কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলা জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালত একটি মাদক মামলার (জিআর–৪৭/২০১৭) রায় দিয়েছেন। রায়ে অভিযুক্ত পাঁচ আসামির মধ্যে একজনকে এক বছর কারাদণ্ড, বাকি চারজনকে ৬ মাস করে কারাদণ্ডাদেশ ছাড়াও নগদ পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করেন। জরিমানার এই টাকা অনাদায়ে আরো ১৫ দিন করে হাজতবাস করারও দণ্ডাদেশ দেন।
তবে দণ্ডাদেশ দেওয়া পাঁচ আসামির মধ্যে দোষী সাব্যস্ত হওয়া দুজন স্বামী–স্ত্রী হওয়ায় তাদেরকে প্রবেশন হিসেবে কৃতকর্মের দায় থেকে সংশোধনের সুযোগ দিয়েছেন বিচারক রাজীব কুমার দেব। গত সোমবার দেওয়া এই রায়ে হাজতবাস না করে দুই প্রবেশন আসামি চকরিয়া পৌরসভার চিরিঙ্গা নাথপাড়ার বাসিন্দা হিরু চৌধুরী ও তার স্ত্রী রীনা চৌধুরীকে আদালত ৬টি শর্ত দেন। রায়ে শর্তগুলো প্রতিপালন করার জন্য কঠোর নির্দেশনাও দেন। জানা গেছে, বিচারক রাজীব কুমার দেব ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি মামলায় আলোচিত রায় দিয়েছেন। অপর তিন আসামি হলেন এক বছরের সাজাপ্রাপ্ত বাদল দাশের ছেলে কুশা দাশ, ৬ মাস করে সাজাপ্রাপ্ত সৈয়দ রহমানের ছেলে মোহাম্মদ হানিফ ও সুকুমার নাথের ছেলে সুমন চন্দ্র নাথ। সুমন পলাতক রয়েছেন। অপর দুজনকে আদালত জেলহাজতে প্রেরণ করেন।
শর্তগুলো হলো, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসারের তত্ত্বাবধানে আগামী এক বছর পর্যন্ত সপ্তাহের শনি, সোম ও বুধবার হাসপাতালের ‘প্রাত্যহিক সেবামূলক কর্ম’ করবেন এবং প্রতি শুক্রবার সকাল সাতটা থেকে দুপুর দুটা পর্যন্ত পৌরশহরের দুই নম্বর ওয়ার্ডের হিন্দুপাড়ার হরিমন্দিরে পুরোহিত বা সেবায়েত অথবা মন্দির কমিটির সভাপতি/সম্পাদক কর্তৃক নির্ধারিত মন্দির পরিচর্যা, ভক্তদের প্রসাদ বিতরণসহ অন্যান্য কার্যাদি সম্পাদন করবেন।
অপর শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে, কোনোরূপ অপরাধের সঙ্গে জড়িত হবেন না বা একই ধরনের অপরাধ আর করবেন না। শান্তি বজায় রাখবেন এবং ভালো ব্যবহার করবেন। কোর্ট ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তলব করলে যথাসময়ে উপস্থিত হবেন। কোনোরূপ মাদক বা নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবন করবেন না।
আদেশে বলা হয়, আসামিগণ প্রবেশনের কোনো শর্ত ভঙ্গ করলে বা তাদের আচরণ সন্তোষজনক না হলে তাদের প্রবেশন বাতিল করা হবে এবং অপরাধের জন্য শান্তি ভোগ করবেন। এই সময়ের মধ্যে আসামিরা উপযুক্ত জিম্মাদারের মাধ্যমে জামিনে থাকবেন এবং দ্রুত জামিননামা দাখিল করবেন, প্রবেশনের সকল শর্ত পালন করবেন মর্মে বন্ড দাখিল করবেন। প্রবেশন কর্মকর্তা হিসেবে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা অত্র আদেশের সকল শর্ত প্রতিপালন হচ্ছে কিনা তা নিয়মিত তত্ত্বাবধান ও তদারকি করে তিন মাস পরপর আদালতকে অবহিত করবেন।
এই রায়ের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের প্রধান কৌঁসলি উপজেলা জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতের আইনজীবী মিফতাহ্ উদ্দিন আহমদ। তিনি আজাদীকে বলেন, সংশোধনের সুযোগ দিয়ে দোষী সাব্যস্ত হওয়া আসামি স্বামী–স্ত্রীকে প্রবেশন সাজা দিয়েছেন আদালতের বিজ্ঞ বিচারক। ২৭ জানুয়ারি প্রবেশনের সুযোগপ্রাপ্ত দুই আসামিকে প্রবেশন কর্মকর্তার (সমাজসেবা কর্মকর্তা) নিকট উপস্থাপন করা হবে।












