আসন্ন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রতিটা প্যানেল আস্তে আস্তে ইশতেহার ঘোষণা করছে। গতকাল নতুন তিনটি প্যানেল তাদের ইশতেহার ঘোষণা দিয়েছেন। জানান দিতে চাচ্ছেন নির্বাচিত হলে শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কি ধরনের কাজ করবেন তারা।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ২টা থেকে বিকেল সাড়ে ৫টার মধ্যে চাকসু ভবন ও বুদ্ধিজীবী চত্বরে পৃথক সংবাদ সম্মেলনে ‘বৈচিত্র্যের ঐক্য’, ‘সচেতন শিক্ষার্থী সংসদ’ এবং ‘অহিংস শিক্ষার্থী ঐক্য’ প্যানেল নিজেদের ইশতেহার প্রকাশ করেছেন। তারা শিক্ষার্থীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা, আবাসন সংকট নিরসন ও উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রতিশ্রুতি দেন।
‘বৈচিত্র্যের ঐক্য’ প্যানেলের ৮ দফা ইশতেহার : বামপন্থি ছাত্র সংগঠনগুলোর সমন্বয়ে গঠিত ‘বৈচিত্র্যের ঐক্য’ প্যানেল ৮ দফা ইশতেহার ঘোষণা করেছে। এতে গুরুত্ব পেয়েছে নিরাপদ ক্যাম্পাস গড়ে তোলা, আবাসন সমস্যা সমাধান, পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন, খাদ্য ও স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়ন, গবেষণা ও শিক্ষার বিকাশ, সংস্কৃতি ও ক্রীড়া কার্যক্রমে অংশগ্রহণের সুযোগ বৃদ্ধি, জাতিগত বৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং নারীবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিতকরণ।
সংবাদ সম্মেলনে ইশতেহার ঘোষণা করেন ভিপি প্রার্থী ধ্রুব বড়ুয়া। তিনি বলেন, বিভিন্ন জাতি, ধর্ম, লিঙ্গ ও মতের শিক্ষার্থীদের ঐক্যের মাধ্যমে একটি অংশীদারিত্বমূলক, গণমুখী ও নিরাপদ ক্যাম্পাস গড়ে তোলাই আমাদের লক্ষ্য। আমরা গণসংগ্রামের চেতনা ধারণ করে একটি আধিপত্যবিরোধী ছাত্র রাজনীতির সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করতে চাই।
‘বৈচিত্র্যের ঐক্য’ প্যানেলে জিএস পদে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সুদর্শন চাকমা এবং এজিএস পদে বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি জশদ জাকির প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। প্রায় ১০টি বাম সংগঠনের সমন্বয়ে এই পূর্ণাঙ্গ প্যানেলটি গঠিত হয়েছে।
‘সচেতন শিক্ষার্থী সংসদ’ প্যানেলের ১২ দফা ইশতেহার : ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ সমর্থিত ‘সচেতন শিক্ষার্থী সংসদ’ প্যানেল ১২ দফা ইশতেহার ঘোষণা করেছে। এতে স্বাস্থ্য, আইন ও মানবাধিকার, যোগাযোগ ও আবাসন এবং মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন এই চারটি বিভাগে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। ইশতেহার ঘোষণা অনুষ্ঠানে ভিপি প্রার্থী আব্দুর রহমান রবিন বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় দেশের অন্যতম উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হলেও শিক্ষার্থীরা আবাসন সংকট, নিম্নমানের খাবার, দুর্বল চিকিৎসা সেবা, সীমিত ক্রীড়া–সংস্কৃতি চর্চার সুযোগ এবং গবেষণার বাজেট ঘাটতির মতো নানা সমস্যায় ভুগছে। এসব সমস্যার সমাধানেই আমাদের শিক্ষার্থীবান্ধব ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্যানেল।
‘সচেতন শিক্ষার্থী সংসদ’ প্যানেলে জিএস পদে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের আব্দুর রহমান এবং এজিএস পদে আরবি বিভাগের মো. রাকিব প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
‘অহিংস শিক্ষার্থী ঐক্য’ প্যানেলের ১৬ দফা ইশতেহার : ‘অহিংস শিক্ষার্থী ঐক্য’ প্যানেল ১৬ দফা ইশতেহারে আবাসন সংকট নিরসন, শাটল ট্রেনের শিডিউল বৃদ্ধি, খাবারের মানোন্নয়ন, অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের জন্য মেধাবৃত্তি প্রদান, মেডিকেল অ্যাম্বুলেন্স সেবা বৃদ্ধি ও দ্রুতকরণের মতো দাবিগুলো তুলে ধরে। প্যানেলের জিএস প্রার্থী মোহাম্মদ ইয়াছিন উদ্দীন বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বর্তমানে দীর্ঘ সেশন জট, আবাসন সংকট, অপর্যাপ্ত শাটল ট্রেন, সুপেয় পানির অভাব এবং নিরাপত্তাহীনতার মতো নানা সমস্যায় জর্জরিত। এসব সমস্যা দূর করতে শিক্ষার্থীদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
সুফিবাদী আদর্শে বিশ্বাসী এই অরাজনৈতিক শিক্ষার্থীদের প্যানেলে ভিপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের মুহাম্মদ ফরহাদুল ইসলাম এবং এজিএস পদে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের মুহাম্মদ শহীদুল ইসলাম শাহেদ।
আগামী ১৫ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সপ্তম চাকসু নির্বাচন। এখন পর্যন্ত মোট ১৩টি প্যানেল নির্বাচনে অংশগ্রহণের ঘোষণা দিয়েছেন। দীর্ঘ ৩ যুগ পর অনুষ্ঠিত হবে শিক্ষার্থীদের বহুল আকাঙ্ক্ষিত এই চাকসু নির্বাচন।