বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মধ্যে ঢাকার বিজয়নগরে পায়ে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর চিকিৎসা নিতে গিয়ে কেমন অভিজ্ঞতা হয়েছিল, সেই বর্ণনা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তুলে ধরলেন আন্দোলনে অংশ নেওয়া ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল ইমরান। এছাড়া আন্দোলনের সময় গুলিবিদ্ধ পারভীন নামে এক প্রত্যক্ষদর্শীও সাক্ষ্য দেন। আদালতে দেওয়া সাক্ষ্যে ইমরান বলেন, তিনি হাসপাতালে থাকার সময় তখনকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের দেখতে যান। কথাবার্তা বলে আন্দোলনকারী বুঝতে পেরে তিনি হাসপাতালের কর্মীদের ‘নো রিলিজ, নো ট্রিটমেন্ট’ অর্ডার দিয়ে যান।
জুলাই অভ্যুত্থান দমাতে দমন–পীড়নের ঘটনায় দায়ের করা মানবতাবিরোধী অপরাধের এ মামলার দ্বিতীয় সাক্ষী হিসেবে গতকাল সোমবার জবানবন্দি দেন ঢাকা কলেজের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল ইমরান। স্বাভাবিক হাঁটার ক্ষমতা হারানোয় হুইল চেয়ারে করে এসে বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনালের সামনে নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন তিনি। খবর বিডিনিউজের।
ইমরান বলেন, গত বছর জুলাই মাসে কোটাবিরোধী আন্দোলন শুরু হলে প্রথম থেকেই তিনি সম্পৃক্ত ছিলেন। ১৯ জুলাই বিকালে বিজয়নগর পানির ট্যাঙ্কি এলাকায় আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশ গুলি চালালে তার হাঁটুর নিচে গুলি লাগে। ওই সময় দুই সহযোদ্ধাকে গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যেতে দেখার কথা জবানবন্দিতে তুলে ধরেন ইমরান।
তিনি বলেন, অন্যরা তাকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়ে গেলেও কেউ ভর্তি নিচ্ছিল না। পরে পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানকার চিকিৎসরা পা কেটে ফেলার কথা বলেন। ওই সময় তার পা হাঁটু থেকে গোড়ালি পর্যন্ত চামড়ার সাথে ঝুলছিল, মনে হচ্ছিল ভেতরে হাড় আর নেই। সে কারণে তারও মনে হচ্ছিল, পা কেটে ফেলার কোনো বিকল্প বোধহয় নেই। তবে তার শুভাকাঙ্ক্ষীরা পা কাটার অনুমতি দিচ্ছিলেন না। তখন দায়িত্বরত চিকিৎসকরা তাকে পঙ্গু হাসপাতালে (জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান) নিয়ে যেতে বলেন।
ইমরান বলেন, অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে পঙ্গু হাসপাতালে নেওয়ার সময় ধানমন্ডিতে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বাসার সামনে যৌথবাহিনী অ্যাম্বুলেন্স আটকায়। সেখানে তাদের প্রায় এক ঘণ্টা আটকে রাখা হয়। তাদের মনে হচ্ছিল, হয়ত গুলি করে মেরেও ফেলতে পারে। ওই অ্যাম্বুলেন্সে ইমরানের সঙ্গে ছিলেন দুজন রক্তদাতা এবং তার দুই বন্ধু ছিল। তাদের একজনকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়া হয়। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর তিনি মুক্তি পান।
ইমরান বলেন, ১৯ জুলাই রাতে কারফিউ ছিল। রাত ১১টার সময় তিনি পঙ্গু হাসপাতালে পৌঁছান। সেখানে তার একটি অস্ত্রোপচার হয়। চিকিৎসকরা বুঝতে পারছিলেন না, তার পা রক্ষা করার কোনো উপায় আছে কি না। এরপর চিকিৎসকরা তাকে হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে পাঠান। সেখানে তারা তার স্নায়ু পরীক্ষা করে বুঝতে পারেন, পা বাঁচানো সম্ভব। তখন তাকে আবার পঙ্গু হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। ওই রাতে তার আরেকটি অস্ত্রোপচার হয়। এভাবে চলতে থাকে ২৭ জুলাই পর্যন্ত।
