টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দুর্দান্তভাবে এগিয়ে যাচ্ছে ভারত। ফেবারিটের তকমা নিয়ে আসা ভারত এরই মধ্যে সবকটি ম্যাচে জিতে এসেছে সেমিফাইনালে। প্রথম টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা জেতা ভারত এরপর ফাইনালে যেতে পেরেছে আর মাত্র একবার। তাও সেই দশ বছর আগে। ২০১৪ সালের আসরে শ্রীলংকার কাছে হেরে দ্বিতীয়বার টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতার স্বপ্ন ভঙ্গ হয়েছিল ভারতের। অপরদিকে চতুর্থবারের মত টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলার লক্ষ্য নিয়ে আজ দ্বিতীয় সেমিফাইনালে ভারতের মুখোমুখি হবে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড। এরই মদ্যে দুইবার এই ট্রফি জিতেছে ইংলিশরা। গায়ানার প্রোভিডেন্স স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় রাত ৮টা ৩০ মিনিটে শুরু হবে এই ম্যাচটি। ২০১০ সালে টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের তৃতীয় আসরে প্রথমবারের মত ফাইনালে খেলার সুযোগ পেয়ে শিরোপা ঘরে তুলেছিল ইংল্যান্ড। শিরোপা নির্ধারনী ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে ৭ উইকেটে হারিয়েছিলো ইংলিশরা। এরপর ২০১৬ সালের আসরে ফাইনালে উঠলেও ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে ৪ উইকেটে হেরে স্বপ্ন ভঙ্গ হয় ইংল্যান্ডের। মূলত ম্যাচের শেষ ওভারে ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েটের অবিশ্বাস্য ব্যাটিংয়ের সামনে হার মানে ইংলিশরা। শেষ ওভারে ১৯ রানের প্রয়োজন িছল ওয়েস্ট ইন্ডিজের। ইংল্যান্ডের পেসার বেন স্টোকসের প্রথম চার বলে চার ছক্কায় ২৪ রান তুলে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে শিরোপা এনে দেন ব্র্যাথওয়েট। ২০২২ সালে তৃতীয়বারের মত বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেছিল ইংল্যান্ড। নিজেদের তৃতীয় ফাইনালে পাকিস্তানকে ৫ উইকেটে হারিয়ে দ্বিতীয় শিরোপা জিতেছিল ইংলিশরা। তাই ২০১০, ২০১৬ ও ২০২২ সালের পর চতুর্থবারের মত বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলার সুযোগ ইংল্যান্ডের সামনে। ফাইনালে খেলার লক্ষ্য সেমিফাইনালে জয় ছাড়া অন্য কিছুই ভাবছে না ইংলিশরা। দলের অধিনায়ক জশ বাটলার বলেন আমাদের সামনে চতুর্থ ফাইনাল খেলার সুযোগ। ফাইনালে খেলার সুযোগ যে কেউ লুফে নিবে। আমরাও এর ব্যতিক্রম না। ফাইনালে খেলতে দলের সবাই মুখিয়ে আছে। আমাদের লক্ষ্য ফাইনাল খেলা।
