দক্ষিণ আফ্রিকার সামনে দাঁড়াতেই পারল না ইংল্যান্ড। স্রেফ উড়ে গেল তারা। বড় জয়ে গ্রুপ সেরা হয়েই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমি–ফাইনালে উঠল প্রোটিয়ারা। সাদা বলের অধিনায়ক হিসেবে জস বাটলারের শেষ ম্যাচে মোটেও লড়াই করতে পারেনি ইংল্যান্ড। করাচিতে গতকাল শনিবার সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হারল ৭ উইকেটে। ইংলিশদের ৩৮.২ ওভারে ১৭৯ রানে গুটিয়ে দেওয়ার পরই সেমি–ফাইনালের টিকেট নিশ্চিত হয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকার। লক্ষ্য ছুঁয়ে ফেলে তারা ১২৫ বল বাকি থাকতেই। ২৯.১ ওভারে ৩ উইকেটে ১৮১ রান করে তারা। আগেই টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিশ্চিত হয়ে যাওয়া ইংল্যান্ড হারল তিন ম্যাচের সবগুলোতে। কোনো জয় ছাড়া এক আসরে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ হারের নজির এটি। সব মিলিয়ে টানা সাতটি ওয়ানডে এবং এই বছরে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ১১ ম্যাচের ১০টিই হারল ইংল্যান্ড। চাপের মুখে আগের দিন অধিনায়কত্ব ছাড়েন বাটলার। দক্ষিণ আফ্রিকার এই জয়ের নায়ক মার্কো ইয়ানসেন। নতুন বলে চমৎকার বোলিংয়ে পাওয়ার প্লেতে ৩ উইকেট নেন বাঁহাতি এই পেসার। এছাড়া তিনটি ক্যাচ নিয়ে ম্যাচ–সেরার স্বীকৃতি পান তিনিই। নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে ৩ উইকেট নেন আরেক পেসার ভিয়ান মুল্ডারও। বাঁহাতি স্পিনার কেশাভ মহারাজের শিকার ২টি। ইংল্যান্ডের ইনিংসে ত্রিশ ছাড়াতে পারেন কেবল একজন। ৪৪ বলে ৩৭ রান করেন জো রুট।
জবাবে পঞ্চাশ ছোঁয়ার আগে দুই ওপেনারকে হারলেও তৃতীয় উইকেটে রাসি ফন ডার ডাসেন ও হাইনরিখ ক্লসেনের ১২৭ রানের জুটিতে অনায়াসে জিতে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা। টানা দ্বিতীয় ফিফটি করে ৬ চার ও ৩ ছক্কায় ৮৭ বলে অপরাজিত ৭২ রানের ইনিংসে দলের জয় নিয়ে ফেরেন ফন ডাসেন। আসরে প্রথমবার খেলতে নেমে ১১ চারে ৫৬ বলে ৬৪ রান করেন ক্লসেন।
ওয়ানডেতে তার টানা পঞ্চম পঞ্চাশোর্ধ ইনিংস এটি, দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে যা যৌথভাবে সর্বোচ্চ। জয়ের আনন্দের মাঝে কিছুটা অস্বস্তিও আছে দক্ষিণ আফ্রিকার। অসুস্থতার কারণে এই ম্যাচে খেলতে পারেননি নিয়মিত অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা। তার জায়গায় অধিনায়কত্ব করা এইডেন মার্করাম ফিল্ডিংয়ের সময় ডান হ্যামস্ট্রিংয়ে চোট পেয়ে মাঠ ছাড়েন। ইংল্যান্ডের ইনিংসের বাকি সময়ে দলকে নেতৃত্ব দেন ক্লসেন। ম্যাচে একটি জায়গাতেই শুধু জিততে পারে ইংল্যান্ড, সেটা টসে। তবে প্রথম সাত ওভারের মধ্যে টপ অর্ডারের তিন ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে চাপে পড়ে যায় তারা। প্রথম ওভারে ইয়ানসেনকে দুটি চার মারার পর শর্ট বলে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ফিল সল্ট। ইয়ানসেনের পরের ওভারে আরেকটি শর্ট বলে বিদায় নেন জেমি স্মিথ। এই আসর দিয়ে প্রথমবার তিন নম্বরে সুযোগ পেয়ে তার রান ৬, ১৫ ও ৯। দারুণ কয়েকটি চার মারার পর বাজে শটে ইয়ানসেনকে ফিরতি ক্যাচ দেন বেন ডাকেট। তিনি করেন ২১ বলে ২৪ রান। দক্ষিণ আফ্রিকার চতুর্থ বোলার হিসেবে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ম্যাচে পাওয়ার প্লেতে অন্তত ৩ উইকেট নিলেন ইয়ানসেন। তখন ৩৭ রানে ৩ উইকেট নেই ইংল্যান্ডের। চতুর্থ উইকেটে ৬২ রানের জুটিতে প্রতিরোধের চেষ্টা করেন রুট ও হ্যারি ব্রুক। শেষ পর্যন্ত এটিই হয়ে থাকে ইনিংসের সর্বোচ্চ জুটি। দুজনই ফেরেন পরপর দুই ওভারে। টিকতে পারেননি লিয়াম লিভিংস্টোন। জেমি ওভারটনের বিদায়ে ইংল্যান্ডের স্কোর হয়ে যায় ৭ উইকেটে ১২৯। সেখান থেকে ৪২ রানের জুটি গড়েন বাটলার ও জফ্রা আর্চার। ৮ রানের মধ্যে শেষ ৩ উইকেট হারিয়ে চলতি আসরের সর্বনিম্ন রানে গুটিয়ে যায় ইংলিশরা। নেতৃত্বের শেষ ম্যাচে ২১ রান করতে বাটলার খেলেন ৪৩ বল। ৩১ বলে ২৫ রান করেন ফাস্ট বোলার আর্চার, যা দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। ছোট লক্ষ্য তাড়ায় দক্ষিণ আফ্রিকার শুরুটা ভালো ছিল না। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথমবার ওপেনিংয়ে নেমে শূন্য রানে ফেরেন ট্রিস্টান স্টাবস। পাওয়ার প্লের মধ্যে বিদায় নেন আরেক ওপেনার রায়ান রিকেলটনও। তিনি ২৫ বলে ২৭ রান করেন। দুজনকেই বোল্ড করেন আর্চার। ইংল্যান্ড এরপর আর কোনো সুযোগ পায়নি। বলা ভালো, তাদের কোনো সুযোগ দেননি ফন ডাসেন ও ক্লসেন। চোটের কারণে আসরের শুরুতে খেলতে না পারা ক্লসেন আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে ফিফটি করেন ৪১ বলে। ফন ডাসেনের পঞ্চাশ ছুঁতে লাগে ৭২ বল। দলের জয় থেকে ৬ রান দূরে থাকতে শেষ হয় ক্লসেনের চমৎকার ইনিংসটি। এই সংস্করণে তার সবশেষ ছয় ইনিংস যথাক্রমে ৮৬, ৯৭, ৮১, ৮৭, ও ৬৪। মুখোমুখি দ্বিতীয় বলে ১১৭ মিটার ছক্কায় উড়িয়ে ম্যাচের ইতি টেনে দেন মিলার। ৫ পয়েন্ট নিয়ে ‘বি’ গ্রুপের সেরা হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ৪ পয়েন্ট নিয়ে সেমি–ফাইনালে তাদের সঙ্গী অস্ট্রেলিয়া। ৩ পয়েন্ট নিয়ে বিদায় নিয়েছে আফগানিস্তান।