যারা পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন, ২৭ জুলাই তাদের দেখতে যান তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার আসা উপলক্ষে আগের দিন থেকে হাসপাতাল পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন, দেয়ালে রং করা, ফ্যান মোছাসহ বিভিন্ন কাজ করা হয়। তাতে হয়রানির মধ্যে পড়তে হয় অভিযোগ করে ইমরান বলেন, ২৬ তারিখ রাতে তাদের ঘুমোতে দেওয়া হয়নি। সকাল ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে হাসপাতালে গিয়ে আহতদের খোঁজ খবর নিচ্ছিলেন শেখ হাসিনা। ইমরান বলছেন, ওই সময় তার সঙ্গেও কথা বলেন তখনকার সরকারপ্রধান।
ইমরানের ভাষ্য, কথা বলার সময় শেখ হাসিনাকে ‘ম্যাডাম’ সম্বোধন করেছিলেন তিনি। শেখ হাসিনা তখন তাকে ‘আপা’ ডাকতে বলেন। সাক্ষ্যে ইমরান বলেন, তিনি কোথায় পড়াশোনা করেন, হলে থাকেন কি না এবং কেন হলে থাকেন না এসব বিষয়ে শেখ হাসিনা প্রশ্ন করেন তাকে। এক পর্যায়ে শেখ হাসিনা বুঝতে পারেন, ইমরানও আন্দোলনকারী।
ইমরানের কাছে শেখ হাসিনা জানতে চান, তাকে গুলি পুলিশ করেছে কিনা। ইমরান তাকে বলেন, পুলিশ তাকে সরাসরি গুলি করে। পুলিশের পোশাকে অন্য কেউ ছিল কিনা সেটা তিনি জানেন না। এই তরুণ আদালতকে বলেন, সেদিন হাসপাতালে আহত আরো ৪/৫ জনের সঙ্গে কথা বলেন শেখ হাসিনা। পরে চলে যাওয়ার সময় হেল্প ডেস্কের কাছে গিয়ে ‘নো রিলিজ, নো ট্রিটমেন্ট’ অর্ডার দিয়ে যান।
ইমরান বলেন, বিষয়টি শুনতে পেলেও সে সময় বুঝতে পারেননি নো রিলিজ, নো ট্রিটমেন্ট বলতে শেখ হাসিনা কী বুঝিয়েছেন। পরে তার ঠিকঠাক ট্রিটমেন্ট হচ্ছিল না। তাকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিলো ছিল সকাল ৮টায়। সেজন্য আগের রাত ১২টা থেকে তাকে পানি পর্যন্ত খেতে দেয়নি। কিন্তু ৮টার অপারেশনের কথা বলে তাকে থিয়েটারে নেওয়া হয় দুপুর আড়াইটার দিকে।
তিনি বলেন, তার পা পচে বিকট দুর্গন্ধ ছড়িয়েছিল। আশপাশের লোকজন গন্ধে থাকতে পারত না। সরকারি যে অ্যান্টিবায়োটিক, তা তার শরীরে কাজ করছিল না। তার পা থেকে পুঁজ নিয়ে আইসিডিডিআরবিতে পরীক্ষা করানো হয়। তখন তারা বলে, তাকে দামি অ্যান্টিবায়োটিক দিতে হবে। কিন্তু বাইরে থেকে অ্যান্টিবায়োটিক কিনে হাসপাতালে আনার অনুমতি ছিল না।
ইমরান বলেন, তার বাবা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য অন্যত্র নেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু তাকে রিলিজ দেওয়া হয়নি। তখন বুঝতে পারেন, তাকে রিলিজ বা ট্রিটমেন্ট দেওয়া হবে না। তার পা কেটে জেলে নিয়ে যাবে। ৫ আগস্টের পর ইমরানকে সাধারণ ওয়ার্ড থেকে কেবিনে নেওয়া হয়। এখন যথাযথ চিকিৎসা হচ্ছে বলে আদালতকে জানান তিনি। জীবনের এই পরিস্থিতির জন্য তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সাবেক পুলিশ প্রধান চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনকে দায়ী করেন ইমরান।
এদিন বেলা ১১টা ৩৫ মিনিটে ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শুরু হয়। ১১টা ৩৭ মিনিটে জবানবন্দি দেওয়া শুরু করেন ইমরান। ১২টা ৪০ মিনিটের দিকে তার জবানবন্দি শেষ হয়। এরপর আসামিদের পক্ষে তাকে জেরা শুরু করেন আইনজীবী আমির হোসেন। প্রায় ৪৫ মিনিট জেরা করেন তিনি। এরপর পারভীন নামে ২৭ বছরের এক নারী ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেন। তিনি জুলাই আন্দোলনে চোখ হারিয়েছেন।
