‘আমি ইউনিয়ন ছাত্রদলের প্রেসিডেন্ট’ বলা সেই নেতা গ্রেপ্তার

হারালেন দলীয় পদও

| বৃহস্পতিবার , ১৩ মার্চ, ২০২৫ at ৫:৫৬ পূর্বাহ্ণ

চাঁদপুরে পুলিশের সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করা ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি শাওন কাবীকে (২৪) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পরে তাকে আদালতে পাঠানো হলে বিচারক কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এ ছাড়া তাকে প্রাথমিক সদস্য পদসহ সাংগঠনিক পদ থেকে বহিষ্কার করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল। গ্রেপ্তার শাওন কাবী ১৬ নম্বর রূপসা দক্ষিণ ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি এবং উপজেলার চরমঘুয়া ব্যাপারী বাড়ির মোস্তাফিজুর রহমানের ছেলে। গতকাল বুধবার বিকেলে ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশের ওসি শাহ আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

পুলিশ জানায়, একজন কনটেন্ট ক্রিয়েটরকে হয়রানি ও মারধর করেন ছাত্রদল নেতা শাওন কাবী। ওই ঘটনায় অভিযোগ পাওয়ার পর উপজেলার গৃদকালিন্দিয়া এলাকায় তাকে আটক করতে গিয়ে বাধার মুখে পড়ে পুলিশ। এ সময় এলাকার একটি দোকানের সামনে থেকে তাকে পুলিশ থানায় নিয়ে যেতে চাইলে বাধা দেওয়া হয়। অশোভন আচরণসহ পুলিশের ফোন কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন শাওন। এ সময় আটক করতে যাওয়া পুলিশের একজন উপপরিদর্শককে (এসআই) ওই ছাত্রদল নেতা বলেন, ‘আমি ইউনিয়ন ছাত্রদলের প্রেসিডেন্ট। আমাকে থানায় নিতে হলে ওসিকে আসতে বলেন। না হয়, আমি যাব না।’

ফরিদগঞ্জ থানা সূত্রে জানা গেছে, গত ১১ মার্চ ভিডিও ম্যান/ড্রোন ম্যান নুর আলম (২৬) প্রাইভেট কার নিয়ে লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর হতে চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জের রুস্তমপুর এলাকার উদ্দেশ্যে রওনা করেন। সন্ধ্যায় প্রাইভেট কারটি চালিয়ে চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জের জোরকবর নামক স্থানে রায়পুরচাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের ওপর পৌঁছালে প্রাইভেট কারের সামনে থাকা একটি কাভার্ড ভ্যান হঠাৎ ব্রেক করলে প্রাইভেট কারটি গতি কমিয়ে ডান পাশ দিয়ে চলে আসে। এ সময় গাড়ি দুটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। পরে প্রাইভেট কারের চালক গাড়ি চালিয়ে গৃদকালিন্দিয়া বাজারে চলে আসেন। হঠাৎ করে এক মোটরসাইকেল আরোহী গৃদকালিন্দিয়া বাজারে এসে প্রাইভেট কারটির গতিরোধ করেন। গৃদকালিন্দিয়া বাজারের স্কয়ার হসপিটালের সামনে মহাসড়কের ওপর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় প্রাইভেট কারের চালক ও তার বন্ধুদের নামিয়ে কথা কাটাকাটি ও কিলঘুষি দেন। মোটরসাইকেল আরোহী আনিসুর রহমান তখন ১৬ নম্বর রূপসা দক্ষিণ ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি শাওন কাবীকে ফোন দিলে তিনি চার থেকে পাঁচজন লোক নিয়ে এসে প্রাইভেট কারের চালক ও তার বন্ধুদের এলোপাতাড়ি কিলঘুষি মেরে জখম করেন। এ সময় তাদের কাছ থাকা নগদ ১১ হাজার টাকা নিয়ে যান এবং প্রাইভেট কারের চালক ও তার বন্ধুদের প্রাণনাশের হুমকিধামকি দিয়ে ঘটনাস্থল থেকে চলে যান। এ ঘটনায় ভিডিও ম্যান/ড্রোন ম্যান নুর আলম ফরিদগঞ্জ থানায় শাওন কাবীসহ ৫৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। তারই পরিপ্রেক্ষিতে প্রাথমিক তদন্তের জন্য এসআই খোকন চন্দ্র দাশসহ পুলিশের একটি টিম মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টায় গৃদকালিন্দিয়া বাজারে গেলে শাওন কাবীসহ তার সহযোগীরা পুলিশকে ঘিরে রাখেন এবং পুলিশের সরকারি কর্তব্য কাজে বাধাদানসহ অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করেন। পুলিশ তাদের শান্ত করার চেষ্টা করলেও তারা অশোভন আচরণ অব্যাহত রাখেন। একপর্যায়ে থানা পুলিশের সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণসহ বাগযুদ্ধে লিপ্ত হয় এবং পুলিশকে বিভিন্ন ধরনের হুমকিধমকি প্রদান করেন। পরবর্তীতে বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। এ ঘটনায় তাকে রাতেই গ্রেপ্তার করা হয়।

এদিকে ওই ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি নজরে আসে চাঁদপুর জেলা ছাত্রদল ও কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের। গতকাল কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমের সই করা একটি পত্রে শাওন কাবীকে ১৬ নম্বর রূপসা (দক্ষিণ) ইউনিয়ন ছাত্রদল সভাপতির পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএমবিবিএস-বিডিএস ডিগ্রি ছাড়া কেউ নামের আগে ডাক্তার লিখতে পারবে না : হাই কোর্ট
পরবর্তী নিবন্ধমডার্ন স্টিল মিলস কোম্পানির বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে দুদক