পাকিস্তানের মাটিতে তো বটেই, পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট ম্যাচ জিতে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে বাংলাদেশ দল। ১৪ টেস্টের মোকাবেলায় প্রথম পাকিস্তানকে হারাতে পারল টাইগাররা। রাওয়ালাপিন্ডিতে দুর্দান্ত খেলেছে বাংলাদেশ। পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট জয়ের সে ইতিহাসকে আরো সমৃদ্ধ করতে নতুন আরেকটি মিশনে নামছে বাংলাদেশ। আর সেটি প্রথমবারের মত পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ জেতা। প্রথম টেস্টে দুর্দান্ত জয়ের সুখ স্মৃতি নিয়ে দ্বিতীয় টেস্টে নামছে আজ টাইগাররা। দলের সবার মধ্যে সিরিজ জয়ের দারুণ তাড়না। রাওয়ালপিন্ডিতে ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ১১টায়। ম্যাচটি সরাসরি সম্প্রচার করবে টি–স্পোর্টস ও গাজী টিভি। এই রাওয়ালপিন্ডিতেই প্রথম টেস্টে ১০ উইকেটের বড় ব্যবধানে জিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজে ১–০ ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। ১৪তম মোকাবেলায় এসে পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথমবারের মত টেস্ট ম্যাচ জয়ের স্বাদ নেয় টাইগাররা। দ্বিতীয় টেস্টেও পারফরমেন্সের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে উদগ্রীব মুশফিক–সাকিবরা।
সিরিজের প্রথম টেস্টের আগে পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের রেকর্ড মোটেও ভালো ছিল না। আগের ১৩ মোকাবেলায় ১২টিতে হার ও একটিতে ড্র করেছিলো বাংলাদেশ। বেশিরভাগ ম্যাচই ইনিংস ব্যবধানে হেরেছিলো টাইগাররা। কিন্তু এই সিরিজের প্রথম টেস্টের পর সব ধারণাই যেন পাল্টে দিয়েছে বাংলাদেশ। ম্যাচের শুরু থেকেই আধিপত্য বিস্তার করে ঐতিহাসিক জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে টাইগাররা। যদিও ঐতিহাসিক এই সিরিজ জিততে বাংলাদেশ দলকে দ্বিতীয় টেস্টে না জিতলেও চলবে। এই ম্যাচটি ড্র করতে পারলেই ইতিহাস রচিত হবে টাইগারদের। যদিও এখনো টেস্ট ক্রিকেটে রেকর্ড মোটেও ভাল নয় বাংলাদেশের। গত ২৪ বছরে ১৪৩টি টেস্ট খেলে মাত্র ২০টিতে জয় এবং ১০৫টি হেরেছে টাইগাররা। ১০টি টেস্ট সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ। সর্বমোট ৬০টি দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলেছে বাংলাদেশ। এরমধ্যে ৩টিতে জয় এবং ৯টিতে ড্র এবং ৪৮টি সিরিজ হেরেছে তারা। পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রথম ম্যাচে জয় পাওয়া সিরিজের মধ্যে তিনটি টেস্ট সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ। একই সাথে প্রথম টেস্টে জয় পাওয়া সিরিজের মধ্যে ৭টি টেস্ট সিরিজ ড্রও করেছে তারা। শেষবার ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট জয়ের পর সিরিজ ড্র করেছিল বাংলাদেশ।
প্রথম টেস্টে দুর্দান্ত খেলেছে বাংলাদেশের ব্যাটার এবং বোলাররা। বিশেষ করে মুশফিকুর রহিম ছিলেন অনন্য। এছাড়া হাফ সেঞ্চুরি করেছেন আরো তিনজন। তারা হলেন লিটন দাশ, সাদমান ইসলাম, মোমনিুল হক এবং মেহেদী হাসান মিরাজ। বল হাতে আরো দুর্দান্ত ছিলেন শরীফুল ইসলাম, হাসান মাহমুদ, সাকিব আল হাসান এবং মেহেদী হাসান মিরাজ। তবে বল হাতে সবচাইতে সফল মিরাজ। তিনি নিয়েছেন ৫ উইকেট। সাকিব ৪টি এবং শরীফুল এবং হাসান মাহমুদ নিয়েছেন তিনটি করে উইকেট।
অতীত থেকে দেখা যায়, টেস্ট সিরিজ জয়ের প্রত্যাশার চাপ সামলাতে না পারলেই হার মানে বাংলাদেশ। কিন্তু অতীতের রেকর্ড মুছে ফেলতে চান টাইগার অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। তার বিশ্বাস অতীতের বন্ধ্যাত্ব ঘুচিয়ে এবার পুরো টেস্ট সিরিজে ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখবে বাংলাদেশ। পাকিস্তানের বিপক্ষে এই টেস্ট ছাড়াও এ বছর আরও ৬টি টেস্ট খেলবে বাংলাদেশ। তাই টেস্টে লড়াকু দল হয়ে উঠার জন্য বাংলাদেশের কাছে ধারাবাহিকতাই এখনই মহাগুরুত্বপূর্ণ।
এদিকে দ্বিতীয় টেস্টে বাংলাদেশ ইতিহাস গড়ার স্বপ্ন দেখলেও সিরিজ হার এড়াতে ঘুরে দাঁড়াতে বদ্ধপরিকর পাকিস্তান। প্রথম টেস্টে পেসারদের দিয়ে পুরো বোলিং আক্রমণ সাজানোর কৌশল পাকিস্তানের জন্য হিতে বিপরীত হয়েছিলো। প্রথম টেস্টের ঠিক আগ মুহূর্তে দল থেকে সরিয়ে দেওয়া পেসার আমের জামাল, ব্যাটার কামরান গুলাম ও লেগ–স্পিনার আবরার আহমেদকে ফিরিয়েছে পাকিস্তান। বরাবরই লেগ–স্পিনে দুর্বল হওয়ায় আবরারের অন্তর্ভুক্তি বাংলাদেশের জন্য বড় চিন্তার কারণ হবে। এখন পর্যন্ত ৬ ম্যাচে ৩৮ উইকেট নেওয়া আবরারকে কী পরিকল্পনায় সামলাবে, সেটির উপরই নির্ভর করছে টাইগারদের সাফল্য। কিন্তু রাওয়ালপিন্ডিতে প্রথম টেস্টে উইকেটের অবস্থা বুঝে নিজেদের শক্তিকে যেভাবে কাজে লাগিয়েছিল বাংলাদেশ শেষ টেস্টের উইকেটে পরিবর্তন আসতে পারে। পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম বলছে সুবজ উইকেটে খেলা হতে পারে যা পাকিস্তানের জন্য বড় শক্তি। গত দু’দিনের টানা বৃষ্টিতে অনুশীলন সেশন ভেস্তে গিয়েছে দু’দলের। তারপরও মাঠে নিজেদের সেরাটা দিতে প্রস্তুত বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান দল। কারণ বাংলাদেশের লক্ষ্য যেখানে ইতিহাস গড়ার সেখানে পাকিস্তানের লক্ষ্য মান বাঁচানোর।