পুলিশ এমনভাবে গুলি করছিল, মনে হচ্ছিল খই ফুটছিল : আন্দোলনের সময় জুলাইয়ের একদিন রাজধানীতে কাজ থেকে বাসায় ফেরার পথে রাস্তায় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় একটা ছেলেকে পড়ে থাকতে দেখেন পারভীন। তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে যেতে চান তিনি। আহত ওই ছেলেটাকে লক্ষ্য করে গুলি চালাতেই থাকে পুলিশ। সে সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে বাম চোখ হারানো ওই নারী সেদিনের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিচ্ছিলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে।
আন্দোলনের ওই সময়ে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে বসবাসরত পারভীনের ভাষ্য, পুলিশ ছেলেটাকে এমনভাবে গুলি করছিল, মনে হচ্ছিল খই ফুটছিল। টুস টুস শব্দ হচ্ছিল। পরে ঘটনাস্থলে ওই নারীও গুলিবিদ্ধ হন। এতে তার বাম চোখ অন্ধ হয়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্থ হয় ডান চোখও।
গতকাল বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সামনে তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনা এবং ঘটনাস্থলে দেখা দৃশ্যের বর্ণনা তুলে ধরেন। এদিন সাক্ষ্য দিতে স্বামীকে নিয়ে আদালতে হাজির হন আট মাসের অন্ত:সত্ত্বা পারভীন।
জবানবন্দিতে তিনি বলেন, আন্দোলনের আগে থেকে স্বামীকে নিয়ে যাত্রাবাড়ীর কুতুবখালীর বউবাজার এলাকায় বাস করতেন। তাদের দুটি পুত্র সন্তান আছে। তিনি দিনমজুরের কাজ করতেন। বাসার কাজ শেষ করে ১৮ জুলাই সকালে লেগুনাতে করে জুরাইন কাজে যান। ৫টায় কাজ শেষ করে লেগুনা স্ট্যান্ডে আসেন। এসে লেগুনা না পেয়ে পেয়ে হেঁটে রওনা দেন বাসার উদ্দেশে। যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত এসে দেখতে পান, অনেক মানুষ আহত হয়ে পড়ে আছে।
ওই সময়ের বর্ণনায় তার ভাষ্য, রক্ত দেখে মনে হয়েছে গরু জবাই হয়েছে। কারো হাত নাই, কারো পা নাই, কারো মাথায় রক্ত। যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভারের নিচে ১৮/১৯ বছরের একটা ছেলে আহত হয়ে পড়ে আছে। সে বাঁচার জন্য চিৎকার করছে। সাদা শার্ট, প্যান্ট পরিহিত ছেলেটি রক্তে ভেজা। চোখ দিয়েও রক্ত বের হচ্ছিল। তাকে দেখে পারভীনের মায়া হয়, দৌড়ে যান। ওকে যখন ধরেন তখন সে বাঁচার আকুতি জানান। তিনি তাকে টেনে তোলেন। ছেলেটি তার মাথা পারভীনের ঘাড়ে রাখে। এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখেন কোথাও কিছু (যানবাহন) আছে কি না।
তিনি বলেন, তখন ১৪/১৫ জন সশস্ত্র পুলিশ মারমুখো হয়ে ছেলেটাকে লক্ষ্য করে গুলি করে। গুলি ছেলেটার পিঠে লাগে। পুলিশ ছেলেটাকে এমনভাবে গুলি করছিল, মনে হচ্ছি খই ফুটছিল, টুস টুস শব্দ হচ্ছিল। বাম হাত তুলে পুলিশকে বলি আর গুলি কইরেন না। একটা পুলিশ সাইড হয়ে চোখ বরাবর গুলি করে। গুলি বাম চোখে এসে লাগে।
এ সময় মাঝবয়সী ওই নারী কান্নায় ভেঙে পড়েন। ধরা গলায় ঘটনার বর্ণনায় তিনি বলেন, ২/৩ জন মিলে আরও গুলি করে। তলপেটসহ আরও কয়েক জায়গায় গুলি লাগে। চোখ থেকে এমনভাবে রক্ত বের হচ্ছিল যেন ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হচ্ছিল।
