আস্থার সংকট থেকেই চিকিৎসাসেবা প্রার্থীরা বিদেশমুখী হচ্ছে

চিটাগং লাইভের গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা

আজাদী ডেস্ক | বৃহস্পতিবার , ২২ জুন, ২০২৩ at ৯:৪৪ পূর্বাহ্ণ

প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে ৭ লাখের বেশি মানুষ চিকিৎসাসেবা নিতে ভারতসহ বিভিন্ন দেশে যাচ্ছেন। এত হাজার হাজার কোটি টাকা চলে যাচ্ছে দেশের বাইরে। কেন মানুষ দেশের বাইরে চিকিৎসা নিতে যাচ্ছেন এ বিষয়ে আলোচনায় বসেছিলেন চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য খাতের নীতি নির্ধারক, চিকিৎসক,গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব, মানবাধিকার কর্মী, হাসপাতালের প্রতিনিধি ও চিকিৎসা সেবা প্রার্থীরা।

বিদেশে চিকিৎসা : কেন? সংকট নাকি প্রয়োজন’ এ বিষয়ে এক গোল টেবিল বৈঠক গত ১৯ জুন নগরীর একটি হোটেলের কনফারেন্স হলে অনুষ্ঠিত হয়। ডিজিটাল প্লাটফর্ম চিটাগং লাইভ এ আলোচনার আয়োজন করে। চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ডা. ইসমাইল খান এতে মূখ্য আলোচক ছিলেন। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়ার সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. শামীম আহসান, সিএমসির মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. এম এ সাত্তার, শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. বাসনা মুহুরী, বাসস চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান কলিম সরওয়ার, সাংবাদিক তপন চক্রবর্তী, চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন অফিসের প্রতিনিধি ডা. নওশাদ, মা ও শিশু হাসপাতালের ভাইস প্রেসিডেন্ট সৈয়দ মোরশেদ হোসেন, আমিনুল হক বাবু, ডা. আনামুল ইসলাম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন চিটাগং লাইভের প্রতিষ্ঠাতা সাবের শাহ।

চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ ইসমাইল খান বলেন, চিকিৎসাকেন্দ্রের সকল কর্মীকে হেলথ কেয়ার সার্ভিস সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকতে হবে। চিকিৎসকদের লিডারশীপ রোল নিতে হবে। সকলে মিলে সেবাধর্মী হলে সেবাপ্রার্থীরা আস্থা খুঁজে পাবে, তাহলে বিদেশমুখী প্রবণতা কমবে।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. শামীম আহসান বলেন, সক্ষমতার চেয়ে ও ১০ গুণ বেশি রোগী আসে সরকারী হাসপাতালগুলোতে। এতে যে চাপ তৈরি হয়, তাতে সবসময় সেবার মান ধরে রাখা কষ্টসাধ্য। তবে আমাদের চিকিৎসা সেবার সঙ্গে জড়িতদের আরো বেশি আস্থা অর্জন করতে হবে। ডা.বাসনা মুহুরী বলেন, রোগীদের ধৈর্য বাড়াতে হবে, সহনশীল মনোভাব এবং মন মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে এবং চিকিৎসা কেন্দ্র গুলোর দক্ষ জনবল বাড়াতে হবে। সামান্য অসুখে বিশেষজ্ঞ চিতিৎসককেই দেখাতে হবে এ মনোভাব থেকে বেড়িয়ে না এলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের উপর চাপ বাড়তে থাকে এতে অনেক ক্ষেত্রেই সকল সেবা প্রার্থীকে পর্যাপ্ত সময় দেয়া সম্ভব হয় না।

ডা. এম এ সাত্তার বলেন,এই দেশে রেফারেন্স সিস্টেম চালু না থাকার ফলে এবং ডাক্তারের পরামর্শ কে গুরুত্ব না দিয়ে রোগীরা নিজের ইচ্ছানুযায়ী যেকোনো ডাক্তারের শরনাপন্ন হয়। এতে কাঙ্ক্ষিত সেবা না পেয়ে অনেকেই বিদেশমুখী হচ্ছেন।

সাংবাদিক কলিম সরওয়ার বলেন,বেসরকারি হাসপাতাল গুলোর অনাকাঙ্খিত ঘটনা বা পরিস্থিতি ঠিকভাবে সামাল দিতে হবে যাতে রোগীদের মধ্যে আতংকের সৃষ্টি না হয়। রোগ নির্ণয়ে নির্ভুল হতে না পারলে বিদেশ যাওয়ার প্রবণতা কমানো সম্ভব হবে না। রোবটিক সার্জারির মত আধুনিক সার্জারিও আমাদের দেশে হাসপাতালগুলোতে চালু করতে হবে।

সিভিল সার্জন অফিসার প্রতিনিধি নওশাদ খান বলেন , বর্তমানে কেনাকাটা করতে দেশের বাইরে গেলেও সেখানে চিকিৎসা নিয়ে আসছেন অনেকেই অর্থাৎ বাড়ছে বিদেশমুখীতা। বিদেশে চিকিৎসাটা অনেক ক্ষেত্রেই মানুষের প্রয়োজনের চাইতেও একটা কৃত্রিম চাহিদার মত।আমাদের ইনস্যুরেন্স পলিসি এবং রেফারেল সিস্টেম উন্নত করতে হবে।

মা ও শিশু হাসপাতালের ভাইস প্রেসিডেন্ট সৈয়দ মোরশেদ হোসেন বলেন, চিকিৎসা সেবা প্রার্থীর মধ্যে মাত্র ১৬% বিদেশ যাচ্ছেন, বাকি ৮৪% কিন্তু দেশেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। যারা দেশে চিকিৎসা নিচ্ছেন তাদের যদি সর্বোচ্চ সেবাটা আমরা নিশ্চিত করতে পারি তাহলে বাকি ১৬%ও দেশে চিকিৎসা নিবেন।

চিটাগং লাইভের প্রতিষ্ঠাতা সাবের শাহ বলেন, দেশের স্বাস্থ্য খাতের কোন অসঙ্গতির কারণে দেশের মানুষ বিদেশমুখী হচ্ছে এবং এতে দেশের অর্থনীতির যে ক্ষতি সাধন হচ্ছে আলোচনার মাধ্যমে এ বিষয়ে জনমত সৃষ্টির জন্যই এ গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সাইফুদ্দিন মুন্না, চিটাগং লাইভের ব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম ও কন্টেন্ট প্রধান সেঁজুতি বড়ুয়া।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅধিদপ্তরের সাথে সমন্বয় করে কাজ করতে হবে এনজিও সংস্থাগুলোকে
পরবর্তী নিবন্ধসেই তুষারের কণ্ঠে এবার ‘আর বাড়ি তোয়ার বাড়ি’