চতুর্থ দফায় ২০ দিনের ‘বিশেষ পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচি’ গ্রহণ করেছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। মশার উপদ্রব নিয়ন্ত্রণ ও পরিচ্ছন্ন কার্যক্রমে জোর দেয়া হবে এ কর্মসূচিতে। মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর ঘোষিত ১০০ দিনের কর্মপরিকল্পনাকে সামনে রেখে নগরের ৪১ ওয়ার্ডে এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবে পরিচ্ছন্ন বিভাগ। এতে সহযোাগিতা করবেন স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরগণ। এ লক্ষ্যে একটি রোডম্যাপও তৈরি করা হয়েছে।
প্রণীত রোডম্যাপ অনুযায়ী, এবারের কর্মসূচি ২১ এপ্রিল থেকে ১০ মে পর্যন্ত চলবে। কর্মসূচি বাস্তবায়নে কাজ করবে ২৩২ জন পরিচ্ছন্ন কর্মী। প্রতিটি ওয়ার্ডে পর পর দুইদিন ৫৭ জন করে পরিচ্ছন্ন কর্মী কাজ করবে। এর মধ্যে ৫০ জন নালা-নর্দমা পরিষ্কার করবে। পাঁচজন হ্যান্ড স্প্রে ও দুইজন ফগার মেশিন দিয়ে মশার কীটনাশক ছিটাবে। কীটনাশক হিসেবে ব্যবহার করা হবে এলডিও (কালো তেল নামে পরিচিত) এবং ‘লার্ভিসাইড’ (মশার লার্ভা ধ্বংসের কীটনাশক)। পূর্ণাঙ্গ মশা ধ্বংসকারী ‘এডাল্টিসাইড’ পর্যাপ্ত মজুদ নেই।
প্রসঙ্গত, প্রথম দফায় গত ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে ১১ মার্চ, দ্বিতীয় দফায় ১২ মার্চ থেকে ৩১ মার্চ এবং তৃতীয় দফায় ১ এপ্রিল থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত মোট ৬০ দিন কর্মসূচি পালিত হয়। চর্তুথ দফা শেষ হলে ৮০ দিন পূর্ণ হবে। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি দায়িত্ব নিয়ে মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী সমাবেশ করে ১০০ দিনের কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করেন। এতে মশার উপদ্রব নিয়ন্ত্রণ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা অগ্রাধিকার পাবে বলেও জানিয়েছিলেন। এর আলেকেই ‘বিশেষ পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচি’ গ্রহণ করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী দৈনিক আজাদীকে বলেন, আমার যে প্রতিশ্রুতি ছিল তা বাস্তবায়নের চেষ্টা করছি। করোনা পরিস্থিতি ও লকডাউনে আমরা বসে নাই। বিশেষ ক্রাশ প্রোগ্রাম করে পরিচ্ছন্ন শহর গড়তে কাজ করে যাচ্ছি। মশক নিধনে কীটনাশক ছিটাচ্ছি। তবে মশা যেভাবে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি সেভাবে হচ্ছে না। এর কারণ তিন ফুটের অধিক নালা সিডিএ’র মেগাপ্রকল্পের আওতাধীন। সেখানে প্রচুর ময়লা-আবর্জনা জমে আছে। এবং বিভিন্ন জায়গায় খালেও বাঁধ দেয়া আছে। এতে পানি জমাট হয়ে আছে। এসব জায়গায় কীটনাশক ছিটানোর পরও মশা কমছে না। বদ্ধ জলাশয়ে মশার উৎপত্তি হওয়া স্বাভাবিক। তাই আশানুরুপ সাফল্য পাচ্ছি না। এরপরও আমাদের চেষ্টা থেমে নেই।
তিনি বলেন, খাল-নালা যেগুলো বন্ধ রয়েছে সেগুলো আগামী মে মাসের মধ্যে সরিয়ে নিতে সিডিএকে আমরা আহবান করেছিলাম। তারাও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। সিডিএ চেয়ারম্যানও এ ক্ষেত্রে আন্তরিক। এ বিষয়ে দুইপক্ষে বৈঠক হয়েছে। সর্বশেষ গত সপ্তাহে আমি দুই সংস্থার প্রকৌশলীদের সরেজমিন তদন্তে পাঠিয়েছিলাম। আসলে বাঁধগুলো না সরালে সামনে বর্ষায় জলাবদ্ধতা তীব্র হবে। তাই মে মাসের মধ্যে বাঁধগুলো সরিয়ে নিতে সিডিএ’র প্রতি আবারো আহবান জানানো হয়েছে।
এদিকে প্রণীত কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী গতকাল প্রথমদিনে পূর্ব ষোলশহর, পশ্চিম ষোলশহর, চকবাজার, পশ্চিম বাকলিয়া ওয়ার্ডে কর্মসূচি পালিতে হয়। আজও ওয়ার্ডগুলোতে পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম চলবে।
এছাড়া ২৩ ও ২৪ এপ্রিল শুলকবহর, বাগমনিরাম, পূর্ব বাকলিয়া ও দক্ষিণ বাকলিয়া ওয়ার্ডে, ২৫ ও ২৬ এপ্রিল চান্দগাঁও, মোহরা, জামালখান ও এনায়েত বাজার ওয়ার্ডে, ২৭ ও ২৮ এপ্রিল জালালাবাদ, পাঁচলাইশ, পাহাড়তলী ও লালখান বাজার ওয়ার্ডে, ২৯ ও ৩০ এপ্রিল পশ্চিম মাদার বাড়ি, পূর্ব মাদার বাড়ি, পাথরঘাটা ও বঙিরহাট ওয়ার্ডে, ১ ও ২ মে উত্তর আগ্রাবাদ, দক্ষিণ আগ্রাবাদ, আন্দরকিল্লা, ফিরিঙ্গি বাজার ওয়ার্ডে, ৩ ও ৪ মে উত্তর পাহাড়তলী, উত্তর কাট্টলী, গোসাইলডাঙ্গা, হালিশহর ওয়ার্ডে, ৫ ও ৬ মে দক্ষিণ মধ্যম হালিশহর, দক্ষিণ হালিশহর, উত্তর পতেঙ্গা ও দক্ষিণ পতেঙ্গা ওয়ার্ডে, ৭ ও ৮ মে দক্ষিণ পাহাড়তলী, দক্ষিণ কট্টলী, দেওয়ানবাজার ও উত্তর হালিশহর ওযার্ডে এবং ৯ ও ১০ মে সরাইপাড়া ও উত্তর পাঠানটুলী ওয়ার্ডে কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে।
চসিকের অতিরিক্ত প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মো. মোরশেদুল আলম চৌধুরী আজাদীকে বলেন, মেয়র মহোদয়ের নির্দেশে ২০ দিনের বিশেষ কর্মসূচি করে তা বাস্তবায়ন করছি। এর বাইরে নিয়মিত কার্যক্রমও পরিচালিত হচ্ছে। স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরগণ ওয়ার্ড পর্যায়ে যেখানে প্রয়োজন সেখানে পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম ও কীটনাশক ছিটানোর জায়গা নির্ধারণ করে দিচ্ছেন।