সুন্দরবন আমাকে সবসময় হাতছানি দিয়ে ডাকতো। কখনো যাওয়া হয়নি। এবার জান্নাত ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা কবি জান্নাতুল ফেরদৌস আমাকে সুন্দরবন যাবার আমন্ত্রণ জানালেন। এতো কিছু না ভেবে লুফে নিলাম আমন্ত্রণ। ফ্রেন্ডস লিঙ্ক টুরিজম–এর প্রতিষ্ঠাতা জাহেদা আক্তার মিতার পরিচালনায় এই ভ্রমণ। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা হয়ে পৌঁছি খুলনা। ভোরে খুলনা জেলখানা ঘাট থেকে সুন্দরবনের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেছি, দুপুরের আগেই পৌঁছে গেলাম আন্দারমানিক ইকো–টুরিজম–হারবারিয়া ইকো–টুরিজম পয়েন্টে। আন্দারমানিক একটি অত্যন্ত সুন্দর ও প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যে ভরপুর বনাঞ্চল। এখানে সুন্দরী এবং গেওয়া গাছ সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।
বিশ্বের বৃহত্তম সমুদ্র তীরবর্তী ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলগুলোর একটি ‘হারবারিয়া ইকো–টুরিজম সেন্টার’। কেন্দ্রের সামনে থাকা খালটি একটি কুমির অভয়ারণ্য, তাই লবণাক্ত পানির কুমির এখানে প্রায়ই দেখা যায়। এছাড়া হরিণ, বুনো শূকর, বানর, নানা প্রজাতির পাখি, মাদানটক সহ সুন্দরবনের দুর্লভ মায়া হরিণও এখানে দেখা যায়। হারবারিয়া বাঘের অভয়ারণ্য হিসেবে পরিচিত–এখানে প্রায়ই তাজা বাঘের পায়ের ছাপ দেখা যায়।
ভ্রমণের দ্বিতীয় দিনে ভোরের আলো ফোটার আগেই আমরা ছোট নৌকায় (কান্ট্রি বোট) ম্যানগ্রোভ খাল ধরে কাটকা (জামতলা) সি–বিচ দেখতে যাই। কাটকা হলোসুন্দরবন সাফারির অন্যতম বেস পয়েন্ট। এখানে বাঘ, হরিণ, বানর, নানা প্রজাতির পাখিসহ বিরল ও দৃষ্টিনন্দন অনেক বন্যপ্রাণী দেখা মেলে। বনের বন্যপাখির মধুর সুরে পরিবেশ মুখরিত হয়ে ওঠে। দুপুরের খাবারের পর আমরা হিরণ পয়েন্টে গেলাম। এটি সুন্দরবনের দক্ষিণ অংশে অবস্থিত একটি সুরক্ষিত অভয়ারণ্য এবং ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকাভুক্ত এলাকা। হিরণ পয়েন্ট থেকে ৩ কিমি দূরে কেওড়াসুটি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার আছে, যেখান থেকে বন ও নদীর মনোরম দৃশ্য দেখা যায়। এখানে মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের তিনটি রেস্টহাউস রয়েছে–থাকতে হলে অনুমতি প্রয়োজন। নীলকমল নদীর দুই পাশে হরিণের অবাধ বিচরণ থাকায় একে হিরণ/ডিয়ার পয়েন্ট বলা হয়। বিকেলের দিকে আমরা সুন্দরবনের বিখ্যাত দ্বীপ দুবলার চর–এ পৌঁছাই। এটি কটকা–এর দক্ষিণ–পশ্চিমে এবং হিরণ পয়েন্টের দক্ষিণ–পূর্বে অবস্থিত। ভ্রমণের তৃতীয় দিনে ভোরে পৌঁছাই করমজল বন্যপ্রাণী কেন্দ্রে, যা কুমির ও হরিণ প্রজনন কেন্দ্র হিসেবে বিখ্যাত। করমজল সুন্দরবনের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র।
অসাধারণ কিছু স্মৃতি নিয়ে আমরা খুলনা ফিরে এলাম। পরে ঢাকা হয়ে চট্টগ্রাম এসেছি সহিসালামতে। এই ভ্রমণে সাথী ছিলাম আমরা কজন। তাদের মধ্যে ছিলেন জাহেদা মিতা, মামুন বাহার, শফিকুল ইসলাম, আইভি হাসান, জেরিন চৌধুরী, জান্নাতুল ফেরদৌস, জোবায়দা আশরাফ, সানজিদা বুলু, নুর আক্তার জাহান, সাবিনা কাইয়ুম, নাসিমা আকতার বেবী, সরফুদ্দিন রিপন, শওকত সুলতানা, ইসরাত জাহান, আরিয়ান জিহান খান, তাসনুভা মাহের তানসী, কানিজ ফাতেমা।










