চট্টগ্রামকে বিনিয়োগের জন্য স্বর্ণভূমি উল্লেখ করে আলজেরিয়াকে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। ইপিজেড, বন্দরসহ ব্যাপক বাণিজ্যিক অবকাঠামো থাকায় এখানে বিনিয়োগ করলে আলজেরিয়া লাভবান হবে বলে দেশটির রাষ্ট্রদূত ডা. আবদেল ওহাব সাইদানিকে জানিয়েছেন সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। এ সময় ডা. আবদেল ওহাব সাইদানি আলজেরিয়ার রাষ্ট্রীয় তেল ও গ্যাস প্রতিষ্ঠান সোনাট্রাখ বাংলাদেশে বিনিয়োগ সম্ভাব্যতা যাচাই করবে বলে জানান মেয়রকে।
গতকাল বিকেলে নগর ভবনের টাইগারপাস অস্থায়ী কার্যালয়ে সিটি মেয়রের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন আলজেরিয়ার রাষ্ট্রদূত। এ সময় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম ও সচিব মোহাম্মদ আশরাফুল আমিন।
ডা. শাহাদাত রাষ্ট্রদূতকে বলেন, চট্টগ্রাম শহরের যোগাযোগ অবকাঠামোকে ঢেলে সাজাতে আড়াই হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে কর্পোরেশন। নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনেও নেয়া হয়েছে একাধিক প্রকল্প। ফলে বৈদেশিক বিনিয়োগের জন্য চট্টগ্রাম একটি আদর্শ স্থানে পরিণত হয়েছে। আলজেরিয়া এই সুবর্ণ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ব্যাপক বিনিয়োগের মাধ্যমে লাভবান হতে পারে।
মেয়র বলেন, আলজেরিয়ার সাথে সাংস্কৃতিক বিনিময়, শিক্ষার্থী বিনিময় প্রোগ্রাম এবং ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেয়ার মাধ্যমে আমরা আমাদের সম্পর্ককে আরও মজবুত করতে পারি। আমাদের দুই দেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি একে অপরকে সমৃদ্ধ করতে পারে। শাহাদাত বলেন, জাতিসংঘ, ওআইসি এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক ফোরামে আমরা একে অপরকে সমর্থন করে আসছি। এই সহযোগিতা বিশ্বশান্তি ও উন্নয়নের জন্য আমাদের একতাবদ্ধ অবস্থানের প্রমাণ। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, বাংলাদেশ ও আলজেরিয়ার সম্পর্ক কেবল কূটনৈতিক ক্ষেত্রেই নয়, অর্থনীতি, সংস্কৃতি এবং শিক্ষা ক্ষেত্রেও আরও সমৃদ্ধ হবে। আমরা সকলে একসঙ্গে কাজ করলে এ বন্ধন আরও দৃঢ় মজবুত হবে।
তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সময় থেকে আলজেরিয়া আমাদের প্রতি সমর্থন জুগিয়ে আসছে। আলজেরিয়া ছিল সেই দেশগুলোর মধ্যে একটি, যারা প্রথম দিকেই আমাদের স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দিয়েছিল। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এবং আলজেরিয়ার মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্কের আরও উন্নয়নের সুযোগ রয়েছে। আমরা ইতোমধ্যেই আলজেরিয়ায় আমাদের বিশ্বমানের পোশাক রপ্তানি করছি এবং তাদের কাছ থেকে কৃষি পণ্য ও জ্বালানি খাতে সহযোগিতার সুযোগ রয়েছে। আমাদের লক্ষ্য হবে এই সম্ভাবনাগুলোকে কাজে লাগিয়ে দুই দেশের অর্থনীতির উন্নয়ন আরও তরান্বিত করা।
রাষ্ট্রদূত ডা. আবদেল ওহাব সাইদানি বলেন, আলজেরিয়ার রাষ্ট্রীয় তেল ও গ্যাস প্রতিষ্ঠান সোনাট্রাখ আফ্রিকার বৃহত্তম এবং বিশ্বের ১৫তম বৃহত্তম তেল ও গ্যাস কোম্পানি। সোনাট্রাখ আলজেরিয়ায় তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান, উত্তোলন, পরিবহন ও বিপণনের দায়িত্বে রয়েছে। সোনাট্রাখ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন শক্তি প্রকল্পে বিনিয়োগ করে থাকে। বাংলাদেশে এ প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ সম্ভাব্যতা যাচাই করা হবে। আমি আলজেরিয়ার অন্য শিল্পখাতগুলোকেও বাংলদেশে বিনিয়োগ করতে বলব।
তিনি বলেন, আলজেরিয়ার ভিসা পাওয়ার প্রক্রিয়া অত্যন্ত সহজ ও দ্রুত হওয়ায় বাংলাদেশিরা আলজেরিয়ায় বিনিয়োগ ও বিনোদনের জন্য সহজে ভ্রমণ করতে পারে। রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশ মুসলিম দেশ হওয়ায় এবং আলজেরিয়া মুসলিম অধ্যুষিত দেশ হওয়ায় বাংলাদেশ আলজেরিয়ায় খাদ্যপণ্য, মেডিসিন, কৃষিজ পণ্য রপ্তানি করতে পারে। বাংলাদেশের গার্মেন্টস খাতসহ বেশ কিছু শিল্পখাত আলজেরিয়াতে কারখানা স্থাপন করে আফ্রিকাতে বাজার সমপ্রসারণ করতে পারে। আলজেরিয়া আফ্রিকা ও ইউরোপের বেশ কিছু দেশের সাথে নিকটবর্তী হওয়ায় দ্রুত পণ্য সরবরাহের সুবিধার মাধ্যমে বাংলাদেশের শিল্পখাত লাভবান হতে পারে।