ইউএসটিসির বহুতল ভবন ভাঙার কাজ বন্ধের দাবি

এ ঘটনায় আমি কেঁদেছি : উপাচার্য শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ১২ মার্চ, ২০২১ at ৫:৪৬ পূর্বাহ্ণ

খালের জমি উদ্ধারে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চলমান উচ্ছেদ অভিযানের অংশ হিসেবে বেসরকারি ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি চট্টগ্রাম (ইউএসটিসি)’র বহুতল ভবন ভাঙার কাজ বন্ধের দাবি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। গতকাল চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়। এতে ইউএসটিসি’র উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন এ ধ্বংসযজ্ঞ যেন বন্ধ করা হয়। এর পেছনে হয়ত কোনো চক্র আছে। আপনি নির্দেশ দিন, এটা বন্ধ করুন।
এটা ভেঙে কার লাভ হল? ডিজিটাল সার্ভে করে আমাদের জমি দেয়া হয়। আগে কখনো বলেনি এখানে গয়না ছড়া খাল আছে। সিডিএ’র অনুমোদিত ভবনের নকশাতেও খালের কোনো চিহ্ন ছিল না। এক প্রশ্নের জবাবে উপাচার্য বলেন- ভবন নির্মাণে নিয়মের ব্যত্যয় হলে সিডিএ’র আইন মতে জরিমানা করতে পারত। ইউএসটিসির বহুতল একাডেমিক ভবনটির একাংশ গয়না ছড়া খালের জমিতে নির্মিত দাবি করে ভবনের একাংশ ভাঙার কাজ গত বুধবার সকালে শুরু করে সিডিএ’র জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। তবে ভবন ভাঙার কাজ শুরুর আগে কোন ধরনের নোটিশ দেয়া হয়নি বলে দাবি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের। বহুতল ওই ভবনটি ইউএসটিসির একাডেমিক এবং বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও প্রকৌশল অনুষদ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের কাছ থেকে ৯৯ বছরের জন্য লিজ নিয়ে ১৮ বছর আগে ওই ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করেছিল ইউএসটিসি কর্তৃপক্ষ।
সংবাদ সম্মেলনে ইউএসটিসির উপাচার্য অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ১৯৯২ সালে রেলওয়ে ৯৯ বছরের লিজ দিয়ে যথাযথভাবে এক একর ভূমি হস্তান্তর করে। ২০০২ সালের ১৮ ডিসেম্বর সিডিএ চিঠি দিয়ে ইউএসটিসি কর্তৃপক্ষকে ১৬ তলা ভবন নির্মাণের অনুমতি দেয়।
আমাদের জমি বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল আরএস অনুসারে। ভবন নির্মাণের পর গত ১৫ বছর ধরে সেখানে একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। খালের উপর পড়লে সিডিএ ওই সময় ভবন নির্মাণের অনুমোদন কিভাবে দিল, সে প্রশ্ন রাখেন তিনি।
২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে একবার সিডিএ’র উচ্ছেদ অভিযানের পর গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মধ্যস্থতায় বিষয়টির ‘সমাধান’ হয়েছিল বলেও দাবি করেন উপাচার্য।
তিনি বলেন, ইউএসটিসি ভবনের সীমানা দেয়াল থেকে আরএস মৌজা মোতাবেক খাল ও রাস্তা নির্মাণের জন্য ৪০ ফুট প্রশস্ত জায়গা আছে। ওটা ২০ ফুটের খাল। অনায়াসে রাস্তার নিচ দিয়ে বঙ কালভার্ট করে কম খরচে প্রকল্প সম্পন্ন করা সম্ভব।
“গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় বলেছে, এভাবে করে দেবেন। সেখান থেকে এসে দুই মাসের মাথায় এভাবে ভবন ভেঙে দেয়া হল! আমি নিজে সিডিএ চেয়ারম্যানসহ প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের কাছে গিয়েছি। ৪০ ফুট দূর দিয়ে খাল যাওয়ার কথা। তাহলে কেন এমন হল?”
অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, একজন উপাচার্য হিসেবে গতকালের এ ঘটনায় আমি কেঁদেছি। এটা আমার সম্পত্তি নয়। ইউএসটিসির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত জাতীয় অধ্যাপক ডা. নুরুল ইসলাম সাহেবের বা উনার ছেলেমেয়েদেরও নয়। আমরা ক’দিন বাঁচব। এটা তো কেউ সঙ্গে নিয়ে যেতে পারবে না।
এটা একটা জাতীয় প্রতিষ্ঠান। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে শিক্ষার্থীরা এসে এখান থেকে ডিগ্রী নিয়েছে। এখনও বহু দেশের শিক্ষার্থী এখানে অধ্যয়ন করছে।
এই প্রতিষ্ঠানে নানা রকম বায়ো টেকনোলজি, ন্যানো টেকনোলজি এবং ফার্মেসি বিষয়ক গবেষণা হচ্ছে।
এতে জানানো হয়- সমপ্রতি ইউএসটিসি সিন্ডিকেট ১৬তলা অ্যাকাডেমিক কাম ইনস্টিটিউট ভবনে ‘সায়মা ওয়াজেদ সেন্টার অব হোপ ফর অটিস্টিক চিলড্রেন’ স্থাপনের অনুমোদন পেয়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম শুরু হয়। একই ভবনে ‘ন্যাশনাল প্রফেসর ড. নুরুল ইসলাম ইনস্টিটিউট ফর ফোর্থ ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভোল্যুশন’ স্থাপনে ইউএসটিসি সিন্ডিকেট ২০১৯ সালের ১০ মে অনুমোদন দেয়। সিডিএর জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় গয়নাছড়া খাল পুন:খনন, খাল পাড়ে রাস্তা নির্মাণ ও সিল্ট ট্র্যাপ (বালির ফাঁদ) নির্মাণের কাজ চলছে। এ প্রকল্পের আওতায় খালের জমিতে নির্মিত ইউএসটিসির বহুতল ভবনটির একাংশ বুধবার ভাঙার কাজ শুরু করে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
এতে অন্যান্যদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন ইউএসটিসির উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. নুরুল আবছার, আইএএইচএস-এর অধ্যক্ষ ডা.এএমএম এহতেশামুল হক, বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতালের পরিচালক ডা. কামরুল ইসলাম, পরিচালক ডা. নজরুল কাদের শিকদার, প্রক্টর নূরে আলম সিদ্দিকী, ইংরেজি বিভাগের প্রধান মো. আবদুর রশিদ ও বোর্ড অব ট্রাস্টিজের প্রতিনিধি ডা. তাহিয়া তসলিম চৌধুরী।
মানববন্ধন : ইউএসটিসি’র প্রধান একাডেমিক ভবন বিনা নোটিশে ভেঙ্গে ফেলার অভিযান বন্ধ করার দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচিও পালন করে বিশ্ববিদ্যালয়টির সর্বস্তরের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরা। গতকাল সকাল ১০টায় ইউএসটিসি’র সামনে জাকির হোসেন রোডে এ মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। উপাচার্য ড. মো. জাহাঙ্গীর আলমসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরা এ কর্মসূচিতে অংশ নেন। দৈনিক আজাদীতে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ তথ্য জানিয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদুই জনের ১৭ বছর কারাদণ্ড
পরবর্তী নিবন্ধআগুনে পুড়ল ১১টি পরিত্যক্ত বাস