আশ্বিনের মধ্যভাগে এসে কয়েকদিন বৃষ্টির পর দেশজুড়ে যে ভ্যাপসা গরম অনুভূত হচ্ছে, তাতে আরও একদিন ভোগার পর বৃষ্টির দেখা মিলতে পারে। আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক গতকাল রোববার বিকালে বলেন, দেশের অধিকাংশ জায়গাতেই ভ্যাপসা গরম অনুভূত হচ্ছে। এটি আরও একদিন অব্যাহত থেকে পরশুদিন থেকে প্রশমিত হতে পারে। সেই সঙ্গে মঙ্গলবার থেকে দেশের প্রায় সব বিভাগেই বৃষ্টিপাত হতে পারে, আর তিন থেকে চার দিন বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে। খবর বিডিনিউজের।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের গতকাল সকাল ৯টার নিয়মিত বুলেটিনে বলা হয়েছে, মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের উপর মোটামুটি সক্রিয় থাকায় ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায়; ঢাকা বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হতে পারে। আর ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। সারা দেশে দিনে ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় পরিবর্তিত থাকতে পারে। গেল ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা নথিবদ্ধ করা হয়েছে যশোরে; ৩২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর সর্বনিম্ন ২২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা নথিবদ্ধ করা হয়েছে তেঁতুলিয়ায়। এই সময়ে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে ময়মনসিংহের নেত্রকোনায় ৩৭ মিলিমিটার। এছাড়া সিলেটে ৩২, তেঁতুলিয়ায় ৩০, দিনাজপুরে ২৮, নীলফামারীর ডিমলায় ২৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত নথিবদ্ধ করা হয়েছে।
বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি : ভারী বৃষ্টির প্রবণতা কমে যাওয়ায় তিস্তার একটি পয়েন্ট ছাড়া দেশের প্রায় সব নদ–নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে রয়েছে। ফলে, বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।
গতকাল রোববার কেন্দ্রের নিয়মিত বুলেটিনে বলা হয়, তিস্তা নদীর পানি গতকাল সকালে রংপুরের কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। আর ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানি বাড়লেও বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
আবহাওয়া সংস্থাগুলোর বরাত দিয়ে বুলেটিনে বলা হয়, রংপুর বিভাগ ও এর সংলগ্ন উজানে অতি ভারী বৃষ্টির প্রবণতা কমে এসেছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানি বাড়তে পারে এবং পরের দুই দিন কমতে পারে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলার তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে চরাঞ্চল ও কিছু নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে।
এর পরের দুই দিনে তিস্তা নদীর পানি কমে বিপৎসীমার নিচে প্রবাহিত হতে পারে। অন্যদিকে আগামী তিনদিন কুড়িগ্রাম জেলার ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। আর রংপুর বিভাগের আপার করতোয়া, আপার আত্রাই, পূণর্ভবা, ইছামতি–যমুনা, ঘাঘট ও যমুনেশ্বরী নদীর পানি বাড়ছে এবং বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। টাঙন নদীর পানি কমছে। আগামী ২৪ ঘণ্টা রংপুর বিভাগের এসব নদীর পানি স্থিতিশীল থাকতে পারে এবং পরবর্তী দুদিনে নদীর পানি কমতে পারে।
রংপুর বিভাগের ব্রহ্মপুত্র নদী ও তার ভাটিতে যমুনা নদীর পানি বাড়ছে এবং বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী দুদিন ব্রহ্মপুত্র–যমুনা নদীর পানি বাড়তে পারে এবং পরবর্তী তিন দিন স্থিতিশীল থাকতে পারে, তবে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে।
পূর্বাভাস কেন্দ্রের বুলেটিনে বলা হয়, রাজশাহী বিভাগের গঙ্গা নদীর পানি কমছে ও ভাটিতে পদ্মা নদীর পানি স্থিতিশীল রয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টা গঙ্গা–পদ্মা নদীর পানি ধীর গতিতে কমতে পারে। পরবর্তী একদিন পানি স্থিতিশীল থাকতে পারে এবং পরবর্তী তিন দিন বাড়তে পারে। তবে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে।
রাজশাহী বিভাগের করোতয়া, আত্রাই, বাঙ্গালী ও ছোট যমুনা নদীর পানি বাড়ছে। অন্যদিকে মহানন্দা নদীর পানি স্থিতিশীল আছে এবং বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় রাজশাহী বিভাগের এসব নদীর পানি বাড়তে পারে, যা পরবর্তী একদিন স্থিতিশীল থাকতে পারে। তবে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। পরবর্তী একদিন নদীর পানি কমতে পারে।
বন্যার বুলেটিন বলছে, সিলেট বিভাগের সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি স্থিতিশীল আছে এবং বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী তিন দিন নদীর পানি বাড়তে পারে, তবে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। মনু, খোয়াই, ধলাই, ভুগাই ও সোমেশ্বরী নদীর পানি কমছে, অন্য দিকে সারিগোয়াইন ও কংস নদীর পানি স্থিতিশীল আছে। এবং বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী একদিন এসব নদীর পানি কমতে পারে এবং পরবর্তী দুদিন নদীর পানি স্থিতিশীল থাকতে পারে।
চট্টগ্রাম বিভাগের মুহুরী, ফেনী, হালদা, মাতামুহুরী, গোমতী নদীর পানি কমছে, অন্য দিকে শঙ্খ নদীর পানি স্থিতিশীল আছে এবং বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় এসব নদীর পানি কমতে পারে।
বুলেটিনে বলা হয়েছে, এর পরের দুদিন চট্টগ্রাম বিভাগ ও এর সংলগ্ন উজানে ভারী বৃষ্টি হতে পারে। যার ফলে চট্টগ্রাম বিভাগের মুহুরী, গোমতী ও ফেনী নদীর পানি বাড়তে পারে, তবে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। অন্য দিকে হালদা, মাতামুহুরী ও শঙ্খ নদীর পানি স্থিতিশীল থাকতে পারে।