আশ্রয়ণের ১৬০ সেমিপাকা ঘরের নির্মাণ কাজ শেষ পর্যায়ে

চন্দনাইশের জঙ্গল জামিজুরী আদর্শ গ্রাম

মুহাম্মদ এরশাদ, চন্দনাইশ | শনিবার , ৩০ নভেম্বর, ২০২৪ at ৬:১৪ পূর্বাহ্ণ

চন্দনাইশ উপজেলার দোহাজারী পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ড জঙ্গল জামিজুরী আদর্শ গ্রামে উপজেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে নির্মিত হচ্ছে আশ্রয়ণের ১৬০টি ঘর। ৫ম পর্যায়ে ৩ একর ২০ শতক জমির উপর নির্মাণাধীন এসব ঘর চলতি বছরের গত জুনে নির্মাণ কাজ শেষ করার কথা থাকলেও দুর্গম এলাকায় নির্মাণ সামগ্রী নিতে কষ্টসাধ্য হওয়ায় নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি। তবে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্মাণ কাজ শেষে উপকারভোগীদের নিকট ঘরগুলো হস্তান্তর করার চেষ্টা করছে উপজেলা প্রশাসন।

জানা যায়, ২০০৫ সালে চন্দনাইশ উপজেলার দোহাজারী পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ড জঙ্গল জামিজুরী আদর্শ গ্রামে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে লোহার এঙ্গেল ও টিনসেট দিয়ে ৪০টি ঘর নির্মাণ করে স্থানীয় ভূমি ও গৃহহীনদের নিকট বরাদ্দ প্রদান করা হয়। তখন উপকারভোগীরা ঘরগুলোতে বসবাস শুরু করেন। কিন্তু বাঁধ সাধে বন্যহাতির পাল। তখন প্রায় প্রতিরাতেই বন্যহাতির পাল হানা দিতো আদর্শ গ্রামে। এক পর্যায়ে বন্য হাতির হামলায় প্রাণ হারান আদর্শ গ্রামের এক বাসিন্দা। এরপর থেকেই প্রাণে বাঁচতে একে একে নিজেদের শেষ আশ্রয়স্থল ছেড়ে দেন উপকারভোগীরা। আর এভাবে কয়েক মাসের মধ্যেই বসতি শূন্য হয়ে পড়ে পুরো আদর্শ গ্রামটি। বছরের পর বছর ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়েছিল ঘরগুলো। পরবর্তীতে বিগত ২০২৩/২৪ অর্থবছরে ৫ম পর্যায়ে ওই এলাকায় পুরোনো টিনসেট ঘরগুলো বিলুপ্ত করে নতুন করে ১৬০টি দৃষ্টিনন্দন সেমিপাকা ঘর নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করে সরকার। ঘরগুলোর নির্মাণ কাজ বর্তমানে প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষে উপকারভোগীদের নিকট হস্তান্তরের জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে উপজেলা প্রশাসন।

একাধারে ১৬০টি ঘর নির্মাণ হওয়ায় জামিজুরী আদর্শ গ্রামে আবারো ফিরবে প্রাণচাঞ্চল্য। পাহাড়ের ভিতর কালার টিনের চালা দিয়ে ঘরগুলো নির্মিত হওয়ায় এলাকার সৌন্দর্য্যও বৃদ্ধি পেয়েছে বহুগুণ।

এদিকে স্থানীয় সাধারণ জনগণের দাবি নির্মাণাধীন আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলোর উপরের চালায় কাঠের পরিবর্তে লোহার এঙ্গেল ব্যবহার করলে আরো টেকসই ও মজবুত হতো। ইতিপূর্বে যেসব ঘরে লোহার বদলে কাঠ ব্যবহার করা হয়েছে সেসব ঘরের কাঠগুলো অল্প কিছুদিন পর পোকায় ধরে নষ্ট হয়ে যায়। এতে ভোগান্তিতে পড়তে হয় উপকারভোগীদের।

স্থানীয় সংবাদকর্মী গৌতম দাশ জানান, একসাথে ১৬০টি সেমিপাকা ঘর নির্মাণ করায় জঙ্গল জামিজুরী এলাকায় আবারো ফিরবে মানুষের আনাগোনা। তবে এসব ঘর বরাদ্দপ্রাপ্তদের যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো নয়। আদর্শ গ্রামের সাথে যোগাযোগ স্থাপনকারী সাতছড়িখালে ইতিপূর্বে নির্মিত ব্রিজটি ভেঙে যাওয়ায় যোগাযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে। বিশেষ করে বর্ষাকালে পুরোপুরি যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায়। আদর্শ গ্রামের বসবাসকারীদের যোগাযোগ ব্যবস্থা সচল করতে সাতছড়ি খালে ব্রিজটি পুনঃনির্মাণ করা খুবই জরুরি।

চন্দনাইশ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলমগীর জানান, দোহাজারী পৌরসভার জঙ্গল জামিজুরীতে নির্মাণাধীন ১৬০টি ঘর সিডিউল অনুযায়ী প্রতিটি ঘর ২২/২০ ফুট সাইজের এবং উপরের চালা কাঠ দিয়ে ডিজাইন অনুযায়ীই টেকসইভাবে তৈরি করা হচ্ছে। আশাকরি আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই ঘরগুলোর নির্মাণ কাজ শেষ হবে এবং যাচাইবাছাই করে উপকারভোগীদের নিকট হস্তান্তর করা হবে। আদর্শ গ্রামে যাতায়াত স্থাপনকারী সাতছড়িখালে নতুন ব্রিজ নির্মাণের ব্যাপারে ইতিমধ্যে একটি প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। এ ব্যাপারে এলজিইডি অফিসকেও অবহিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

চন্দনাইশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাজিব হোসেন জানান, দোহাজারী জঙ্গল জামিজুরীতে নির্মিত ১৬০টি পরিবারের জন্য বিদ্যুৎ সংযোগ, সুপেয় পানির ব্যবস্থা এবং তাদের নিরাপত্তার জন্য চারপাশে কাটা তার ও সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হবে। এছাড়াও বসবাসের সময় উপকারভোগীদের যাতে কোনো ধরনের অসুবিধা না হয় সেজন্য বিভিন্ন পরিকল্পনাও বাস্তবায়ন করা হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধময়লাকে সম্পদে পরিণত করতে প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে : মেয়র
পরবর্তী নিবন্ধমহাবিপন্ন চশমা পরা হনুমান কেন লোকালয়ে