এবারের বিশ্বকাপের শুরুটা ভালো হয়নি ইংল্যান্ডের। গ্রুপ পর্ব থেকেই ছিটকে যাবার শঙ্কায় ছিলো তারা। কিন্তু ভাগ্যের জোরে গ্রুপ পর্বের বাঁধা টপকায় ইংলিশরা। গ্রুপ পর্বে নিজেদের প্রথম দুই ম্যাচে স্কটল্যান্ডের সাথে বৃষ্টির কারনে পয়েন্ট ভাগাভাগি এবং অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে মহাবিপদে পড়েছিল তারা। পরের দুই ম্যাচ জিতে সুপার এইটে খেলার লড়াইয়ে ফিরে ইংল্যান্ড। ৪ ম্যাচে ৫ পয়েন্ট ছিলো তাদের। একই অবস্থা ছিলো স্কটল্যান্ডেরও। কিন্তু রান রেটে এগিয়ে থাকার সুবাদে সুপার এইটে জায়গা করে নেয় ইংলিশরা। সুপার এইটেও চাপে পড়েছিলো ইংল্যান্ড। কিন্তু নিজেদের শেষ ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ হেরে যাওয়ায় সেমির টিকিট পায় ইংল্যান্ড । তবে গ্রুপ পর্ব বা সুপার এইটের ম্যাচগুলো নিয়ে ভাবতে চান না ইংল্যান্ডের অধিনায়ক বাটলার। সেমিফাইনালে ভারতকে আটকাতে বদ্ধপরিকর তারা। বাটলার বলেন গ্রুপ পর্ব ও সুপার এইটের ম্যাচ এখন অতীত। আমরা সামনের ম্যাচ নিয়ে ভাবছি। সেমিফাইনালে বাঁধা টপকাতে ভারতের বিপক্ষে নিজেদের সেরা ক্রিকেট খেলতে চাই আমরা। কাজটি কঠিন হলেও সেরা ক্রিকেট খেলার সামর্থ্য আমাদের দলের আছে।
এদিকে ২০০৭ সালে শুরু হওয়া টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম আসরেই চ্যাম্পিয়ন হয় ভারত। ফাইনালে পাকিস্তানকে ৫ রানে হারিয়েছিলো তারা। এরপর ২০১৪ সালে বাংলাদেশের মাটিতে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছিল ভারত। কিন্তু শ্রীলংকার কাছে ৬ উইকেটে হেরে স্বপ্ন ভঙ্গ হয় টিম ইন্ডিয়ার। ২০১৪ সালের পর আর কখনও টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলতে পারেনি ভারত। দু’বার সেমিফাইনালে খেললেও ফাইনালে উঠতে পারেনি তারা। দশ বছর পর আবারও বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলার সুযোগ ভারতের সামনে। এই সুযোগকে হাতছাড়া করতে চায় না ভারত। দলের অধিনায়ক রোহিত শর্মা বলেন দীর্ঘ দিন পর ফাইনালে খেলার সুযোগ তৈরি হয়েছে আমাদের সামনে। এই সুযোগ কোনভাবেই হাতছাড়া করতে রাজি নই আমরা। ফাইনালে খেলার লক্ষ্য নিয়ে সেমির লড়াইয়ে নামবে দল। ২০২২ সালে বিশ্বকাপের সর্বশেষ আসরের সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের কাছে হেরে ফাইনাল খেলার স্বপ্ন ভঙ্গ হয়েছিলো ভারতের। টানা দ্বিতীয়বারের মত বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে প্রতিপক্ষ হিসেবে ইংল্যান্ডকে পেয়েছে ভারত। আগের আসরে হারের প্রতিশোধ নেওয়ার সুযোগ এখন ভারতের সামনে। কিন্তু প্রতিশোধ নিয়ে ভাবতে রাজি নন রোহিত। প্রতিপক্ষ কে, সেটিও ভাবতে চান না তিনি। আলাদা কিছুও করতে চাননা। শুধু যে ক্রিকেট খেলছে সেটাই খেলতে চান। রোহিত বলেন ছেলেদের বলেছি, চাপ না নিয়ে নিজেদের মত খেলতে। এই রকম ক্রিকেট খেললেই আমরা সফল হব। টি–টোয়েন্টি ক্রিকেটে দু দল ২৩ বার মুখোমুখি হয়েছে । এরমধ্যে ভারতের জয় ১২ ম্যাচে। ইংল্যান্ড জিতেছে ১১ ম্যাচে। বিশ্বকাপের মঞ্চে জয় ও পরাজয় দু দলের সমান–সমান। ৪বারের দেখায় ২টি করে জয় পেয়েছে ভারত ও ইংল্যান্ড।