ইউএনও জানালো চেয়ারম্যানেরা ‘অনুপস্থিত’ কিন্তু চেয়ারম্যানেরা ডিসিকে জানালো তাঁরা ‘উপস্থিত’

| বৃহস্পতিবার , ৩ অক্টোবর, ২০২৪ at ১:২৯ অপরাহ্ণ

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সর্বকনিষ্ঠ কর্ণফুলী উপজেলার পাঁচ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান ও প্যানেল চেয়ারম্যানেরা (পুরুষ ও নারী) পরিষদ অফিসে অনুপস্থিত বলে চাহিত তথ্যে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসককে তথ্য দেন।

ওই প্রতিবেদনের বিপরীতে কর্ণফুলীর তিন ইউপি চেয়ারম্যান ও তিন প্যানেল চেয়ারম্যান পরিষদে উপস্থিত বলে ক্ষমতা বহাল চেয়ে জেলা প্রশাসক (ডিসি) এর কাছে লিখিত আবেদন জানিয়েছেন।

পহেলা ও ২ অক্টোবর বিকেলে কর্ণফুলী উপজেলার শিকলবাহা, চরপাথরঘাটা ও বড়উঠান ইউনিয়নের তিন চেয়ারম্যানসহ চরপাথরঘাটার তিন প্যানেল চেয়ারম্যান এ আবেদন জানিয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন স্ব স্ব ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিরা।

তাঁরা হলেন-চরপাথরঘাটার ইউপি চেয়ারম্যান হাজী ছাবের আহমদ, বড়উঠানের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ দিদারুল আলম, শিকলবাহার চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম, চরপাথরঘাটার প্যানেল চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবু তাহের-১, মো. সুমন প্যানেল-২ ও আয়েশা আক্তার প্যানেল-৩।

লিখিত আবেদনে চেয়ারম্যানেরা জানিয়েছেন, গত ১৯ আগস্ট কর্ণফুলীর সকল চেয়ারম্যানেরা ধারাবাহিকভাবে কর্মস্থলে অনুপস্থিত দেখিয়ে চার ইউনিয়নে ইউএনও ও এসিল্যাণ্ডকে আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা অর্পণ করা হয়।

ফলে, ১৯ আগস্টের পর থেকে প্রতিনিয়ত স্থানীয় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সেবা-পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে স্ব স্ব ইউনিয়নবাসী। ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারণ মানুষ। এতে নাগরিক সেবা দিতে নির্বাচিত উপস্থিত চেয়ারম্যানদের বিকল্প নেই বলে তাঁরা জানান।

চেয়ারম্যানেরা আবেদনে আরও জানান, ‘জন্মসনদ, নাগরিক সনদ, মৃত্যু সনদ, ট্রেড লাইসেন্সসহ বিভিন্ন নাগরিক সেবা হতে চরম বিপাকে পড়েছে লোকজন। এতে নানামুখী প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছে ইউপি সদস্যরাও। নাগরিক ভোগান্তি কাটাতে এবং পরিষদের কার্যক্রম সচল করতে চেয়ারম্যানদের দায়িত্ব প্রদান করা জরুরী।’

এছাড়াও, গত ২১ আগস্ট পর্যন্ত চেয়ারম্যানেরা উপস্থিত থেকে যাবতীয় জনসেবা অব্যাহত রাখা সত্ত্বেও তাঁদের অনুপস্থিত দেখিয়ে বিধিবহির্ভূত ভাবে ক্ষমতা খর্ব করা হয় বলে ইউএনও’র বিরুদ্ধে মৌন অভিযোগ তোলেন।

এমনকি তাঁদের অনুপস্থিত দেখিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধক এর স্থলে উপজেলার পাঁচ কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। যা জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধক আইন ২০০৪ এর ধারা ৪(১) (ছ) এর পরিপন্থি। চেয়ারম্যানদের অনুপস্থিত দেখিয়ে ইউএনও ও এসিল্যাণ্ডকে আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা প্রদান বিদ্বেষমূলক ও আইন সঙ্গত নয় এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মূলনীতি বর্হিভূত বলেও জানান।

এতে তিন ইউপি চেয়ারম্যানগণ ১৯ শে আগস্টের আদেশটি প্রত্যাহারপূর্বক সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে স্ব স্ব দায়িত্ব এবং আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা পালনের প্রত্যাশা জানান।

