আলোচনার টেবিলে আসো, না হলে আরো বড় হামলা হবে

ইরানে হামলার পর ট্রাম্পের হুমকি

| সোমবার , ২৩ জুন, ২০২৫ at ৬:১১ পূর্বাহ্ণ

ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলার কিছুক্ষণের মধ্যেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি ভাষণ দেন। তার বক্তব্য যুক্তরাষ্ট্রের টেলিভিশনে সরাসরি প্রচার করা হয়। ইরান শান্তি অলোচনায় না বসলে তাদের ওপর আরো হামলা চালানো হবে বলে মন্তব্য করেন ট্রাম্প।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট তার ভাষণে বলেন, ‘আলোচনার টেবিলে আসো, নাহলে ইরানের জন্য গত আট দিনের চেয়েও বড় ট্র্যাজেডি আসবে।’ তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘মনে রাখুন, এখনো অনেক লক্ষ্য বাকি আছে। আজ রাতের লক্ষ্য ছিল সবচেয়ে কঠিন। কিন্তু যদি দ্রুত শান্তি না আসে, আমরা বাকি লক্ষ্যগুলোতেও নিখুঁত দক্ষতা, গতি ও শক্তি নিয়ে আঘাত হানব।’

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে অভিনন্দন জানিয়ে ট্রাম্প বলেন, ইসরায়েলের জন্য ‘ভয়াবহ হুমকি’ মোকাবেলায় তারা ‘একটি দল’ হিসেবে কাজ করছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ওপর পাল্টা হামলা চালালে ইরানের পরিণতি দ্বিগুণ খারাপ হবে বলে সতর্ক করেন ট্রাম্প। এদিকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এক ভিডিও বার্তায় ইরানে হামলার সিদ্ধান্তের জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘অভিনন্দন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যায়সঙ্গত ও অসাধারণ শক্তি দিয়ে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোকে নিশানা করার যে সাহসী সিদ্ধান্ত আপনি নিয়েছেন, তা ইতিহাস বদলে দেবে।’

ট্রাম্প শান্তির নোবেল জিততে পারবেন না: রাশিয়ার নিরাপত্তা পরিষদের ডেপুটি চেয়ারম্যান দিমিত্রি মেদভেদেভ বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের পদক্ষেপের বিরুদ্ধে অবস্থান বিশ্বের বেশিরভাগ দেশের। ইরানের হামলার পর টেলিগ্রাম চ্যানেলে তিনি বলেছেন, ‘ট্রাম্পযিনি একসময় নিজেকে শান্তির দূত হিসেবে তুলে ধরেছিলেন, তিনিই এখন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি নতুন যুদ্ধ শুরু করেছেন। যুক্তরাষ্ট্র এখন একটি নতুন সংঘাতে জড়িয়ে গেছে, যেখানে স্থল অভিযানের সম্ভাবনা রয়েছে। এই সাফল্য নিয়ে ট্রাম্প শান্তির নোবেল জিততে পারবেন না।’

ইরানইসরায়েল সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রকে জড়িয়ে বড় জুয়া খেলছেন ট্রাম্প :শান্তির দূতহওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে জানুয়ারিতে হোয়াইট হাউজে ফেরা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ক্ষমতা নেওয়ার পর থেকে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ফিরিয়ে আনা তো দূর, এখন এমন এক অঞ্চলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন যা আরও বড় যুদ্ধের বিপজ্জনক পথে আছে এমন একটি যুদ্ধ যেখানে যুক্তরাষ্ট্র সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করছে।

এ পরিস্থিতি দ্রুত জটিল হয়ে উঠতে পারে। এখন অপেক্ষার পালা শুরু। ইরান তাদের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার জবাব কীভাবে দেবে? এই তিন স্থাপনার মধ্যে ফোরদো পারমাণবিক কেন্দ্রও রয়েছে, যেটিকে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির রাজকীয় মুকুট হিসেবেই হিসেবে দেখা হয়। ট্রাম্প হয়ত আশা করছেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের হামলার মুখে ইরান আলোচনার টেবিলে আরও বেশি ছাড় দিতে বাধ্য হবে। কিন্তু এমন সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। কারণ, যে দেশটি ইসরায়েলি হামলার মুখেও পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনায় রাজি হয়নি, তারা যুক্তরাষ্ট্রের বোমা পড়ার মধ্যে আলোচনায় বসতে আরও আগ্রহী হবেএমনটি ভাবা কঠিন।

এই ঝুঁকির মধ্যে আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার বিষয়টির পাশাপাশি দেশীয় রাজনৈতিক উদ্বেগের মতো বিষয়ও আছে। ট্রাম্প যখন ইরানে হামলা চালাবেন কিনা তা নিয়ে একেক বার একেক কথা বলছিলেন, তখনই যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া সম্ভাবনা আঁচ করে অনেকেই এর বিরোধিতা করেছিলেন এবং সমালোচনায় সরব হয়েছিলেন। এই হামলা যদি যুক্তরাষ্ট্রকে আরও বৃহত্তর সংঘাতের দিকে ঠেলে দেয়, তাহলে প্রেসিডেন্ট তার দলের ভেতরেই প্রতিরোধের মুখে পড়তে পারেন।

প্রথম মেয়াদে কোনও নতুন যুদ্ধ শুরু না করা নিয়ে গর্ব করে আসা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জন্য শনিবার রাতে ইরানে হামলা করাটা ছিল একটি আগ্রাসী পদক্ষেপ। গত বছর নির্বাচনি প্রচারে বিদেশের সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রকে জড়ানো নিয়ে পূর্বসূরিদের বিরুদ্ধে নিয়মিতই সমালোচনা করে আসা ট্রাম্প এবার নিজেও সেই পথে হাঁটলেন। ট্রাম্প তার পদক্ষেপ নিয়ে নিয়েছেন। কিন্তু এখান থেকে তা কোথায় গড়াবে সে বিষয়টি মোটেও তার নিয়ন্ত্রণে নেই।

পূর্ববর্তী নিবন্ধযুক্তরাষ্ট্রের হামলা অমার্জনীয়, জবাব দেবে ইরান : আরাগচি
পরবর্তী নিবন্ধইরানে চলমান সংঘাত নিয়ে বাংলাদেশের উদ্বেগ