খাগড়াছড়িতে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এই ঘটনায় দুই পক্ষের শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার সকালে শাপলা চত্বর এলাকা সংলগ্ন জেলা বিএনপি কার্যালয় থেকে শুরু হওয়া সংঘর্ষ জেলা শহরে ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনার পর বিএনপির নেতাকর্মীরা সংঘবদ্ধ হয়ে আওয়ামী লীগের অফিসে হামলা চালালে জেলা আওয়ামী লীগের উপ–দপ্তর সম্পাদক নুরুল আজমসহ বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হন।
এরপর পুরো শহরে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। বেলা একটা পর্যন্ত তিন ঘণ্টার বেশি সময় ধরে শহরের ভাঙা ব্রিজ থেকে শাপলা চত্বর পর্যন্ত দখল করে রাখেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় থেকে শুরু করে ভাঙা ব্রিজ এলাকা পর্যন্ত সংঘর্ষ চলে। আতংকে দুই পাশের দোকানপাট ও পথচারীদের চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দুই পাশে যাত্রী ও পণ্যবাহী যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় তিন ঘণ্টাব্যাপী এই সংঘর্ষ চলে। সংঘর্ষ চলাকালে উভয় পক্ষকে বাঁশ, লাঠি ও লোহার রড ব্যবহার করতে দেখা যায়।
এ সময় বিএনপির নেতাকর্মীরা মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করেন। হামলা চালিয়ে খাগড়াছড়ি পৌরসভা ভবনে ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়। হামলায় পৌরসভার জানালার কাচ, সিসিটিভিসহ আসবাবপত্র ভাঙচুর করা হয়। ৩টি মোটরসাইকেলে আগুন দেয়া হয়। ভাঙচুর করা হয় অন্তত ১০টি মোটরসাইকেল। এ সময় উভয় পক্ষের শতাধিক নেতাকর্মী আহত হন। আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে পুলিশ রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। দুপুর দেড়টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। এই ঘটনায় শহরে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
জেলা বিএনপির সভাপতি ওয়াদুদ ভুঁইয়া অভিযোগ করেন, আমাদের পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি ছিল। দলের নেতাকর্মীরা সকাল ১০টায় দলীয় কার্যালয়ে জমায়েত হয়। পদযাত্রা কর্মসূচির প্রস্তুতির সময় সকাল সোয়া ১০টার দিকে খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির অফিসে আওয়ামী লীগের নেতকর্মীরা হামলা চালায়। এরপরই দুই দলের কর্মীরা সংঘাতে জড়িয়ে পরে। এতে বিএনপির নেতা হোসেন মো. বাবুসহ ৫০ জনের বেশি নেতাকর্মী আহত হন।
হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্মলেন্দু চৌধুরী বলেন, বিএনপি আমাদের পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচিতে এসে হামলা করেছে। হামলায় আমাদের ৫০–এর বেশি নেতাকর্মী আহত হয়েছে। সংঘর্ষ থামানোর জন্য পুলিশের সহায়তা চাইলে পুলিশ নিস্ক্রিয় ভূমিকা পালন করে। আমি পুলিশ সুপার ও জেলা প্রশাসককে একাধিকবার ফোন করেছি। কিন্তু প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। পুলিশের নিস্ক্রিয়তার কারণে পৌরসভায় হামলার ঘটনা ঘটেছে।
সংঘর্ষ থামার পর পুলিশ সুপার নাঈমুল হক গাড়ি নিয়ে শহর প্রদক্ষিণ করেন। এ সময় সাংবাদিকরা তার সঙ্গে কথা বলতে চান। কিন্তু তিনি কথা বলেননি। এ সময় তার সাক্ষাৎকার নিতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের কোনো প্রশ্নের জবাব দেননি।
ঘটনার বিষয়ে কথা বলতে পুলিশ সুপার নাঈমুল হককে একাধিকবার ফোন করা হয়। কিন্তু তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
আওয়ামী লীগের সংবাদ সম্মেলন : হামলার প্রতিবাদে গতকাল বিকালে দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে জেলা আওয়ামী লীগ। সংবাদ সম্মেলনে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা বলেন, ওয়াদুদ ভুঁইয়ার নেতৃত্বে বিএনপি, জামাত ও চরমোনাইয়ের গুন্ডা বাহিনী দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র ও রিভলভার নিয়ে বিএনপির দলীয় কার্যালয় থেকে ঈদগাহ মাঠ অতিক্রম করে অতর্কিতভাবে বর্বরোচিত হামলা করে। তারা আওয়ামী লীগের প্রায় ৫০ থেকে ৬০ জন নেতাকর্মীকে পিটিয়ে মারাত্মকভাবে জখম করে। এতে শিক্ষানবিশ আইনজীবী ইকো চাকমা আদালতে আসার পথে এবং জেলা আওয়ামী লীগের উপ–দপ্তর বিষয়ক সম্পাদক সাংবাদিক নুরুল আজম গুরুতর আহত হন। এক পর্যায়ে সন্ত্রাসীরা খাগড়াছড়ি পৌরসভা কার্যালয়ে অনধিকার প্রবেশ করে রাষ্ট্রীয় সম্পদ ভাঙচুর করে, অগ্নিসংযোগ করে এবং কাউন্সিলরদের ওপর হামলা করে জখম করে। বর্তমানে জেলা আওয়ামী লীগের ১০/১২ জন নেতাকর্মী মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন।
ঘটনার সময় পুলিশের নিস্ক্রিয়তা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, হামলার সময় পুলিশ গালিফতি করেছে কিনা সেটা খতিয়ে দেখা হবে। পুলিশের গাফিলতি থাকলে তারাও রেহাই পাবে না।
হামলার বিচার বিভাগীয় তদন্তসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছে আওয়ামী লীগ। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্মলেন্দু চৌধুরী। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি কল্যাণ মিত্র বড়ুয়া, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মংসুই প্রু চৌধুরী ও যুগ্ম সম্পাদক অ্যাডভোকেট আশুতোষ চাকমা।