের হতে থাকে দাবি করে মামলায় বলা হয়, তখন বাদী ও পরিবারের সদস্যরা অস্ত্রোপচার কক্ষে প্রবেশ করে দেখেন, আয়ানের জ্ঞান ফেরেনি। চিকিৎসকরা তার বুকে চাপ দিচ্ছেন।

শিশুটির বাবা এজাহারে বলেছেন, একপর্যায়ে আয়ানকে ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হসপিটাল থেকে গুলশানের ইউনাইটেড হসপিটালে নেয় কর্তৃপক্ষ। সেখানকার আইসিউইতে রাখা হয় শিশুটিকে। আয়ানের পরিবার তাকে অন্য হাসপাতালে নিতে চাইলেও ইউনাইটেড হসপিটাল কর্তৃপক্ষ তা করতে দেয়নি।

মামলায় বলা হয়, এক সপ্তাহ বাদে রোববার রাত ১১টা ২০ মিনিটে আয়ানকে মৃত ঘোষণা করে ইউনাইটেড হসপিটাল। এরপর চিকিৎসা বাবদ পৌনে ছয় লাখ টাকার বিল ধরিয়ে দেওয়া হয়। তখন শামীম বিষয়টি ফোন করে বাড্ডা থানাকে জানান। পুলিশ গিয়ে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য আয়ানের মৃতদেহ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।

চিকিৎসকদের অবহেলায় আয়ানের মৃত্যু হয়েছে বলে মনে করছে তার পরিবার। আয়ানের বাবা শামীম আহামেদ মঙ্গলবার বলেন, আমাদের অনুমতি ছাড়া আমার ছেলেকে পুরোপুরি অজ্ঞান করা হয়েছে। এছাড়া তার চিকিৎসায় অবহেলা করেছেন চিকিৎসকরা। এজন্য আমরা তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছি।

শিশু আয়ানের মৃত্যুতে ক্ষতিপূরণ চেয়ে এদিনই রিট করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এ বি এম শাহজাহান আকন্দ মাসুম। জনস্বার্থে করা এই আবেদনে শিশুটির পরিবারকে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি করা হয়েছে। আয়ানের মৃত্যুর ঘটনা আমলে নিয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন বলেছে, চিকিৎসকের অবহেলা বা ভুল চিকিৎসার কারণে কারও মৃত্যু বা অন্য কোনো ধরনের ক্ষতি মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এ ঘটনার তদন্ত করে আগামী ১২ ডিসেম্বরের মধ্যে কমিশনে প্রতিবেদন দিতে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিবকে নির্দেশ দিয়েছে মানবাধিকার কমিশন।

শিশু আয়ানের মৃত্যুর পর সোমবার চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। কমিটিতে আগামী ১০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। জানতে চাইলে ইউনাইটেড হসপিটালের পাবলিক রিলেশন্স ম্যানেজার আরিফুল হক মঙ্গলবার রাতে বলেন, মামলার বিষয়টি আমরা কিছুক্ষণ আগেই জেনেছি। আমাদের আইন বিভাগ থেকে প্রয়োজনীয় যা কিছু করা প্রয়োজন করব। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আমরা অবশ্যই এ বিষয়ে সহযোগিতা করব।

পূর্ববর্তী নিবন্ধস্বতন্ত্ররা জোট করলে বিরোধী দল হতে পারবে না জাপা
পরবর্তী নিবন্ধসাতকানিয়ায় অকটেনের আগুনে দগ্ধ যুবকের মৃত্যু