অন্যদিকে, গতকাল ২ অক্টোবর বিকেলে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের তিন প্যানেল চেয়ারম্যান লিখিত ভাবে জানান,
‘অতিগোপনে তিন প্যানেল চেয়ারম্যানকেও অনুপস্থিত দেখিয়েছেন কর্ণফুলী ইউএনও । যা সঠিক নয় বলে তাঁরা জানান।

আবেদনের সাথে দেওয়া নথিপত্র বলছে, চরপাথরঘাটার ১১ ইউপি সদস্যদের সম্মতিক্রমে মোহাম্মদ আবু তাহের (প্রথম প্যানেল চেয়ারম্যান) কে সদস্যরা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মনোনীত করেছেন। কেননা, স্থানীয় সরকার বিভাগ ইউনিয়ন পরিষদ সচল রাখার বিষয়ে পরিপত্র জারি করেছেন।

যদিও তৃণমূলের সাধারণ মানুষের বিড়ম্বনা ও ভোগান্তি লাঘবের জন্য এসব ইউনিয়ন পরিষদের আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা ইউএনও ও এসিল্যান্ডের কাছে হস্তান্তর করেছেন জেলা প্রশাসন। কিন্তু এলাকার মানুষের দাবি, ‘ইউএনও-এসিল্যাণ্ড নিজ দপ্তরের কাজে ব্যস্ত থাকেন। নিয়মিত পরিষদে আসতে পারবেন না। এতে নাগরিকদের নানা ভোগান্তি পোহাতে হবে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বড়উঠানের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ দিদারুল আলম, চরপাথরঘাটার চেয়ারম্যান হাজী ছাবের আহমেদ ও শিকলবাহার চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমরা এলাকায় উপস্থিত থাকলেও কেন ইউএনও মহোদয় আমাদের অনুপস্থিত দেখালেন সেটা আমরা জানি না। তবে এর প্রতিকার পেতে আমরা জেলা প্রশাসক মহোদয়ের কাছে লিখিত আবেদন করেছি। স্থানীয় সরকার বিভাগও আশ্বাস দিয়েছেন বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখবেন।’

চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের ৩নং নারী প্যানেল চেয়ারম্যান আয়েশা আক্তার (১,২,৩ ওয়ার্ড) জানান, ‘কেন কি কারণে কি উদ্দেশ্যে ইউএনও মহোদয় আমাদের প্যানেল চেয়ারম্যানদেরও অনুপস্থিত দেখালেন তা আমাদের বোধগম্য নয়।’

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার শাখার সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট এস. এম. এন. জামিউল হিকমা বলেন, ‘কেউ যদি ইউনিয়ন পরিষদে উপস্থিত থেকে জনগণের দায়িত্ব পালন ও সরকারি কার্যক্রম চালাতে সক্ষম হয়। সেক্ষেত্রে অবশ্য পুনরায় চেয়ারম্যানদের আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়া হবে। যেমন হাটহাজারীর তিন ইউনিয়ন চেয়ারম্যানেরা সম্ভবত আবারও দায়িত্ব ফেরত পাচ্ছেন।’

অন্যদিকে, উপজেলার চেয়ারম্যানদের অনুপস্থিত দেখানো এবং ৪৭১ নং স্মারকের বিষয়টি বর্ণনা করে জানতে চাইলে কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মাসুমা জান্নাত বলেন, ‘আমি এ ধরনের কোন প্রতিবেদন পাঠাইনি।’

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার শাখার উপ-পরিচালক ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. সাদি উর রহিম জাদিদ বলেন, ‘আমরা কিছু ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক ও আর্থিক ক্ষমতা ইউএনও-এসিল্যাণ্ড কে প্রদান করেছি যা সাময়িক সময়ের জন্য। কারণ, ইউনিয়ন পরিষদ এখনো বহাল। শুধুমাত্র ধারাবাহিক ভাবে অনুপস্থিত চেয়ারম্যানদের ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য। যদি কোন চেয়ারম্যান পরিষদ অফিসে উপস্থিত হয়ে কার্যক্রম চালাতে সক্ষম বলে প্রমান করে, তাহলে সেক্ষেত্রে অবশ্য চেয়ারম্যানদের ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়া হবে।’

পূর্ববর্তী নিবন্ধজুয়া খেলার টাকার ভাগ নিয়ে মহেশখালীতে ছুরিকাঘাতে কিশোর খুন
পরবর্তী নিবন্ধআনোয়ারার পাহাড়ে অজ্ঞাত নারীর লাশ