ট্রাইব্যুনালে স্বাক্ষ্য দেওয়ার সময় পারভীন বলেন, তিনি ব্যাথায় কাতরাচ্ছিলেন। শরীর থেকে রক্ত বের হয়ে তিনি দুর্বল হয়ে যান। পরে ছেলেটিসহ তিনি মাটিতে পড়ে যান। ছেলেটা জোরে নিশ্বাস নিয়ে এমনভাবে হাত চেপে ধরে। পরে শরীর থেকে হাত ছেড়ে দেয়। তার মনে হয়েছে ছেলেটা তখনি মারা গেছে। এদিকে ব্যথার যন্ত্রণায় বাঁচাও বাঁচাও করে চিৎকার করে ছটফট করছিলেন তিনি।
এ বর্ণনা দেওয়ার সময় আরেক দফা কাঁদতে শুরু করেন ওই নারী। বলেন, তখন অনেক মানুষ আসে। অনেকে বলে ছেলেটা মারা গেছে। তাকে জীবিত দেখে সিএনজিতে করে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যান। হাসপাতালে নেওয়ার পর তার চোখের ওষুধের জন্য ২৫০ টাকার একটি ড্রপের প্রয়োজন ছিল। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে ঠিকমত চিকিৎসা দেননি বলে অভিযোগ করেন তিনি।
তখন হাসপাতালে একজন নারী এসে তাকে ড্রপ কিনে দেন। চোখে ড্রপ দেওয়া হলে যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকেন পারভীন। ওই দিন হাসপাতালের বারান্দায় পড়ে ছিলেন তিনি। বমি করতে থাকেন। এমন অবস্থা দেখে সেখানকার একজন ফোন নম্বর নিয়ে তার স্বামীকে ফোন করেন, যিনি তখন বরিশালে ছিলেন। পরদিন সকাল ১০টায় হাসপাতালে এসে পৌঁছান।
চিকিৎসক পারভীনের চিকিৎসার জন্য কিছু জিনিসপত্র কিনে আনতে বলেন। তবে পারভীনের স্বামীর কাছে টাকা ছিল না। তিনি যাত্রাবাড়ীর বাসায় গিয়ে পারভীনের কানের দুল বিক্রি করে টাকা জোগাড় করে নিয়ে হাসপাতালে যাচ্ছিলেন। যাওয়ার সময় তাকে মারধর করে কয়েকজন। এতে তার তিনটা সেলাই লাগে। পারভীন বলেন, তার চোখে অপারেশন হয়। চোখ থেকে তিনটা গুলি বের করা হয়। চিকিৎসকরা বলেন, চোখে আরও গুলি আছে। তারা ৩/৪ দিন রেখে তাকে চক্ষু বিজ্ঞান হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। তারা কয়েকটা পরীক্ষা দেন। সিটি স্ক্যানে দেখা যায়, তার চোখে আরও গুলি আছে। পরদিন সকালে চিকিৎসক তাকে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার কথা বলেন। তবে সঙ্গে সঙ্গে অস্ত্রোপচার হয়নি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর অপারেশন হয়। অপারেশন করে চোখ থেকে একটি গুলি বের হয়। তলপেটের গুলির বিষয়ে আদালত জানতে চাইলে তিনি বলেন, তলপেটের গুলি অস্ত্রোপচার করা হয়নি।
পারভীন আদালতকে বলেন, তিনি ৮ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। এই অবস্থায় আদালতে এসেছেন ন্যায়বিচারের জন্য। চিকিৎসার অভাবে বাম চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। ডান চোখে আবছায়া দেখেন। তার অন্ধ হওয়ার জন্য শেখ হাসিনাকে দায়ী করেন তিনি। বলেন, তার দুই সন্তানের কাছে জীবনভর অন্ধ হয়ে গেছেন তিনি।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা পুলিশের বাপ–মা। তার নির্দেশ ছাড়া পুলিশ গুলি করে না। তার নির্দেশে পুলিশ গুলি করে হাজার হাজার মানুষকে আহত ও নিহত করেছে। দুই সন্তানও মায়ের অন্ধত্বের বিচার চায়। এই সরকার থাকাকালে যেন শেখ হাসিনার বিচার হয়। বিচার না হলে সন্ত্রাস বেড়ে যাবে। সঠিক বিচার যদি না হয় তাহলে ভবিষ্যতে যে সরকার আসবে তারাও একইভাবে মানুষ হত্যা করতে দ্বিধা করবে না। ভাববে, হত্যা করলে বিচার তো হয় না।
এরপর আসামিদের পক্ষে তাকে জেরা করেন তাদের আইনজীবী আমির হোসেন। তার সাক্ষ্য শেষে বুধবার পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ট্রাইব্যুনালের কৌঁসুলি গাজী এম এইচ তামিম।